কুরস্কে মাটি আঁকড়ে থাকতে সেনা সদস্যদের নির্দেশ জেলেনস্কির
- আপডেট সময় : ০২:১০:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪
- / ৩৬৮ বার পড়া হয়েছে
রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলের আধিপত্য ধরে রাখতে লোকবল ও সামরিক সরঞ্জাম সংকটে আছে ইউক্রেনীয় সেনারা। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের আগ পর্যন্ত কুরস্কের মাটি আঁকড়ে ধরে থাকতে সেনা সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছে কিয়েভ। এদিকে, ন্যাটোর সদস্যপদ নিয়ে আবারও দুঃসংবাদ পেয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। যদিও আকাশ প্রতিরক্ষ ব্যবস্থা উন্নত করতে ন্যাটোর সাহায্য চেয়েছে কিয়েভ।
উত্তর-পূর্ব ইউক্রেনের খারকিভ, পূর্বাঞ্চলের দোনেৎস্ক, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলী জাপোরিজিয়া এবং দক্ষিণ ইউক্রেনের খেরসন- জেলেনস্কির সেনাদের একের পর এক আক্রমণ প্রতিহত করে রণক্ষেত্রে যখন পুতিন বাহিনীর জয়জয়কার, তখন যেকোনো মূল্যে ইউক্রেনীয় সেনাদের কুরস্কের মাটি আঁকড়ে ধরে রাখার নির্দেশ দিয়েছে কিয়েভ।
শুধু পূর্ব বা দক্ষিণ নয়, মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) ইউক্রেনের পশ্চিমে টার্নোপিল ও রিভনি অঞ্চলের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আঘাত হেনেছে মস্কো। ইউক্রেনীয় বিমান বাহিনী জানাচ্ছে, গেল সপ্তাহের পর মঙ্গলবারের এই হামলায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন শহরের অধিকাংশ বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। কখনও ড্রোন বা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, কখনও সামরিক অভিযান- লোকবল স্বল্পতা আর সরঞ্জামের অভাব নিয়ে মস্কোর সেনাদের রুখতে পারছে না কিয়েভ। অথচ, বারবার ইউক্রেনীয় সেনাদের বলা হচ্ছে, যেকোনো মূল্যে নিজেদের অবস্থান থেকে পিছু হটা যাবে না।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা একাধিকবার বলেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনায় বার্গেনিং চিপ বা সমঝোতার হাতিয়ার হতে পারে রুশ ভূখণ্ডের পশ্চিমে অবস্থিত শহর কুরস্ক। গেল আগস্টে, কুরস্ক অভিযানে কিয়েভ যে সাফল্য অর্জন করেছিল তার খেসারত দিতে হচ্ছে ডনবাস অঞ্চলে। কুরস্কে অভিযানে বিপুল সংখ্যক সেনা ও সামরিক সরঞ্জাম ব্যবহার করে ফেলায় ডনবাসে রুশ সেনাদের উপযুক্ত জবাব দিতে পারেনি ইউক্রেনের সেনাবাহিনী।
কুরস্ক অভিযানের সাথে সম্পৃক্ত ইউক্রেনীয় উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বরাতে বিবিসি জানাচ্ছে, মস্কোর সাথে সমঝোতায় বসতে হলে আগামী বসন্ত পর্যন্ত কুরস্কের মাটি আঁকড়ে থাকতে হবে কিয়েভ সেনাদের। তাদের বক্তব্য, যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত বন্ধের যে শান্তি আলোচনা প্রস্তাব করছেন, সেখানে জেলেনেস্কির সেনারা রুশ ভূখণ্ডে কতখানি আধিপত্য ধরে রাখতে পেরেছে তার ওপর নির্ভর করবে যুদ্ধের ভবিষ্যৎ।
সামাজিক মাধ্যম টেলিগ্রামে যোগাযোগের পর কুরস্কের ফ্রন্টলাইনার কয়েকজন সেনাসদস্যের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি। সম্মুখ সারির এই যোদ্ধারা বলছেন, যুদ্ধের পরিণতি নিয়ে তারা সন্দিহান। শপথ গ্রহণের পর ট্রাম্প প্রশাসন কিয়েভে সামরিক সহায়তা প্যাকেজের বরাদ্দ বাড়াবেন এমন আশ্বাস দেয়া হলেও আশ্বস্ত হতে পারছেন না তারা। বিশেষ করে রুশ সেনাদের ছোড়া তিন হাজার কেজি ওজনের গ্লাইড বোমার উচ্চশব্দ আর বৈরি আবহাওয়ার কারণে নির্ঘুম রাত কাটছে তাদের। ঘুম না হওয়ায় শত্রুপক্ষের আক্রমণের সামনে দুর্বল হয়ে পড়ছে কুরস্কে অবস্থানরত ইউক্রেনীয় সেনারা।
পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর ওপর ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট যে আস্থা রেখেছিলেন, সেখানেও সৃষ্টি হয়েছে সংশয়। দুই দিনের বৈঠকে অংশ নিতে মঙ্গলবার বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে পৌঁছেছেন ন্যাটো জোটভুক্ত দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। কূটনৈতিক মহলের দাবি, ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্যপদ দেয়ার বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি জোট।
যদিও ইউক্রেনকে সামরিক সুরক্ষা দেয়ার দাবি জানিয়েছে জার্মান পররাষ্ট্র দপ্তর। কিয়েভে সামরিক সহায়তা বাড়াতে জোটের সদস্যদের আহ্বান খোদ ন্যাটো প্রধান মার্ক রুটের। আর ন্যাটোকে তার দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব অ্যান্টোনি ব্লিংকেন বলেছেন, আগামী বছর ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতে যে নতুন পটপরিবর্তন আসতে যাচ্ছে, তার জন্য জোটের নেতাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। আর আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা উন্নত করতে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর কাছে বাড়তি সহযোগিতা চেয়েছে ইউক্রেন।