প্রতি বছর ২৬ লাখ মায়ের অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ থেকে প্রায় ১৬ লাখ গর্ভপাত হচ্ছে। এসব গর্ভপাতের তালিকায় ১০ বছর বয়সী কিশোরীরাও রয়েছে। তবে বয়স যাই হোক, ভুল প্রক্রিয়ায় গর্ভপাত করতে গিয়ে শারীরিক নানা জটিলতার পাশাপাশি অনেক সময়ে মৃত্যুরও শিকার হচ্ছেন নারীরা। জীবন রক্ষার কারণ ছাড়া ১২ সপ্তাহের পরে যে কোন মূল্যে গর্ভপাত বন্ধের আহ্বান চিকিৎসকদের। পাশাপাশি পরিকল্পিত গর্ভধারণ ও দরকারি গর্ভপাতের ক্ষেত্রে হাসপাতালে যাবার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
দেশে গর্ভপাত বেআইনি। তাই যারা অনাকাঙ্ক্ষিত ভ্রূণ নষ্ট করতে চান তাদের একটি বড় অংশ অদক্ষ হাতে বা নিজে নিজে ওষুধ সেবনের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করান। আর এতেই ঘটে যায় বিপত্তি। অনিরাপদ গর্ভপাত দেশে মার্তৃমৃত্যু হার বাড়াচ্ছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অবস অ্যান্ড গাইনি বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. সেহেরিন এফ সিদ্দিকা বলেন, ‘হাসপাতালে এমআর করার জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স ও ডাক্তার রয়েছে সেখানে করবে। সে যেন ঘরে নিজে নিজে না করে।’
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা গাটমাকার ইনস্টিটিউট এর তথ্যে, দেশে প্রতিবছর গড়ে ৫৩ লাখ ৩০ হাজার গর্ভধারণ হয় এর মধ্যে ২৬ লাখ ৩০ হাজারই অনাকাঙ্ক্ষিত। যে কারণে প্রায় ১৬ লাখ গর্ভপাতের ঘটনা ঘটে প্রতিবছর। অথচ দেশের সকল সরকারি হাসপাতালে এমআর সার্ভিস নামে বিজ্ঞানসম্মতভাবে গর্ভপাত করানো হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আরএইচস্টেপ কাউন্সেলর কাজী হাসনা সুলতানা বলেন, ‘এমআরএম না ডিএনসি প্যাক হবে। সেই পদ্ধতিগুলো কী? কীভাবে তা করে থাকি সেগুলো ডিটেইলস বলা হয়ে থাকে।’
তবে এসভিআরএস ২০২৩ এর তথ্য মতে, গর্ভপাত করা মায়েদের বয়স ১০ থেকে ৪৯ বছর পর্যন্ত। এক্ষেত্রে ১৪ ও ৪৫ বছর বয়সী মায়েদের মধ্যে মেয়ে ভ্রূণ নষ্টের প্রবণতা বেশি। এই বয়সে গর্ভপাত করা ভ্রূণের প্রায় ৯ শতাংশ ছেলে ও ১৪ শতাংশ মেয়ে শিশুর। তবে সেক্ষেত্রে আলট্রাসনোগ্রামে ছেলে মেয়ের লিঙ্গ প্রকাশ না করার আহ্বান বিশেষজ্ঞদের। তবে গর্ভের ১২ সপ্তাহের পর কোনোভাবেই ভ্রূণ অপসারণ না করার অনুরোধ চিকিৎসকদের।
মায়ের জীবন রক্ষার প্রয়োজন ছাড়া গর্ভপাত করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যদিও এটি খাতা কলমেই বিদ্যমান। তবে কারণ যাই হোক, অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভপাত কমাতে না পারলে নারীর শারীরিক জটিলতা বা কোন কোন ক্ষেত্রে মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব নয় বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
তিন সন্তানের জন্মের পর গর্ভে নতুন সন্তানের আগমনে মোটেও খুশি নন এই নারী। ভ্রূণ অপসারণে ওষুধের দোকানির পরামর্শে খেয়েছেন মাসিক নিয়মিত করবার কীট। মাস পেরোলেও বন্ধ হয়নি রক্তক্ষরণ। সমস্যা সমাধানে বাধ্য হয়ে এসেছেন মোহাম্মদপুর ফার্টিলিটি সেন্টারে।
নারী বলেন, ‘এমএম কীট আমি খেয়েছিলাম। আমার ব্লাড হচ্ছিল হওয়ার পরে আরকি পরোটা ক্লিয়ার হয়নি। এখন আমি বুঝতে পারছি আমার তো সমস্যাটা রয়েই গেছে।’