ঢাকা ০১:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

হাইকমিশনে হামলা, কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত: বিশ্লেষকরা

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১১:২৫:২৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / ৭৪৬ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় ভারত শুধু দুঃখ প্রকাশ করে দায় সেরেছে। কিন্তু, এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে কিছুই জানায়নি দেশটি। এটাকে চরম হতাশাজনক ও কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এর মাধ্যমেই প্রমাণ হয়- হামলার ঘটনায় ভারত সরকারেরও ইন্ধন থাকতে পারে।

জুলাই বিপ্লবের পেছনে যে দীর্ঘ শোষণ নিপীড়নের ইতিহাস, তার মধ্যে অন্যতম অনুষঙ্গ ছিল, দিল্লির দাসত্ব থেকে ঢাকাকে মুক্ত করা। কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দিল্লির সাথে ঢাকার সম্পর্কেও কিছুটা ফাটল ধরেছে।

এতো বড় একটা গণঅভ্যুত্থান হয়ে গেলে। দেশের অনেক জায়গায় ঘটেছিল বিপ্লব পরবর্তী বিশৃঙ্খল পরিবেশও। কিন্তু, বাংলাদেশে থাকা কোনো বিদেশি দূতাবাস কিংবা মিশনে চুল পরিমাণ আঁচড়ও লাগতে দেয়নি বিপ্লবী ছাত্র জনতা। সেখানে ভারতে পরপর দুইবার বাংলাদেশ হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় হতবাক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক রুহুল আমিন বলেন, ‘আমাদের এত বড় বিপ্লব হলো। আমাদের হাজার হাজার সন্তানরা নিহত হলো। কিন্তু তখনও আমাদের এম্বেসিগুলো নিরাপদ ছিল। আমাদের জাতীয় পতাকা তারা পুড়েছে, ছিড়েছে এবং যে ফ্ল্যাগ পোস্ট সেটাও ভেঙে চুরমার করেছে। মোর ইমপরট্যান্ট তারা আমাদের অ্যাম্বাসেডরের রুমে ঢুকেছে। আরো ডিপ্লোম্যাটিক বা নন-ডিপ্লোম্যাটিক পার্সন ছিল তাদের ওপর আক্রমণ করেছে। এবং এটা সুদূরপ্রসারী এবং সুপরিকল্পিত। এটাকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখার কোনো সুযোগ নাই।’

আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে যে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে,, তা যথাযথ নয় বলে মনে করেন অধ্যাপক রুহুল আমিন। তিনি বলছেন, ভারতের পক্ষ থেকে বিচারের কোনো আশ্বাসই দেয়া হয়নি, এটিই বরং হতাশাজনক।

তিনি বলেন, ‘এম্বেসির ওপর এত বড় আঘাত এটা ন্যাক্কারজনক আঘাত। আমি মনে করি এটা শুধু হিন্দু সংঘর্ষ সমিতির আঘাত না। এখানে ভারত সরকারের পরোক্ষ ইন্ধন থাকতে পারে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে ঘটনাটা দুঃখজনক। কিন্তু ঘটনাটি কি শুধু দুঃখজনক? তারা কিন্তু একবারো বলেনি ঘটনা বিচার করতে হবে। কাজেই তারা যদি মনে করতে এর সঙ্গে সরকারের কোনো সম্পৃক্ততা নাই তাহলে কড়া প্রতিবাদ দিত।’

সাম্প্রতিককালে ভারতের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারত যেভাবে নাক গলিয়ে আসছিল, সেখানে দেশটিকে কড়া ভাষায় কূটনৈতিক বার্তা দেয়ার পরও এসব হামলা একেবারে অপ্রত্যাশিত।

শফিকুল আলম, ‘কূটনৈতিকভাবে আপনারা দেখেছেন যে আমরা বেশ কিছু ঘটনার কনডেম করেছি। যে সমস্ত ঘটনাগুলো ঘটেছে সেগুলোর আমরা যথেষ্ট কঠোর ভাষায় কনডেম করেছি। কিন্তু তারপরও দেখেন আগরতলায় সম্ভবত একটা ঘটনা ঘটেছে।’

অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বলছেন, ভারতের সাথে বাংলাদেশের যে সম্পর্ক, গত দেড়যুগে তা শেখ হাসিনা কিংবা আওয়ামী লীগ নির্ভর হয়ে পড়েছে। ফলে হাসিনার পরাজয় কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি ভারত।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘গত দীর্ঘ দেড় যুগেরও বেশি সময় ভারত এই শেখ হাসিনাকে দানব একটা স্বৈরশাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য তাকে টেকনিক্যাল, ফাইন্যান্সিয়াল, ডিপ্লোম্যাটিক সাপোর্টসহ সব কিছুই দিয়ে আসছে। এবং ভারতের সাথে বাংলাদেশের যে সম্পর্ক তার পুরোটাই কিন্তু হাসিনাভিত্তিক হয়ে গিয়েছিল। ৪৭ ও ৭১ পরবর্তী সময়ে ভারতের সবচেয়ে বড় পরাজয় হচ্ছে এখানে যখন হাসিনার পতন হয়েছে তারা সেটাকে মেনে নিতে পারেনি। অর্থাৎ তারা সবসময় বাংলাদেশকে হাসিনার দৃষ্টিতে দেখতে চেয়েছে, আওয়ামী লীগের দৃষ্টিতে দেখতে চেয়েছে।’

হাসনাত আব্দুল্লাহ আরো বলেন, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ, সেটিকে মাথায় রেখেই ভারতকে সম্পর্কের বিবেচনা করতে হবে।

তিনি বলেন, ‘দিল্লী থেকে বাংলাদেশের শাসনক্ষমতা নির্ধারিত হবে না। বাংলাদেশের জনগণ নির্ধারণ করবে যে শাসনক্ষমতায় কে আসবে। এটা কলোনিয়াল স্টেজ না যে আপনি মানসিকভাবে দেশটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে যাবেন। যদি এটাকে আপনারা নিজেদের কলোনিয়াল একটা অংশ মনে করে থাকেন, দেশটাকে আপনারা যদি সেভেন সিস্টার্সের পাশাপাশি এইট সিস্টার্স ভাববেন তাহলে আপনারা ভুল ভাবছেন।’

তারা বলছেন, কলকাতার পর আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় ভিয়েনা কনভেশস চুক্তি লঙ্ঘিত হয়েছে। যার সমাধান হতে হবে আন্তর্জাতিকভাবেই।

নিউজটি শেয়ার করুন

হাইকমিশনে হামলা, কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত: বিশ্লেষকরা

আপডেট সময় : ১১:২৫:২৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪

আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় ভারত শুধু দুঃখ প্রকাশ করে দায় সেরেছে। কিন্তু, এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে কিছুই জানায়নি দেশটি। এটাকে চরম হতাশাজনক ও কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এর মাধ্যমেই প্রমাণ হয়- হামলার ঘটনায় ভারত সরকারেরও ইন্ধন থাকতে পারে।

জুলাই বিপ্লবের পেছনে যে দীর্ঘ শোষণ নিপীড়নের ইতিহাস, তার মধ্যে অন্যতম অনুষঙ্গ ছিল, দিল্লির দাসত্ব থেকে ঢাকাকে মুক্ত করা। কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দিল্লির সাথে ঢাকার সম্পর্কেও কিছুটা ফাটল ধরেছে।

এতো বড় একটা গণঅভ্যুত্থান হয়ে গেলে। দেশের অনেক জায়গায় ঘটেছিল বিপ্লব পরবর্তী বিশৃঙ্খল পরিবেশও। কিন্তু, বাংলাদেশে থাকা কোনো বিদেশি দূতাবাস কিংবা মিশনে চুল পরিমাণ আঁচড়ও লাগতে দেয়নি বিপ্লবী ছাত্র জনতা। সেখানে ভারতে পরপর দুইবার বাংলাদেশ হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় হতবাক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক রুহুল আমিন বলেন, ‘আমাদের এত বড় বিপ্লব হলো। আমাদের হাজার হাজার সন্তানরা নিহত হলো। কিন্তু তখনও আমাদের এম্বেসিগুলো নিরাপদ ছিল। আমাদের জাতীয় পতাকা তারা পুড়েছে, ছিড়েছে এবং যে ফ্ল্যাগ পোস্ট সেটাও ভেঙে চুরমার করেছে। মোর ইমপরট্যান্ট তারা আমাদের অ্যাম্বাসেডরের রুমে ঢুকেছে। আরো ডিপ্লোম্যাটিক বা নন-ডিপ্লোম্যাটিক পার্সন ছিল তাদের ওপর আক্রমণ করেছে। এবং এটা সুদূরপ্রসারী এবং সুপরিকল্পিত। এটাকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখার কোনো সুযোগ নাই।’

আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে যে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে,, তা যথাযথ নয় বলে মনে করেন অধ্যাপক রুহুল আমিন। তিনি বলছেন, ভারতের পক্ষ থেকে বিচারের কোনো আশ্বাসই দেয়া হয়নি, এটিই বরং হতাশাজনক।

তিনি বলেন, ‘এম্বেসির ওপর এত বড় আঘাত এটা ন্যাক্কারজনক আঘাত। আমি মনে করি এটা শুধু হিন্দু সংঘর্ষ সমিতির আঘাত না। এখানে ভারত সরকারের পরোক্ষ ইন্ধন থাকতে পারে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে ঘটনাটা দুঃখজনক। কিন্তু ঘটনাটি কি শুধু দুঃখজনক? তারা কিন্তু একবারো বলেনি ঘটনা বিচার করতে হবে। কাজেই তারা যদি মনে করতে এর সঙ্গে সরকারের কোনো সম্পৃক্ততা নাই তাহলে কড়া প্রতিবাদ দিত।’

সাম্প্রতিককালে ভারতের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারত যেভাবে নাক গলিয়ে আসছিল, সেখানে দেশটিকে কড়া ভাষায় কূটনৈতিক বার্তা দেয়ার পরও এসব হামলা একেবারে অপ্রত্যাশিত।

শফিকুল আলম, ‘কূটনৈতিকভাবে আপনারা দেখেছেন যে আমরা বেশ কিছু ঘটনার কনডেম করেছি। যে সমস্ত ঘটনাগুলো ঘটেছে সেগুলোর আমরা যথেষ্ট কঠোর ভাষায় কনডেম করেছি। কিন্তু তারপরও দেখেন আগরতলায় সম্ভবত একটা ঘটনা ঘটেছে।’

অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বলছেন, ভারতের সাথে বাংলাদেশের যে সম্পর্ক, গত দেড়যুগে তা শেখ হাসিনা কিংবা আওয়ামী লীগ নির্ভর হয়ে পড়েছে। ফলে হাসিনার পরাজয় কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি ভারত।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘গত দীর্ঘ দেড় যুগেরও বেশি সময় ভারত এই শেখ হাসিনাকে দানব একটা স্বৈরশাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য তাকে টেকনিক্যাল, ফাইন্যান্সিয়াল, ডিপ্লোম্যাটিক সাপোর্টসহ সব কিছুই দিয়ে আসছে। এবং ভারতের সাথে বাংলাদেশের যে সম্পর্ক তার পুরোটাই কিন্তু হাসিনাভিত্তিক হয়ে গিয়েছিল। ৪৭ ও ৭১ পরবর্তী সময়ে ভারতের সবচেয়ে বড় পরাজয় হচ্ছে এখানে যখন হাসিনার পতন হয়েছে তারা সেটাকে মেনে নিতে পারেনি। অর্থাৎ তারা সবসময় বাংলাদেশকে হাসিনার দৃষ্টিতে দেখতে চেয়েছে, আওয়ামী লীগের দৃষ্টিতে দেখতে চেয়েছে।’

হাসনাত আব্দুল্লাহ আরো বলেন, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ, সেটিকে মাথায় রেখেই ভারতকে সম্পর্কের বিবেচনা করতে হবে।

তিনি বলেন, ‘দিল্লী থেকে বাংলাদেশের শাসনক্ষমতা নির্ধারিত হবে না। বাংলাদেশের জনগণ নির্ধারণ করবে যে শাসনক্ষমতায় কে আসবে। এটা কলোনিয়াল স্টেজ না যে আপনি মানসিকভাবে দেশটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে যাবেন। যদি এটাকে আপনারা নিজেদের কলোনিয়াল একটা অংশ মনে করে থাকেন, দেশটাকে আপনারা যদি সেভেন সিস্টার্সের পাশাপাশি এইট সিস্টার্স ভাববেন তাহলে আপনারা ভুল ভাবছেন।’

তারা বলছেন, কলকাতার পর আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় ভিয়েনা কনভেশস চুক্তি লঙ্ঘিত হয়েছে। যার সমাধান হতে হবে আন্তর্জাতিকভাবেই।