ডলার সংকটসহ বিভিন্ন কারণে কমেছে নিত্যপণ্যের আমদানি
- আপডেট সময় : ১১:১৯:২০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪
- / ৩৭৮ বার পড়া হয়েছে
রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার পাশাপাশি এলসি জটিলতা, ডলার সংকট ও ডলারের উচ্চমূল্যের কারণে কমেছে নিত্যপণ্যের আমদানি। আমদানিকারকদের দাবি, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ঋণমানের অবনতিতে আমদানির জন্য ঋণপত্র খুলতে বিদেশি ব্যাংকগুলো আগের মতো সাড়া দিচ্ছে না। এতে বেড়েছে আমদানি ব্যয়। সেই সঙ্গে অনেক ব্যাংকেই ডলার নেই। এ অবস্থায় লোকসান এড়াতে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে আমদানি করছেন ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে চিনি ভোজ্য তেলসহ রোজায় ইফতারের অন্যতম অনুষঙ্গ খেজুর আমদানি কমেছে। তবে সরকার সম্প্রতি এসব পণ্যে শুল্ক কমানোয় এলসি খোলা বাড়ায় রোজার আগে আমদানি বাড়বে প্রত্যাশা ব্যবসায়ীদের।
রোজায় চিনি, ভোজ্য তেল, পেয়াঁজ, খেজুর ও ডাল জাতীয় পণ্যের বাড়তি চাহিদা থাকে। সিয়াম সাধনার মাসে এসব পণ্যের সরবরাহ ও দাম ক্রেতাদের নাগালে রাখতে প্রতিবছরই শুল্ক কমানোর দাবি করেন ব্যবসায়ী। এবারো তার ব্যত্যয় হয়নি।
রোজায় ক্রেতাদের স্বস্তি দিতে এ বছর বেশ আগেই চিনি, ভোজ্য তেল, খেজুর, পেয়াঁজ, আলু, চাল ও ডিম আমদানিতে শুল্ক কর কমিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সেই সঙ্গে সম্প্রতি ১১টি পণ্য আমদানিতে নগদ মার্জিনের হার ন্যূনতম পর্যায়ে রাখার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুল্ক কর ছাড়সহ সরকার নানা সুবিধা দিলেও এর সুফল নেয়া যাচ্ছে না। তাদের অভিযোগ, ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় ঋণপত্র খুলতে সমস্যা হচ্ছে। বেসরকারি ব্যাংক ডলারের বিনিময়মূল্য বেশি নেয়ার পাশাপাশি ব্যাংক কর্মকর্তাদের অসহযোগিতা ও অনৈতিক লেনদেনের অভিযোগও রয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের হিসেবে চলতি বছরের জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে চিনি আমদানি একেবারে কমে গেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির বুকিং রেইট কমলেও আমদানি বাড়েনি। ২০২৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ৬ মাসে ৭৪ হাজার টন পরিশোধিত চিনি আমদানি হলেও চলতি বছরের একই সময়ে হয়েছে মাত্র সাড়ে ৮ হাজার টন।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গেল বছরের জুলাই-অক্টোবরের চেয়ে এ বছরের একই সময়ে ৩ লাখ ৬৭ হাজার টন অপরিশোধিত চিনি আমদানি কম হয়েছে।
এদিকে, সরকার শুল্ক কমালেও গত তিন মাস ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে পাম ও সয়াবিন তেলের বুকিং রেট বাড়ায় কমেছে ভোজ্য তেল আমদানি। জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময় গেল অর্থ বছরে ৮ লাখ ৩২ হাজার টন পাম ও সয়াবিন তেল আমদানি হলেও চলতি বছরের একই সময়ে হয়েছে প্রায় ৭ লাখ ৮২ হাজার টন।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের উপকমিশনার কাউছার পাটোয়ারি বলেন, ‘ডলার ক্রাইসিস যদি থেকে থাকে পর্যাপ্ত এলসি যদি না হয় তাহলে সে ব্ষিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বলতে পারবে কী পরিমাণ এলসি পেন্ডিং আছে।’
ব্যবসায়ীরা বলছেন, চোরাইপথে ভারতীয় চিনি আসায় লোকসানের ঝুঁকি নিচ্ছেন না আমদানিকারকরা। এদিকে চট্টগ্রামের চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণকারী ব্যাংক কেলেঙ্কারির জন্য আলোচিত শিল্প গ্রুপ এস আলম বর্তমানে চিনি আমদানি করছে না। বন্ধ রয়েছে আরো দুটি শিল্প গ্রুপের চিনির মিল। ফলে বাজারে চিনির দাম যেভাবে কমার কথা সেভাবে কমেনি। আমদানি কম হওয়ায় সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে ভোজ্য তেলেরও। ফলে দামও চড়া।
আশার খবর, আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিং রেট কমতে শুরু করায় ভোজ্য তেলের আমদানি বাড়ছে। কমেছে ইফতারের অন্যতম প্রধান আইটেম খেজুর আমদানি। আমদানিকারকরা বলছেন, উচ্চ শুল্কের কারণে গেল বছরে ব্যাপক লোকসান দিয়েছেন।
এ বছর সরকার রমজানের চার মাস আগেই শুল্ক কর কমানোয় খুশি তারা। ইতোমধ্যে খেজুর আমদানির জন্য পর্যাপ্ত এলসি খোলা হয়েছে। তবে গ্রামীণ জনপদে ইরাকের জাহেদী খেজুরের চাহিদা বেশি থাকলেও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আমদানি মূল্যের চেয়ে তিনগুণ বেশিতে এই খেজুরের শুল্কায়ন করায় দাম বেশি পড়ে। এক্ষেত্রে শুল্কায়ন মূল্য ১ হাজার ডলারে কমিয়ে আনার দাবি তাদের।
বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ কামাল বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা লস করার কারণে এ বছর প্রথমে এলসি করতে কেউ আগ্রহ প্রকাশ করে নি। তো এ বছর সরকার প্রথম থেকে ডিউটি কমিয়ে দিয়েছে। এ কারণে ব্যবসায়ীরা উৎসাহিত হয়েছে। ব্যবসায়ীরা পর্যাপ্ত খেজুর আমদানি করছে।’
স্বস্তি রয়েছে ডালের বাজারে। গেল ৬ মাসে বেড়েছে ছোলা ও সব ধরনের ডাল আমদানি। গত বছরে ৯৫ হাজার টন ডাল আমদানি হলেও এ বছর জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত দ্বিগুণের বেশি ১ লাখ ৯৪ হাজার টন ডাল আমদানি হয়েছে। পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় রোজায় ছোলা ও ডালের দাম বাড়ার শঙ্কা নেই বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।