দেশ ছেড়ে পালানোর কোনো ইচ্ছেই ছিল না: আসাদ
- আপডেট সময় : ০৪:৩২:৩৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪
- / ৩৪৫ বার পড়া হয়েছে
দেশ ছেড়ে পালানোর কোনো ইচ্ছেই ছিল না সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের। নিজের ও পরিবারের ৫৩ বছরের স্বৈরশাসনের পতনের পর আপাতদৃষ্টিতে প্রথম বিবৃতিতে এমনটাই দাবি করেছেন তিনি। পতনের জন্য দায়ী করেন সেনাবাহিনীকে। এদিকে দামেস্কের গণকবরে আসাদ বাহিনীর হাতে নিহত এক লাখের বেশি মানুষের দেহাবশেষ রয়েছে, বলছে পর্যবেক্ষক সংস্থা।
যুদ্ধের শেষ দিকে এসে যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে পালানোর পরিকল্পনাও ছিল না, পালিয়েও যাননি- ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আটদিন পর এমনটাই দাবি করলেন সিরিয়ার আড়াই দশকের স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদ।
টেলিগ্রাম অ্যাপে সিরীয় প্রেসিডেন্টের চ্যানেলে সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। বিবৃতি প্রকাশের তারিখ ১৬ ডিসেম্বর এবং স্থান মস্কো উল্লেখ করা, যেখানে বর্তমানে আশ্রিত আসাদ ও তার পরিবার।
বিবৃতিতে আসাদের দাবি, দামেস্কে বিদ্রোহীরা প্রবেশ করায় তিনি ভূমধ্যসাগর উপকূলীয় বন্দরনগরী লাটাকিয়ায় চলে যান মিত্র রুশ বাহিনীর সহযোগিতায়। যুদ্ধ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সেখানে গেলেও রাশিয়া পরিচালিত মেইমিম ঘাঁটি পরিদর্শন করতে গিয়ে দেখেন যুদ্ধক্ষেত্র থেকে তার বাহিনী পুরোপুরি পিছু হটেছে এবং সেনাবাহিনীর শেষ আস্তানারও পতন ঘটেছে।
আরবি ও ইংরেজি- দুই ভাষায় প্রকাশিত বিবৃতিতে সাবেক সিরীয় নেতা আরও বলেন, তীব্র ড্রোন হামলার মধ্যে ঘাঁটি ছাড়ার কোনো পথ না পেয়ে মস্কোর অনুরোধে রাশিয়ায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হন তিনি।
দীর্ঘ স্বৈরশাসনে সরকারে ঘনিষ্ঠতম সহযোগীদের অন্ধকারে রেখে রাতের আঁধারে পালিয়ে যান আসাদ- এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে তিনি দাবি করেন, কোনো অবস্থাতেই পদত্যাগ বা ভিনদেশে আশ্রয় নেয়ার কোনো পরিকল্পনা তার ছিল না। এ ধরনের কোনো প্রস্তাবও তাকে কেউ দেয়নি। বরং ৭ ডিসেম্বর মধ্যরাতে দেশ ছাড়ার আগ মুহূর্তেও পরদিন সকালের কাজ নির্ধারিত ছিল তার।
এদিকে বাশার আল-আসাদ ও তার পিতা হাফিজ আল-আসাদের ৫৩ বছরের স্বৈরশাসনের পতনের পর একের পর এক গণকবরের সন্ধান মিলছে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে। রাজধানীর ৪০ কিলোমিটার উত্তরে কুতাইফা এলাকার একটি গণকবরেই কমপক্ষে এক লাখ মানুষের দেহাবশেষ রয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সিরীয় পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান ইমার্জেন্সি টাস্ক ফোর্স।
এটি ছাড়াও আরও চারটি গণকবরের সন্ধান পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি এবং আরও অনেক গণকবরের অস্তিত্ব মিলবে বলেও ধারণা করছে, আসাদ বাহিনীর হাতে নিহত সিরীয় ছাড়াও যেখানে থাকতে পারে মার্কিন, ব্রিটিশ ও অন্যান্য দেশের নাগরিকরা। যদিও এ দাবির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
অন্যদিকে আসাদ পরবর্তী সিরিয়ার ভবিষ্যৎ প্রতিবেশি তুরস্কের ওপর নির্ভর করছে বলে মন্তব্য করেছেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে সিরিয়াকে ঘিরে রয়েছে অনেকরকম অনিশ্চয়তা। কেউ জানে না এরপরে আসলে সিরিয়ায় কী ঘটতে যাচ্ছে। তবে আমি মনে করি যে সিরিয়ার চাবিকাঠি আসলে তুরস্কের হাতে। হয়তো অন্য কারো মুখে একথা এখনও কেউ শোনেনি। কিন্তু আমি পরিস্থিতি আগেই অনুমানে বেশ ভালো।’
১৩ বছরের বেশি দীর্ঘ গৃহযুদ্ধ থামাতে আসাদ প্রশাসনের ব্যর্থতা, সীমান্তে বিচ্ছিন্নতাবাদ- সবমিলিয়ে ধৈর্যচ্যুতি ঘটে প্রতিবেশি দেশে তুরস্কের।
যুদ্ধক্ষেত্রে আসাদ মিত্র রাশিয়া-ইরানের অনুপস্থিতির সুযোগে সিরিয়ার উত্তরপূর্বাঞ্চলে আসাদবিরোধী বিদ্রোহীদের উত্থান ঘটে তুরস্কের মদদে। তবে এককালে আল-কায়েদাঘনিষ্ঠ হায়াত তাহরির আল-শাস, তথা এইচটিএসের হাতে ক্ষমতা চলে যাওয়ায় উদ্বিগ্নও কম নয় আঙ্কারা। এ অবস্থায় রাশিয়া-ইরান বা উগ্রবাদের কোনো স্থান নেই সিরিয়ার ভবিষ্যতে, বলছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহ জানিয়েছে যুক্তরাজ্য।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেন, ‘আমরা একটি জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি দলকে চলতি সপ্তাহে দামেস্কে বৈঠকের জন্য পাঠিয়েছি। সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকার ও বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করবেন তারা। সিরিয়ার প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা জানাবো। গতকালই পাঁচ কোটি পাউন্ডের মানবিক সহায়তা তহবিল ঘোষণা করেছি। সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্রের মজুতের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনে আরও অর্থ দেবো।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক প্রধান কাজা ক্যালাস বলেন, ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠনে গুরুত্ব দিচ্ছি। সিরিয়ার নেতৃত্ব, সিরিয়ার মালিকানার দায়িত্বে থাকবেন সিরিয়ারই সব ধরনের মানুষ। এর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আর কিছু নয়। উগ্রবাদ, রাশিয়া বা ইরানের কোনো ঠাঁই থাকবে না ভবিষ্যৎ সিরিয়ায়।’
এদিকে আসাদের পতনে মিত্র রাশিয়া সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় যুদ্ধক্ষেত্র ও আলাউইত পার্বত্য অঞ্চলের নিরাপত্তা থেকে রুশ সেনাদের হটিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু দেশটির লাটাকিয়া অঞ্চলের টার্টুজ ও মেইমিমে রাশিয়ার প্রধান দুই সামরিক ঘাঁটি ছাড়ছেনা রুশ সেনারা, রয়টার্সকে জানিয়েছেন সিরীয় কর্মকর্তারা।