ঢাকা ১২:০৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

কোন পরিকল্পনায় এসেছে বাংলাদেশের এমন জয়, জানালেন মিরাজ

স্পোর্টস ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০১:৪৪:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / ৩৭৩ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

চোটের কারণে নিয়মিত অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত না থাকায় অধিনায়কের আর্ম ব্যান্ডটা পেয়েছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। বড় দায়িত্বের সঙ্গে চ্যালেঞ্জটাও কঠিন ছিল ডানহাতি এ অলরাউন্ডারের জন্য। ওয়েস্ট ইন্ডিজে সর্বশেষ ৩ সফর অন্তত সে কথাই মনে করিয়ে দেয়।

২০০৯ সালের পর থেকে তিনবার উইন্ডিজ সফরে গিয়ে ৬ টেস্টেই হেরেছে বাংলাদেশ। সেই ফলের ধারাবাহিকতা বজায় ছিল সদ্য শেষ হওয়া টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচেও। অ্যান্টিগাতে ২০১ রানের বড় হারে সিরিজে ১-০ তে পিছিয়ে পড়েছিল বাংলাদেশ। অধিনায়ক মিরাজের ওপর চাপটায় বেড়ে যায় কয়েকগুণ। অনেকটা খাঁদের কিনারে থেকে দ্বিতীয় টেস্টে প্রবল বিক্রমে ঘুরে দাঁড়ায় সফরকারীরা। ১৫ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে তুলে নেয় ১০১ রানের দাপুটে জয়।

নেতৃত্বের ভার পেয়ে দ্বিতীয় টেস্টেই এমন জয়, স্বাভাবিকভাবে আনন্দের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কথা মিরাজের। ম্যাচ শেষে এ অলরাউন্ডারের কথাতেও উঠে এল সেটা। ম্যাচ শেষে অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে মিরাজ জানিয়েছেন, এটা অনেক বড় অর্জন তার জন্য। উইন্ডিজকে হারানোর কৌশলটা সম্পর্কেও কথা বলেছেন তিনি।

মিরাজের ভাষায়, ‘আলহামদুলিল্লাহ, খুবই ভালো লাগছে। প্রথম ম্যাচে হারার পর দ্বিতীয় ম্যাচ জিততে পেরেছি, এটা অবশ্যই আমার জন্য বড় একটা অর্জন। যেহেতু আমি প্রথম অধিনায়কত্ব করছি, এটা আমার জন্য বড় একটি পাওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে।’

ইতিহাসগড়া এ অর্জনের জন্য সতীর্থদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেননি অধিনায়ক, ‘ক্রিকেটাররা সবাই খুব ভালো ক্রিকেট খেলেছে। সবাই আমাকে অনেক সমর্থন করেছে। এজন্য কৃতিত্ব দিতে চাই সব ক্রিকেটারকে। আমি যেভাবে পরামর্শ দিয়েছি, সবাই মেনে নিয়েছে। এজন্য আমার কাছে খুব ভালো লাগছে।’

মিরাজ যোগ করেন, ‘যেহেতু এই কন্ডিশন খুব সহজ ছিল না, প্রতিটি ক্রিকেটারের জন্য অনেক কঠিন ছিল, সবাই মানসিকতা এরকম করে নিয়েছিল যে, ম্যাচটা জিততে হবে। সবাই মন থেকে চেয়ে ম্যাচটি জেতার জন্য। এজন্যই আমরা জিততে পেরেছি।’

অথচ প্রথম ইনিংসে যখন বাংলাদেশ ১৬৪ রানে গুটিয়ে গেল, কজনই বা ভাবতে পেরেছিল এ ম্যাচ বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত জিতে যাবে? এমন সংগ্রহ নিয়েও নাহিদ রানার দুর্দান্ত বোলিংয়ে উইন্ডিজকে ১৪৬ রানে গুটিয়ে ১৮ রানের লিড পায় বাংলাদেশ। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে আগ্রাসী ব্যাটিং করতে থাকেন মিরাজ-শাহাদাত হোসেন দীপু-সাদমান ইসলামরা।

দ্রুত রান তোলার বিষয়টি নিয়ে মিরাজ বলেছেন, ‘যখন আমরা দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমেছি, তার আগে নিজেদের মধ্যে কথা বলেছি। বিশেষ করে, আমি একটা কথা বলেছিলাম যে, এই উইকেটে ইতিবাচক ছাড়া খেললে অনেক বেশি কঠিন হবে। যেহেতু আমরা লিড পেয়েছি ১৮ রানের, আমাদের এখানে রান করাটা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা জানি যে, এই উইকেটে আড়াইশর বেশি করতে পারি, আমাদের জন্য ম্যাচটা জেতা সহজ হবে। বার্তাটা তাই এই ছিল যে, ইতিবাচক খেলতে হবে।’

তবে কাজটা সহজ ছিল না। অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মুমিনুল হক অসুস্থ হয়ে পড়েন টেস্টের মাঝপথেই। সে কারণে তিন নম্বরে ব্যাটিং নিয়ে ঝামেলায় পড়তে হয় বাংলাদেশকে। সে সমস্যার সমাধান কীভাবে টেনেছিলেন, সেটাও বলেছেন অধিনায়ক, ‘সৌরভ ভাই (মুমিনুল) যখন অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন, দলের ভেতর সবাই একটু পাজলড হয়ে যাচ্ছিল। কারণ ওই (তিন নম্বরে) জায়গাটায় ব্যাট করা কঠিন। দীপুকে (শাহাদাত হোসেন) আমি বলেছিলাম, ও রাজি হয়েছে (তিনে খেলতে)। ওকে একটা কথা বলেছিলাম যে, “এই উইকেটে তুমি ইতিবাচক ব্যাটিং করো। যদি মনে হয় তোমার, প্রথম বলেই মারার মতো বল পাও, মেরে দাও। কেউ তোমাকে কিছু বলবে না। আমি সেই সাহস তোমাকে দিলাম।”’

অধিনায়কের সাহস পেয়ে ২৬ বলে ২৮ রানের ইনিংস খেলেন দীপু। এ প্রসঙ্গে মিরাজ বলেছেন, ‘ও ওইভাবেই খেলেছে ,ওর ২৮ রান খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এরপর আমি যখন চার নম্বরে গেলাম, আমিও একই মানসিকতা নিয়ে খেললাম। কারণ এই উইকেট রানটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এবং ক্রিকেটারদের প্রতি এই বার্তা ছিল যে, একটি রানও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি ব্যাটসম্যান যেন রানের জন্য ক্রিকেট খেলে। এরমানে এই না যে, টেস্ট ক্রিকেট জন্য ঠেকাব। বল কী হয় না হয় (এমন ভাবনা ছিল না)। আমরা এই পরিকল্পনাতেই খেলেছি।’

নিউজটি শেয়ার করুন

কোন পরিকল্পনায় এসেছে বাংলাদেশের এমন জয়, জানালেন মিরাজ

আপডেট সময় : ০১:৪৪:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪

চোটের কারণে নিয়মিত অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত না থাকায় অধিনায়কের আর্ম ব্যান্ডটা পেয়েছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। বড় দায়িত্বের সঙ্গে চ্যালেঞ্জটাও কঠিন ছিল ডানহাতি এ অলরাউন্ডারের জন্য। ওয়েস্ট ইন্ডিজে সর্বশেষ ৩ সফর অন্তত সে কথাই মনে করিয়ে দেয়।

২০০৯ সালের পর থেকে তিনবার উইন্ডিজ সফরে গিয়ে ৬ টেস্টেই হেরেছে বাংলাদেশ। সেই ফলের ধারাবাহিকতা বজায় ছিল সদ্য শেষ হওয়া টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচেও। অ্যান্টিগাতে ২০১ রানের বড় হারে সিরিজে ১-০ তে পিছিয়ে পড়েছিল বাংলাদেশ। অধিনায়ক মিরাজের ওপর চাপটায় বেড়ে যায় কয়েকগুণ। অনেকটা খাঁদের কিনারে থেকে দ্বিতীয় টেস্টে প্রবল বিক্রমে ঘুরে দাঁড়ায় সফরকারীরা। ১৫ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে তুলে নেয় ১০১ রানের দাপুটে জয়।

নেতৃত্বের ভার পেয়ে দ্বিতীয় টেস্টেই এমন জয়, স্বাভাবিকভাবে আনন্দের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কথা মিরাজের। ম্যাচ শেষে এ অলরাউন্ডারের কথাতেও উঠে এল সেটা। ম্যাচ শেষে অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে মিরাজ জানিয়েছেন, এটা অনেক বড় অর্জন তার জন্য। উইন্ডিজকে হারানোর কৌশলটা সম্পর্কেও কথা বলেছেন তিনি।

মিরাজের ভাষায়, ‘আলহামদুলিল্লাহ, খুবই ভালো লাগছে। প্রথম ম্যাচে হারার পর দ্বিতীয় ম্যাচ জিততে পেরেছি, এটা অবশ্যই আমার জন্য বড় একটা অর্জন। যেহেতু আমি প্রথম অধিনায়কত্ব করছি, এটা আমার জন্য বড় একটি পাওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে।’

ইতিহাসগড়া এ অর্জনের জন্য সতীর্থদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেননি অধিনায়ক, ‘ক্রিকেটাররা সবাই খুব ভালো ক্রিকেট খেলেছে। সবাই আমাকে অনেক সমর্থন করেছে। এজন্য কৃতিত্ব দিতে চাই সব ক্রিকেটারকে। আমি যেভাবে পরামর্শ দিয়েছি, সবাই মেনে নিয়েছে। এজন্য আমার কাছে খুব ভালো লাগছে।’

মিরাজ যোগ করেন, ‘যেহেতু এই কন্ডিশন খুব সহজ ছিল না, প্রতিটি ক্রিকেটারের জন্য অনেক কঠিন ছিল, সবাই মানসিকতা এরকম করে নিয়েছিল যে, ম্যাচটা জিততে হবে। সবাই মন থেকে চেয়ে ম্যাচটি জেতার জন্য। এজন্যই আমরা জিততে পেরেছি।’

অথচ প্রথম ইনিংসে যখন বাংলাদেশ ১৬৪ রানে গুটিয়ে গেল, কজনই বা ভাবতে পেরেছিল এ ম্যাচ বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত জিতে যাবে? এমন সংগ্রহ নিয়েও নাহিদ রানার দুর্দান্ত বোলিংয়ে উইন্ডিজকে ১৪৬ রানে গুটিয়ে ১৮ রানের লিড পায় বাংলাদেশ। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে আগ্রাসী ব্যাটিং করতে থাকেন মিরাজ-শাহাদাত হোসেন দীপু-সাদমান ইসলামরা।

দ্রুত রান তোলার বিষয়টি নিয়ে মিরাজ বলেছেন, ‘যখন আমরা দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমেছি, তার আগে নিজেদের মধ্যে কথা বলেছি। বিশেষ করে, আমি একটা কথা বলেছিলাম যে, এই উইকেটে ইতিবাচক ছাড়া খেললে অনেক বেশি কঠিন হবে। যেহেতু আমরা লিড পেয়েছি ১৮ রানের, আমাদের এখানে রান করাটা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা জানি যে, এই উইকেটে আড়াইশর বেশি করতে পারি, আমাদের জন্য ম্যাচটা জেতা সহজ হবে। বার্তাটা তাই এই ছিল যে, ইতিবাচক খেলতে হবে।’

তবে কাজটা সহজ ছিল না। অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মুমিনুল হক অসুস্থ হয়ে পড়েন টেস্টের মাঝপথেই। সে কারণে তিন নম্বরে ব্যাটিং নিয়ে ঝামেলায় পড়তে হয় বাংলাদেশকে। সে সমস্যার সমাধান কীভাবে টেনেছিলেন, সেটাও বলেছেন অধিনায়ক, ‘সৌরভ ভাই (মুমিনুল) যখন অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন, দলের ভেতর সবাই একটু পাজলড হয়ে যাচ্ছিল। কারণ ওই (তিন নম্বরে) জায়গাটায় ব্যাট করা কঠিন। দীপুকে (শাহাদাত হোসেন) আমি বলেছিলাম, ও রাজি হয়েছে (তিনে খেলতে)। ওকে একটা কথা বলেছিলাম যে, “এই উইকেটে তুমি ইতিবাচক ব্যাটিং করো। যদি মনে হয় তোমার, প্রথম বলেই মারার মতো বল পাও, মেরে দাও। কেউ তোমাকে কিছু বলবে না। আমি সেই সাহস তোমাকে দিলাম।”’

অধিনায়কের সাহস পেয়ে ২৬ বলে ২৮ রানের ইনিংস খেলেন দীপু। এ প্রসঙ্গে মিরাজ বলেছেন, ‘ও ওইভাবেই খেলেছে ,ওর ২৮ রান খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এরপর আমি যখন চার নম্বরে গেলাম, আমিও একই মানসিকতা নিয়ে খেললাম। কারণ এই উইকেট রানটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এবং ক্রিকেটারদের প্রতি এই বার্তা ছিল যে, একটি রানও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি ব্যাটসম্যান যেন রানের জন্য ক্রিকেট খেলে। এরমানে এই না যে, টেস্ট ক্রিকেট জন্য ঠেকাব। বল কী হয় না হয় (এমন ভাবনা ছিল না)। আমরা এই পরিকল্পনাতেই খেলেছি।’