১৯৭১ থেকে ২০২৪: শুরু হলো বিজয়ের মাস
- আপডেট সময় : ০১:০৬:২৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৪
- / ৩৮৪ বার পড়া হয়েছে
শুরু হলো বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকেই ধীরে ধীরে স্পষ্ট হতে থাকে বিজয়ের সমীকরণ। ১৯৭১ সালের আজকের দিনে মুক্তিযোদ্ধারা সিলেটের বেশকিছু এলাকা মুক্তাঞ্চল ঘোষণা করেন। সাল ১৯৩০, বিপ্লবী পথ বেছে নিয়েছিল এ দেশের তরুণ সূর্য সেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। এরপর ১৯৪৭ এ বিজয়।
তবে পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তান একটি দেশ হওয়ার পরও দুটি অঞ্চলের মধ্যে সাংস্কৃতিক, ভাষাগত ও অর্থনৈতিক বৈষম্য ছিল প্রকট। তাই ১৯৭১ এর তরুণ শেখ মুজিব, সামরিক বাহিনীতে কর্মরত জিয়াউর রহমান, তাজউদ্দিন আহমেদসহ আরও অজস্র তরুণ দিশা দিয়েছিলেন বিপ্লবের পথের।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসান মাসুদ বলেন, ‘বন্দুক নিয়ে আসছি ডেমরা থেকে চকে। রিকশায় চলতে হয়েছে। রিকশা থেকে হেঁটে আসতে হয়েছে। প্রত্যেকটা লোক আমাদের সার্পোট করছে বলে আমরা করতে পারছি।’
২০২৪ এর আন্দোলনকারীদের একজন বলেন, ‘আপামর জনতা আমাদের পাশে ছিল। আমরা যে রাস্তায় গুলি খাচ্ছিলাম, খাবার না খেয়ে ছিলাম তারা বাসা থেকে এনে দিচ্ছিল।’
২০২৪ এ একই গল্প, ভিন্নতা সময়ে, তারুণ্যে। বাংলাদেশের সবচেয়ে কর্তৃত্ববাদীর বিরুদ্ধে যে বিপ্লব তাও ঘটেছে বৈষম্যের বিরুদ্ধে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. লাতিফা শামসুদ্দিন বলেন, ‘ওরা সবসময় চারদিকে থাকতো। যখনই সুযোগ পেত আর্মিরা পিটানি দিতো। এইরকম একটা ছেলেকে ওরা মারছে। এত সুন্দর একটা ছেলে। আমাদের বেড থেকে ওর পা বের হয়ে গিয়েছে কিন্তু পায়ের হাড়গুলো ভাঙা ওর।’
২০২৪ এর আন্দোলনকারীদের একজন বলেন, ‘যখন গুলি লাগে আমার তখন আমরা সাথের ভাইরা আমাকে মেডিকেলে নিয়ে আসে। কিন্তু আমি তো তাদের চিনি না। তখন তো যুদ্ধ ক্ষেত্রে ছিলাম।’
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুর্শিদ বলেন, ‘আমি ৭১ দেখেছি খুব কাছ থেকে কিশোরী হিসেবে। সেটারও অংশীদার ছিলাম আমরা। ২০২৪ আমি যখন দেখি। তখন আমি দেখি ৭১ এর মুক্তিযোদ্ধাদের পুনঃজন্ম।’
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অপারেশন সার্চলাইটের গণহত্যা নাড়া দিয়েছিল বিশ্ব বিবেককে। এরপর থেকেই তরুণরা যুক্ত হয় মুক্তিযুদ্ধে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসান মাসুদ বলেন, ‘২৫শে মার্চের পরে আমাদের কিছু একটা করতে হবে কিন্তু কি করতে হবে সেটা আমরা নিজেরাও জানি না। যদি মরেই যাবো কিছু নিয়েই মরি।’
১৯৭১ এর আজকের দিনে সিলেটের কয়েকটি অঞ্চল দখল নেয় মুক্তিযোদ্ধারা। অন্যদিকে ঢাকায় চলে পাক বাহিনীর নৃশংসতা। এ দিন নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে উঠে আসে, বুড়িগঙ্গার ওপাড়ে পাক হানাদার বাহিনীর অন্তত ৮৭ জনকে হত্যা করার সংবাদ। আন্তর্জাতিক চাপেও থামেনি পাকিস্তানের গণহত্যা।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. লাতিফা শামসুদ্দিন বলেন, জিপ দেখে তো আমি ভয়ে উঠে গেলাম। বাচ্চা মেয়ে বয়স হয়ত ৬ থেকে ৮ বছর হবে। জিপ থেকে নামিয়ে ওকে ওটিরে দিকে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ও আর দাদি থাকতো ঘরে। পাক বাহিনী ওর দাদিকে গুলি করে মেরে এই মেয়েকে অত্যাচার করে এখানে নিয়ে আসছে।’
৩ ডিসেম্বর ভারত সরকারের সহযোগিতায় মুক্তিযুদ্ধের গতি আরও ত্বরান্বিত হয়।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসান মাসুদ বলেন, ‘পাকিস্তান সরকারে প্রচুর প্রোপাগান্ডা চলছে যে বাংলাদেশে নিজস্ব বিষয়। ভারত নাক গলাচ্ছে। পাকিস্তান চাচ্ছিল স্কুল কলেজ যেন খোলা থাকে। এটা হচ্ছে তাদের হট বেড অফ অপারেশন।’
মার্চ থেকে ডিসেম্বর যত দিন গেছে ততই মুক্তিবাহিনীর কাছে কোণঠাসা হয়েছে হানাদার বাহিনী। গেরিলা হামলা, ও সম্মুখ যুদ্ধে পিছু হটে পাকিস্তানিরা। আর মুক্তি বাহিনী একের পর এক মুক্তাঞ্চল ঘোষণা করতে থাকে।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় আসে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে বিশ্বের মানচিত্রে নতুন একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। নাম ‘বাংলাদেশ’।