নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা, অস্বস্তিতে রাজনৈতিক দলগুলো
- আপডেট সময় : ০৪:৪৬:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪
- / ৪৮৫ বার পড়া হয়েছে
অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাচনের তারিখ ঘোষণাকে স্বাগত জানালেও এ নিয়ে অস্বস্তি রয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর। সুস্পষ্টভাবে দিনক্ষণ ঘোষণার প্রত্যাশা ছিল তাদের। বিএনপি দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুস্পষ্ট তারিখ চাইলেও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সরকারের বেঁধে দেয়া সময়ের সঙ্গে একমত। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, সংস্কার প্রক্রিয়া দীর্ঘমেয়াদি হওয়ায় যতদ্রুত সম্ভব নির্বাচন দেয়াই দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণকর।
শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই কখন পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সে ব্যাপারেই মূল আগ্রহ রাজনৈতিক দলগুলোর। সবার আগে বিএনপি এবং পর্যায়ক্রমে আওয়ামী লীগ বিরোধী বাকি সব দল নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে চাপ দিতে থাকে অন্তর্বর্তী সরকারকে।
অবশেষে ১৬ই ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশে ভাষণে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ঘোষণা করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই ঘোষণাকে স্বাগত জানালেও ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন অন্তর্বর্তী সরকারকে আরও সুস্পষ্টভাবে নির্বাচনের সময় ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছেন। সরকার আন্তরিক হলে আরও আগে নির্বাচন করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমরা মনে করি যদি সরকার আন্তরিক হয় এবং নির্বাচন কমিশন আন্তরিক হয় তার আগেই নির্বাচন করা সম্ভব। এবং যেহেতু দেশে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে, আমরা বিশ্বাস করি যে নির্বাচনের রোডম্যাপটি স্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হলে জনগণ নির্বাচনমুখী হয়ে যাবে। তখন এই জনগণের মধ্যে আর কোনো ষড়যন্ত্র ছড়ানো সম্ভব হবে না। সেজন্য সরকারের স্বার্থে এ দেশের জনগণের স্বার্থে যতদ্রুত সম্ভব নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন।’
দুই তিন মাস আগে বা পরে, নির্বাচন যখনই হোক, তা কতটা সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও জবাবদিহিতামূলক হচ্ছে সে দিকে বেশি জোর দিচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলের সেক্রেটারি মিয়া গোলাম পরওয়ার জানান, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে যতটুকু সংস্কার প্রয়োজন কেবল সেদিকেই মনোযোগ দেয়া উচিত অন্তর্বর্তী সরকারের।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘১৪, ১৮, ২৪ এ ভোট দিতে পারিনি সেই পরিস্থিতি হয়ে গেলে আরও দুই বছর পর ভোট দিয়েও কোনো লাভ নেই। এনারা তো রাষ্ট্র শাসনের জন্য আসেননি। এনারা এসছেন নির্বাচন দিয়ে চলে যাবেন। সেজন্য পুরো দেশের সংস্কারের কাজ কিন্তু অনেক লম্বা সময়ের ব্যাপার। এটা এই অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে এই মেয়াদে সম্ভব নয়। সেটা যদি উনি চিন্তা করে থাকেন যে সবকিছু করে তারপর আমি যাবো এটা লম্বা সময় লাগবে। তাহলে উনি উনার এই কথার উপরেও ঠিক থাকতে পারবেন না। জাতির প্রত্যাশা অনুযায়ী এটা আরও একটু আগে হওয়া সম্ভব ছিল।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, সংস্কার প্রক্রিয়া দীর্ঘমেয়াদি হওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত জনগণের প্রতিনিধির কাছে দ্রুত ক্ষমতা হস্তান্তর। তাই সংস্কার প্রক্রিয়ায় আরও গতি আনার তাগিদ দেন তারা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক কাজী মাহবুব বলেন, ‘মৌলিক সংস্কার তো আসলে কতগুলো অধ্যাদেশ জারি। এই সরকার আসলে কী করতে পারবে? কতগুলো নির্দেশনা ছাড়া ইমপ্লিমেন্ট করার বড় মেকানিজম তার নেই। আমরা চাই একটা সুষ্ঠু রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় যেন ক্ষমতা হস্তান্তর হয়। যারা ক্ষমতায় আসবে তারা যেন নাগরিকদের কাছে জবাবদিহির অধীন হয়, আর কখনও যে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করতে না পারে। কিন্তু এই ব্যবস্থা তৈরি করার জন্য অনাদিকাল পর্যন্ত সময় নেয়ার সুযোগ নেই।’
রাজনৈতিক দলগুলো বলছে, একমাত্র সুষ্ঠু নির্বাচনই পারে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র রুখতে। ১৬ই ডিসেম্বর ঘোষণা দেয়া নির্বাচনী রোডম্যাপ যেন সান্ত্বনার বাণী না হয়। এতে অন্তর্বর্তী সরকারের সকল ভালো কার্যক্রমও প্রশ্নবিদ্ধ হবে।