গতি ফিরছে সিরিয়ার অর্থনীতিতে, বাড়ছে বিদেশি মুদ্রার ব্যবহার
- আপডেট সময় : ০৫:০২:৩১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪
- / ৩৬৯ বার পড়া হয়েছে
স্বৈরশাসক বাশার আল আসাদের কালো ছায়া দেশ থেকে সরে গেলে বহু বছর পর অবাধে শুরু হয়েছে লেনদেনে বিদেশি মুদ্রার ব্যবহার। ডলারের বিপরীতে শক্তিশালী হচ্ছে সিরিয়ান পাউন্ড। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে পাওয়া গেছে ২২০ কোটি ডলারের স্বর্ণ। তবে দেশটিতে নেই ডলারের রিজার্ভ। সবজির বাজার স্বাভাবিক থাকলেও বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। কিন্তু বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ্বালানি আর পানির সরবরাহ এখনও স্বাভাবিক হয়নি দেশের অনেক স্থানে।
সিরিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অবাধে হচ্ছে ডলার কেনা-বেচা। অথচ বিগত সরকারের আমলে সাধারণ বাণিজ্যে বিদেশি মুদ্রা ব্যবহার করলেই হয়ে যেতো কারাদণ্ড। এমনকি ডলারের নাম পর্যন্ত জনসমক্ষে উচ্চারণ করতে ভয় পেতেন সাধারণ সিরীয়রা।
সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক বাশার আল আসাদ যেন দেশটির জন্য ছিলেন এক আতঙ্কের নাম। আসাদ পরিবারের একনায়কতন্ত্র, বিপরীতে সরকারবিরোধী সংঘাত গেলো প্রায় অর্ধশত বছর এক প্রকার শেষ করে দিয়েছিলো সিরিয়ার অর্থনীতিকে।
সরকার পালিয়ে যাওয়ার মাত্র এক সপ্তাহের মাথায় দেশটিতে ডলারের লেনদেন শুরুর পাশাপাশি ডলারের বিপরীতে সিরিয়ার পাউন্ড শক্তিশালী হয়েছে ২০ শতাংশ। পার্শ্ববর্তী দেশ লেবানন আর জর্ডান দিয়ে শুরু হয়েছে আন্তঃবাণিজ্য।
দামেস্কে ১ ডলারের বিনিময়মূল্য পৌঁছেছে ১০ থেকে ১২ হাজার সিরিয়ান পাউন্ডে। যা আগে ছিল ১৫ হাজার সিরিয়ান পাউন্ড। ১৩ বছরে দেশ ছেড়ে পালানো সিরিয়ানরা দেশে ফিরতে শুরু করায় বাড়ছে ডলারের লেনদেন। ডলারের পাশাপাশি বিনিময় হচ্ছে তুরস্কের মুদ্রা লিরাও।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, সরকার পতনের পর দেখা গেছে, সিরিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে রয়েছে ২৬ টন স্বর্ণ। ২০১১ সালের গৃহযুদ্ধ শুরুর পরও একই পরিমাণ স্বর্ণ ছিল ভল্টে।
ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল বলছে, এই স্বর্ণের মূল্য বর্তমান প্রেক্ষাপটে ২২০ কোটি ডলার। কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল স্বল্প পরিমাণে। সূত্র বলছে, এই পরিমাণ নগদ ২০ কোটি ডলার। আসাদ সরকার দেশের রিজার্ভ খাদ্য, জ্বালানি আর যুদ্ধে ব্যয় করতো বলে ডলার কখনই সেভাবে মজুদ করতে পারেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এদিকে, আসাদের পতনের পর ক্রমেই স্বাভাবিক হচ্ছে সিরিয়ার জনজীবন। বাশার আল আসাদের নাটকীয় পতনের পর খুব একটা প্রভাব পড়েনি স্থানীয় বাজারগুলোতে। নিত্যপণ্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে হায়াত তাহরীর আল শামকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বলছেন সিরিয়ার সাধারণ মানুষ।
সিরীয় সেনাবাহিনী আর বিদ্রোহীদের তুমুল সংঘাতে বিপদগ্রস্ত আলেপ্পোসহ প্রায় সব শহরের পরিস্থিতি এখন স্থিতিশীল। কিন্তু সংঘাতের কারণে সরবরাহ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এখনও অনেক স্থানে স্বাভাবিক হয়নি বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ। রান্নার গ্যাসের দাম বেড়ে গেছে। নেই জ্বালানি তেলের সরবরাহ।
আসাদ পরিবারের শাসনের কারণে দেশটিতে এখন ৯০ শতাংশ মানুষই দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। সিরিয়ার জ্বালানি, উৎপাদন, পর্যটনসহ অর্থনীতির ভিত হিসেবে পরিচিত বিভিন্ন খাতকে শুষে নিয়েছে সরকার।
অন্যদিকে, ভেঙে পড়া বেসরকারি খাতে হাজার হাজার মানুষ নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার দায়িত্ব নেয়া হায়াত তাহরীর আল শামের মূল লক্ষ্য, দেশের মানুষের মজুরি বাড়িয়ে সেবাখাতের মান উন্নত করা।