শীতের তাণ্ডব, তাপমাত্রার পারদ নেমেছে ১০ ডিগ্রিতে
- আপডেট সময় : ১১:১৯:১৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৪
- / ৪০৪ বার পড়া হয়েছে
উত্তরের জেলাগুলোতে তাপমাত্রা ক্রমশ কমছেই। অব্যাহত রয়েছে ঘন কুয়াশা ও হিমেল বাতাস। তাপমাত্রা কমে যাওয়ায়, বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া ও নিম্ন আয়ের মানুষ। হিমালয়ের কাছাকাছি হওয়ায় প্রতিবছর আগেভাগেই শীত ঝেঁকে বসে এই অঞ্চলে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী তিন দিনে অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। তবে সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রাও সামান্য কমতে পারে।
তবে আগামী সোমবার (৯ ডিসেম্বর) সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়লেও দেশের উত্তরাঞ্চলে দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং অন্য অঞ্চলে তা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে।
এদিকে, গতকাল সন্ধ্যা থেকে শুরু করে আজ শনিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকে দিনাজপুরের জনপদ। গত কয়েকদিন থেকে তাপমাত্রা উঠানামা করছে ১০ থেকে ১২ ডিগ্রির মধ্যে।
আজ (শনিবার, ৭ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা ছিল রাস্তাঘাট। হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে বিভিন্ন যানবাহনকে। কাজের তাগিদে ঘর থেকে বের হওয়া অনেকেই গায়ে জড়িয়েছেন শীতের পোশাক।
দিনাজপুর আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন জানান, আজ সকাল ৯টায় দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা দেশের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।
আর দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে নওগাঁর বদলগাছিতে। যা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
শ্রমিক আবুল হোসেন বলেন, সকালের দিকে আর সন্ধ্যা থেকে শীতের অনুভূতি বেশি হচ্ছে। সকালে কুয়াশা আর শীতটা বেশি থাকে, বেলা ১০টার পরে শীতের তীব্রতা কমে যাচ্ছে তখন কাজে যাচ্ছি।
আটো চালক হাবিবর রহমান বলেন, সকাল বেলা মানুষ প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না, আবার সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে বাসায় ফিরছে। কয়েক দিন থেকে ভাড়া কম হচ্ছে। কারণ সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে ঠান্ডা বাড়ছে, পরেরদিন সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত থাকে।
এদিকে, ঘন কুয়াশার আবরণে ঢাকা পড়েছে উত্তরের হিমালয়কন্যা পঞ্চগড়। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মতো ঝরছে শিশির। ঘন কুয়াশায় শহরের সড়কগুলোতে হেড লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। একই চিত্র গ্রামের সড়কগুলোতেও। খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন অনেকেই।
জেলার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার তেঁতুলিয়া অফিস জানায়, আজ (শনিবার) ভোর ৬টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১০০%। গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল দিনের তাপমাত্রাও নেমে আসে ২৩ দশমিক ৬ ডিগ্রিতে।
প্রথম শ্রেণির তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্র নাথ জানান, গতকাল থেকে কুয়াশার আবরণে ঢাকা পড়েছে উত্তরের এ জেলা। আজ কুয়াশাটা বেশি পড়েছে। তবে তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রির মধ্যেই রেকর্ড হচ্ছে। সকাল ৯টায় তাপমাত্রা ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে। গতকাল সকাল ৯টায় ১২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল।
ভোর থেকে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঘন কুয়াশার কারণে সড়কগুলোতে হেডলাইট জ্বালিয়ে গতি কমিয়ে চলাচল করছে দূরপাল্লার বাস ও মিনিবাস, সিএনজি, ইজিবাইক ও মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন। কুয়াশার সাথে হিমেল বাতাসের কারণে প্রয়োজনের বাইরে বের হতে হচ্ছেন না অনেকেই। তবে খেটে খাওয়া মানুষগুলো জীবিকার তাগিদে সকালেই বেরিয়েছেন কাজে। সকালে কাজে যেতে দেরি হলে মহাজন কাজে নিতে চান না এমন অভিযোগ অনেক দিনমজুর ও পাথর শ্রমিকদের।
স্থানীয়রা বলছেন, আজ খুবই ঠান্ডা পড়েছে। তার মধ্যে ঘন কুয়াশার কারণে অন্ধকারের মতো লাগছে। হাত-পা অবশ হয়ে আসছে ঠান্ডার কারণে। বিশেষ করে এ এলাকাটি বরফের পাহাড় হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘার কাছাকাছি হওয়ায় এখানে এ সময়ের প্রচণ্ড শীতে কাঁপতে হয় আমাদের। রাতে গায়ে কাঁথা-কম্বল নিতে হচ্ছে। মনে হচ্ছে পৌষ মাসের ঠান্ডা শুরু হয়েছে।
কুড়িগ্রামে তীব্র শীত ও কুয়াশায় ব্যাহত হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। শীতের সঙ্গে ঘনকুয়াশায় ঢাকা পড়েছে পথঘাট ও প্রকৃতি। শনিবার (৭ ডিসেম্বর) সকাল ৭টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
দিনের অধিকাংশ সময় সূর্য মেঘে ঢাকা থাকছে। সন্ধ্যার পর থেকে সকাল পর্যন্ত হিম বাতাসে শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হতে থাকে।
ঘনকুয়াশার কারণে যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে বিলম্বে যাতায়াত করছে। কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। অন্য দিকে, কুয়াশা ও শীতের কারণে কৃষি শ্রমিক ও খেটে খাওয়া মানুষগুলো বিপাকে পড়েছে। তারা সময়মতো কাজে যেতে পারছেন না।
অপরদিকে হিমেল বাতাসে তীব্র শীতের কবলে পড়েছে জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ১৬টি নদ-নদী তীরবর্তী ৩ শতাধিক চর ও দ্বীপ চরের হতদরিদ্র মানুষ।
সদরের পাঁচগাছী ইউনিয়নের দিনমজুর কাজিয়ার বলেন, কয়েকদিন থেকে খুব ঠান্ডা ও কুয়াশা। কাজ করা খুব সমস্যা হইছে আমাগো। আজও সেই কুয়াশা রাস্তা দেখায় যায় না। কাজ করার সময় হাত বরফ হয়ে যায়।
কুড়িগ্রাম আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, এ মাসে তাপমাত্রা আরও কমে ২-৩টি শৈতপ্রবাহ এ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে, পদ্মা-আড়িয়াল খাঁ নদীর অববাহিকার মাদারীপুরে ভোর রাত থেকেই কুয়াশার ঘনত্ব বাড়তে থাকে। কুয়াশার কারণে ভোরে সূর্যের দেখা মিলতে সময় লাগে। এদিকে কুয়াশার কারণে সড়ক-মহাসড়কে গাড়ি চলাচলে ধীরগতি দেখা গেছে। হেড লাইট জ্বালিয়ে চলতে দেখা গেছে পণ্যবাহী ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন।
জানা যায়, গত কয়েকদিন ধরেই ভোর রাতের দিকে ঘন কুয়াশা পড়ছে। সকাল ৭/৮টা বেজে যাচ্ছে কুয়াশা কাটতে। এদিকে কুয়াশার কারণে যাত্রাবাড়ী-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে পরিবহন চলাচলে ধীরগতি রয়েছে। ভোরের দিকে যানবাহন চলাচলও বেশ সীমিত রয়েছে।
এছাড়াও স্বল্প দূরত্বের ছোট যানবাহনও কুয়াশা থাকায় ভোরের দিকে চলাচল কমে গেছে বলে জানা গেছে। কুয়াশার কারণে গত বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) ভোরে এক্সপ্রেসওয়ের শিবচরের পাঁচ্চর গোলচত্বরে কাভার্ডভ্যান ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
পরিবহন চালকেরা জানিয়েছেন, ঘন কুয়াশার কারণে ভোরে গাড়ি চালাতে খুবই সতর্কতা মেনে চলতে হয়। সামান্য দূরত্বেও কিছু দেখা যায় না। হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীর গতিতে সড়কে চলতে হয়।
শিবচর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জহুরুল ইসলাম জানান, ভোরে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল কিছুটা কম এখন। কুয়াশার কারণে হেডলাইট জ্বালিয়ে গতি কমিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। হাইওয়ে পুলিশ মহাসড়কে দায়িত্ব পালন করছে।