অস্থির ওষুধের বাজার, দাম বেড়েছে ১১০ শতাংশ
- আপডেট সময় : ১২:০৯:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪
- / ৩৭৭ বার পড়া হয়েছে
তিন মাসে কোনো কোনো ওষুধের দাম বেড়েছে ১১০ শতাংশ পর্যন্ত। কোম্পানিগুলো দাম বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে বলছে, ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে ডলার সংকট। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা সরকারের উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং সাবেক এমপি নাজমুল হাসান পাপনের একচেটিয়া আধিপত্যে পরিবর্তন করা হয় ওষুধ নিয়ন্ত্রণ আইন। যেখানে প্রাইমারি হেলথ কেয়ারের ১১৭টি জেনেরিক ওষুধের দাম সরকারের হাতে রেখে বাকিগুলো চলে যায় কোম্পানির কাছে।
ওষুধের দর নিয়ে এই কথোপকথন প্রতিবেদক ও ওষুধ বিক্রয় কর্মীর। ছদ্মবেশে রোগীর স্বজন সেজে কোম্পানি প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন প্রতিবেদক। তারা বলছেন- এমআরপি যাই থাকুক দাম পড়বে ৭শ টকা। তাহলে প্রশ্ন- কত শতাংশ লাভে নির্ধারণ হচ্ছে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য?
সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, জীবন রক্ষাকারী অর্ধশতাধিক ওষুধের দামও বাড়তি। কোনো কোনো ওষুধের দাম বেড়েছে ১১০ শতাংশ পর্যন্তও, গড়ে যা বৃদ্ধির হার ২৯।
খোদ ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরেরই অভিযোগ- কোম্পানিগুলো বাজারে আগে দাম বাড়িয়ে, পরে অনুমোদনের জন্য আবেদন করে। যদিও এ নিয়ে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি কেউ।
তবে ওষুধ উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো বলছে, জ্বালানি তেল ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে কিছু ওষুধের দাম সমন্বয় করা হয়েছে।
ইউনিমেইড ইউনিহেলথ ফার্মাসিটিক্যালসের সহকারী মহাব্যবস্থাপক ড. মো. আবু জাফর সাদেক বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম হু হু করে বাড়ছে, বিভিন্ন নিয়ম নীতি পরিবর্তন হচ্ছে। এটার যে প্যাকেজিং ম্যাটারিয়াল সেটার দাম বাড়ছে। অভ্যন্তরীণ পরিচালনা ব্যয় সেটা কিন্তু অনেক বেড়েছে।’
বাজার ঘুরে দেখা যায়- কোম্পানিভেদে ওষুধের দামেও বিস্তর ফারাক। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক ওষুধ কোম্পানিগুলোর দরের তুলনায় বাংলাদেশে সেইসব ওষুধগুলো দাম বেশি। প্রশ্ন জাগে, দামে কেন এত তারতম্য?
ইবনে সিনা ফার্মাসিটিক্যাল লিমিটেডের পরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহ মো. বুলবুল ইসলাম বলেন, ‘যারা বিনিয়োগ করেছেন তারা সবসময় লাভের দিক টা হিসেব করেন। ইবনে সিনা কিন্তু ট্রাস্ট পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। ট্রাস্টের পরিচালনায় যেটা হয় লাভের কথা থাকে না।’
দেশে ওষুধের বাজার ৩৫ হাজার কোটি টাকার। কোম্পানিগুলো ৪ হাজার ১৮০ জেনেটিকের ৩৫ হাজার ২৯০টি ব্র্যান্ডের ওষুধ উৎপাদন করে।
অভিযোগ আছে, আওয়ামী লীগের শেষ আমলে সালমান এফ রহমানের কোম্পানি বেক্সিমকোর চাপে ওষুধ নিয়ন্ত্রণ আইন পরিবর্তন করে। এতে প্রাইমারি হেলথ কেয়ারের ১১৭টি জেনেরিক ওষুধের দাম সরকারের হাতে রেখে বাকিগুলো চলে যায় কোম্পানির কাছে।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সাবেক উপপরিচালক নুরুল আলম বলেন, ‘২০২৩ এ কার্যকর হয়েছিল। শুধু কসমেটিক্স আইনের ৩০ এর ১ এবং ২ ধারায়। গেজেটে প্রকাশিত ওষুধ ছাড়া বাকি সকল ওষুধ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা ওষুধ প্রশাসনের হাতে নেই।’
স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিগত কোনো রাজনৈতিক সরকারই সাধারণ মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করে ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণে কাজ করেনি।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, ‘সবগুলোর আলাপ না করে আড়াইশো থেকে তিনশো ওষুধের জন্য এ বিষয়টা নির্দিষ্ট করলেই কিন্তু ৮০ ভাগ মানুষের রোগব্যাধির চিকিৎসা করা সম্ভব।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোম্পানিগুলোর মার্কেটিং এর অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ হলে কমবে ঔষধের দাম।