শীতকালীন সবজির দাম কিছুটা কমলেও ভোগ্যপণ্যে নাভিশ্বাস
- আপডেট সময় : ০৭:৪৮:৩৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৪
- / ৪০১ বার পড়া হয়েছে
রাজধানীর বাজারগুলোতে নিত্যপণ্যের দাম কমছেই না। চড়া দামে নাভিশ্বাস সাধারণ মানুষের। শীতকালীন সবজির দাম কিছুটা কমলেও, নাগালের বাইরে রয়েছে বলে জানান ক্রেতারা। তবে মুরগি-গরুর মাংসসহ অন্যান্য সবধরনের মাংসের দাম অপরিবর্তিতই রয়ে গেছে। এই অবস্থায় সবজির বাজারে ক্রেতাদের কিছুটা অসন্তোষ থাকলেও মাছ-মাংসে কিছুটা স্বস্তি মিলছে বলে জানিয়েছেন কম আয়ের মানুষজন।
এদিকে, ভারতীয় আলু আমদানি বন্ধে বেড়েছে দেশি আলুর দাম। মাছ-মাংসের বাজার ঘুরে দেখা যায়, বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ক্রেতা সমাগম থাকলেও নিত্যপণ্যের চড়া দামে নাকাল অবস্থা ক্রেতাদের। সাধারণ মানুষের আয়ের বেশির ভাগ অংশ চলে যায় খাবারের পেছনে। নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় দৈনন্দিন খরচ চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে বলে জানান ভোক্তারা।
বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজি কচুরমুখীর কেজি ৭০ টাকা, বেগুন ৬০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, পটল ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৭০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, লাউ প্রতিটি ৪০ থেকে ৬০ টাকা, পেঁপের কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ধুন্দল ৭০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০ টাকা, কচুর লতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ঝিঙ্গা ১০০ টাকা, শসা ৮০ টাকা, খিরা ৭০ টাকা এবং কাঁচামরিচ ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
শীতকালীন সবজি শিমের কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ফুলকপি প্রতিটি ৩০ থেকে ৫০ টাকা পিস, ছোট আকারের বাঁধাকপি ৪০ টাকা, পাকা টমেটোর কেজি প্রকারভেদে ১০০ থেকে ১২০ টাকা, গাজর ৮০ টাকা, মুলা ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লেবুর হালি ২০ থেকে ৪০ টাকা, ধনে পাতার কেজি ২০০ টাকা, কাঁচা কলার হালি ৫০ টাকা, চাল কুমড়া ৬০ টাকা প্রতিটি, ক্যাপসিকামের কেজি ৩০০ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে লাল শাকের আঁটি ১০ টাকা, লাউ শাক ৪০ টাকা, মুলা শাক ১০ টাকা, পালং শাক ১৫ টাকা, কলমি শাক ১৫ টাকা, পুঁই শাক ৪০ টাকা এবং ডাঁটা শাক ২০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। দেশি পেঁয়াজের কেজি ১৩০ টাকা। ইন্ডিয়ান পেঁয়াজের কেজি প্রকারভেদে ৯০ থেকে ১১০ টাকা, কাঁচা আদা ১২০ টাকা এবং পুরোনো আদা ২৮০ টাকা, রসুন ২৪০ টাকা, নতুন আলু ১০০ টাকা, বগুড়ার আলু ১০০ টাকা, পুরোনো আলু ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর শান্তিনগর বাজারে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বাজার করতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী ফরিদ উদ্দিন। তিনি বলেন, শীত পড়ে গেছে তবুও বাজারে সবজির অনেক আইটেমের কেজি এখনো ১০০ টাকার ওপরে। অন্যগুলো ৬০ টাকা ৮০ টাকা। শীতের সময় সবজির দাম কমার কথা থাকলেও এখনো বাড়তি দামে বিক্রি করা হচ্ছে।। এই সময় যদি সবজির দাম না কমে, তাহলে আর কোন সময় কমবে?
মালিবাগ বাজারের আরেক ক্রেতা হাবিবুর রহমান বলেন, এখনো বাজারে সব সবজি ৬০ টাকা ৮০ টাকা করে দাম হাঁকাচ্ছে। আর অন্য গুলোর দাম ১০০ টাকার ওপরে। আসলে আমাদের বাজার মনিটরিংয়ের কোনো ব্যবস্থা নেই। ব্যবসায়ীরা যে যার মতো করে দাম আদায় করে নিচ্ছে। ক্রেতাদের বাধ্য হয়ে সেই বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের উচিত বাজার মনিটরিং করে সব কিছুর দাম নির্ধারণ করা এবং ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসা।
সবজির দাম বাড়তি বিষয়ে রামপুরা বাজারের বিক্রেতা শহীদুজ্জামান বলেন, আগের তুলনায় সবজির দাম কমেছে। কিছুদিন আগেও সবজির দাম খুব বেড়ে ছিল। এখন কেবল শীত পড়তে শুরু করেছে, অনেক সবজি এখনো বাজারে ওঠেনি। নতুন করে সবজি উঠলেই দাম অনেক কমে আসবে। আবার বেশ কিছু সবজির মৌসুম ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে, সেইসব সবজির দাম কিছুটা বাড়তে থাকে। আর ১৫-২০ দিনের মধ্যে সব ধরনের সবজির দাম কমে আসবে এবং নতুন সবজিতে বাজার ভরে যাবে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, শীতকালীন সবজির সরবরাহ বাড়ছে। আগামী সপ্তাহে দাম কমে আসতে পারে। তালতলা বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. নাইম বাংলানিউজকে বলেন, বাজারে সবজির সরবরাহ বাড়ছে, আগামী সপ্তাহে সব ধরনের সবজি, পেঁয়াজ ও আলুর দাম কমে আসবে।
এদিকে চলতি সপ্তাহে সব ধরনের মুরগি কেজিতে ১০ টাকা কমেছে। ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ১০ টাকা কমে ১৭০ টাকা, সোনালি কক ৩০০ টাকা, সোনালি হাইব্রিড ২৭০ টাকা, দেশি মুরগি ৫১০ টাকা, লেয়ার লাল মুরগি ২৮০ টাকা এবং লেয়ার সাদা মুরগি ২৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। হাঁসের ডিমের ডজন ২৩০ টাকা। দেশি মুরগির ডিমের হালি ৯০ টাকা।
বাজারে গরুর মাংসের কেজি ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা। গরুর কলিজার কেজি ৮০০ টাকা, গরুর মাথার মাংস ৪৫০ টাকা, গরুর বট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা এবং খাসির মাংসের কেজি এক হাজার ১৫০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ক্রেতা-বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে নিম্ন আয়সহ সাধারণ ক্রেতাদের মাংসের চাহিদা মেটাতে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় ব্রয়লার মুরগি। তবে মাঝেমধ্যেই হুটহাট করে দাম বেড়ে যায়, তখন আবার বিক্রিও কিছুটা কমে যায়। তবে নদী ও সামুদ্রিক মাছের সরবরাহ ভালো থাকায় গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে মাছের দাম কিছুটা কমেছে।
বাড্ডা পাঁচতলা বাজার থেকে ১৭০ টাকা কেজি দরে ব্রয়লার মুরগি কিনেছেন মনিরুল ইসলাম নামের একজন ক্রেতা। তিনি বলেন, গরুর মাংস কিনতে গিয়ে গিয়ে মুরগির মাংস নিয়েছি। গত সপ্তাহেও দেখলাম ৭৫০ টাকা কেজি, আজকে ৭৮০ টাকার নিচে দেবেই না। আমিও রাগ করে চলে এসে মুরগি নিয়েছি।
বাজার করতে আসা মো. রফিকুল ইসলাম নামে আরেকজন বলেন, অন্যান্য সপ্তাহের তুলনায় আজকের বাজারে মুরগি ও মাছের দাম কিছুটা কম। তবে গরুর মাংসটা আগের মতোই। একটা সময় প্রতি সপ্তাহে একদিন গরুর মাংস খাওয়া হতো। এখন আর আগের মতো প্রতি সপ্তাহেই গরুর মাংস কেনা যায় না। কিনতে গেলেও বারবার হিসেব করতে হয়। তবে মুরগির দাম কম থাকাটা আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জন্য কিছুটা স্বস্তির জায়গা।
মুরগির মাংস বিক্রেতা মনসুর আলী বলেন, বাজারে মুরগির চাহিদা সবসময়ই বেশি থাকে। দামটাও তুলনামূলক কমই। দাম কম থাকলে আমাদের বিক্রিও ভালো থাকে, আবার বেড়ে গেলেই বিক্রি কমে যায়। এখন আলহামদুলিল্লাহ, ভালো বিক্রি হচ্ছে।
গরুর মাংস বিক্রেতা শান্ত ইসলাম বলেন, এখন খামারিরা গরু কম ছাড়ছে। সামনে ঈদকে কেন্দ্র করে তারা গরু তৈরি করছে। যেকারণে এখন যেগুলোও বিক্রি হচ্ছে দাম তুলনামূলক একটু বেশি দামে। তাই মাংসের বাজারেও তার প্রভাবটা পড়েছে।
এসব বাজারে আকারভেদে ইলিশের কেজি এক হাজার টাকা থেকে এক হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চাষের শিংয়ের কেজি (আকারভেদে) ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, রুইয়ের দাম কেজিতে বেড়ে (আকারভেদে) ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, দেশি মাগুর ৮০০ থেকে এক হাজার ১০০ টাকা, মৃগেল ৩২০ থেকে ৪০০ টাকা, পাঙাশ ২০০ থেকে ২২০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, বোয়াল ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাতল ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা, পোয়া ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কই ২২০ থেকে ২৩০ টাকা, মলা ৫০০ টাকা, বাতাসি টেংরা এক হাজার ৩০০ টাকা, টেংরা ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি ৫০০ টাকা, পাঁচমিশালি ২২০ টাকা, রূপচাঁদা এক হাজার ২০০ টাকা, বাইম এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৪০০ টাকা, দেশি কই এক হাজার ২০০ টাকা, শোল ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা, আইড় ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, বেলে ৮০০ টাকা ও কাইক্ক্যা ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।