চুক্তির ২৭ বছর পেরোলেও পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি ফেরেনি
- আপডেট সময় : ১১:০৪:১৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২ ডিসেম্বর ২০২৪
- / ৩৭৯ বার পড়া হয়েছে
পার্বত্য অঞ্চলে শান্তির খোঁজে ২৭ বছর আগে করা হয় শান্তি চুক্তি । চুক্তির হাত ধরে পিছিয়ে পড়া পার্বত্য অঞ্চলে বেশকিছু উন্নয়ন হয়েছে, অর্থনৈতিকভাবেও এসেছে সমৃদ্ধি। তবে অবৈধ অস্ত্রের দাপট, চাঁদাবাজি ও সংঘাতে ফেরেনি শান্তি। তবে, এজন্য চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন না হওয়াকেই দুষছেন পাহাড়ের বাসিন্দারা। চুক্তির পক্ষে ও বিপক্ষে রয়েছে নানান বিতর্ক।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পার্বত্য অঞ্চল। কিন্তু সৌন্দর্যের আড়ালে সবসময় বিরাজ করে আতঙ্ক। আঞ্চলিক গোষ্ঠীগুলোর মাঝে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা দ্বন্দ্ব, সংঘর্ষ ও রক্তপাতে সৃষ্ট অস্থিরতায় কার্যত অচল হয়ে পড়ে পুরো পার্বত্য এলাকা।
উত্তাল পাহাড়ি জনপদে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর জনসংহতি সমিতি জেএসএস এর সাথে শান্তি চুক্তি করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। এরপর চুক্তির হাত ধরে পিছিয়ে পড়া পার্বত্য অঞ্চলে নেয়া হয় বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প। বিশেষ করে শিক্ষা, যোগাযোগ, স্বাস্থ্যসেবা আর পর্যটনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে হয়েছে ব্যাপক পরিবর্তন। অর্থনৈতিক ভাবেও এসেছে সমৃদ্ধি।
কিন্তু, দেশ-বিদেশে বহুল আলোচিত এই শান্তিচুক্তির ২৭ বছর অতিবাহিত হলেও এখনও কাঙ্ক্ষিত শান্তি ফেরেনি পাহাড়ে। ৬টি আঞ্চলিক দলের রাজনৈতিক বিভক্তি, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার, অপহরণ ও গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্বের কারণে অস্থিরতা কমেনি পাহাড়ে। তবে, এজন্য চুক্তির সব শর্ত বাস্তবায়ন না হওয়াকে দুষছেন সেখানকার বাসিন্দারা। তাই শান্তি ফেরাতে রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি।
দীর্ঘদিন ধরে পার্বত্য চুক্তিতে সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক ও বৈষম্যমূলক ধারাগুলো সংশোধনের দাবি জানিয়ে আসছে পাহাড়ের স্থানীয় সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মজিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল সম্প্রদায়ের মানুষের সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। ধারাগুলো বাতিল করতে চাই। মূল বিষয় হচ্ছে চুক্তি বাতিল করতে হবে।’
চুক্তির বাস্তবায়ন নিয়ে ২০২৩ পর্যন্ত গেল সরকারের তরফে ৭২টি ধারার মধ্যে ৬৯টি বাস্তবায়িত হয়েছে বলা হলেও জনসংহতি সমিতি বলছে ভিন্ন কথা। সংগঠনটির দাবি সাধারণ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা, পুলিশ, ভূমি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা, বন এবং প্রত্যাগত জেএসএস সদস্যসহ অভ্যন্তরীণ ও উদ্বাস্তু পুনর্বাসনে উদ্যোগ নেয়নি সরকার।
আবার পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচন ও ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনও রয়েছে বন্ধ।
ফলে সরকার মনোনীত ব্যক্তিদের দিয়ে সচল রাখায় এসব প্রতিষ্ঠান জন আকাঙ্ক্ষাও পূরণ করতে পারছে না। এমন বাস্তবতায় চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নে নতুন করে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আন্তরিকতার ওপর ভরসা রাখতে চাইছেন পাহাড়ের মানুষ।
আইনজীবী ও নারী নেত্রী অ্যাডভোকেট সুষ্মিতা চাকমা বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে অব্শ্যই পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের অনেক প্রত্যাশা ছিল। আমরা মনে করেছিলাম অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে আসার পর চুক্তির বিষয়ে দেখবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে সরকারের কাছ থেকে ইতিবাচক কোনো বক্তব্য পাইনি।’
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, পার্বত্য অঞ্চল শাখার সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা বলেন, ‘চুক্তি বাস্তবায়ন হবে না কি হবে না সে সংক্রান্ত কোনো কার্যক্রমই আমরা দেখছি না। আমরা এখন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি। এবং আমরা আশার আলো নিয়ে অগ্রসর হচ্ছি, আমরা আশা ছাড়ি নাই।’
এদিকে, পাহাড়ের সন্ত্রাসীরা যেন মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক পুলিশ।
বান্দরবানের পুলিশ সুপার শহিদুল্লাহ কাওছার বলেন, ‘অপকর্মগুলো যেন মাথাচাড়া দিয়ে না উঠতে পারে সেজন্য আমরা আছি, সেনাবাহিনী আছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা সবাই মিলে কাজ করছি।’
পিছিয়ে থাকা পার্বত্য অঞ্চলকে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের সাথে এগিয়ে নিতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার দাবি পাহাড়ের মানুষের। যা এই অঞ্চলের সুষম উন্নয়ন, পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও ব্যবসা বাণিজ্যের সম্প্রসারণসহ স্থানীয় ও জাতীয় অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে।