সর্বশেষ ১১ ম্যাচেই জয় পাওয়া আতলেতিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে শনিবার মাঠে নেমেছিল কাতালান ক্লাবটি। সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনায় ম্যাচে এগিয়ে ছিল দিয়েগো সিমিওনের দলই। কিন্তু একটা পরিসংখ্যান আত্মবিশ্বাস যোগাচ্ছিল বার্সা সমর্থকদের। লিগে ঘরের মাঠে আতলেতিকোর বিপক্ষে ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারির পর কখনো হারেনি বার্সা (৫ ড্র, ১৩ জয়)।
তবে বার্সার এ অহংকার গতকাল শেষ করে দিয়েছে আতলেতিকো। দীর্ঘ ১৮ বছর পর বার্সাকে ঘরের মাঠে লিগে হারিয়েছে সিমিওনের দল। ঘরের মাঠে লিগে আতলেতিকোর বিপক্ষে এর আগে যখন শেষবার হেরেছিল, তখন জন্মই হয়নি বার্সার তরুণ তারকা লামিন ইয়ামাল-কুবারসরিদের। চোটের কারণে গতকালের ম্যাচটা অবশ্য খেলতে পারেননি ইয়ামাল। তবে দলের হার দেখেছেন গ্যালারি থেকে।
গতকাল আতলেতিকোর জয়টা এসেছে চরম নাটকীয়তায়। নির্ধারিত ৯০ মিনিট পেরিয়ে যাওয়ার পরও দুদলের স্কোরলাইন ছিল ১-১। ম্যাচটা যে ড্র হতে যাচ্ছে, এটাই হয়তো ভেবেছিল সবাই। তবে নাটকীয়তার যে তখনও বাকি। যোগ করা সময়ের ৬ষ্ঠ মিনিটে বার্সার জালে বল জড়ান আলেক্সান্দার সরলথ। ২-১ গোলের জয়ে বার্সাকে টপকে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থানও দখল করেছে আতলেতিকো। অথচ নভেম্বরের শুরুতেও বার্সার চেয়ে ১০ পয়েন্ট পিছিয়ে ছিল আতলেতিকো মাদ্রিদ। সেই দলটিই কিনা বছর শেষ করল কাতালান ক্লাবটির চেয়ে ৩ পয়েন্ট এগিয়ে থেকে।
বার্সার গতকালের হারে বার্সা সমর্থকদের পর সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছে বোধহয় রেয়াল মাদ্রিদের সমর্থকেরা। সেটা কীভাবে? গতকালের জয়ে ১৮ ম্যাচে ৪১ পয়েন্ট নিয়ে সবার লিগে এক নম্বরে উঠেছে আতলেতিকো। এক ম্যাচ বেশি খেলা বার্সা ৩৮ পয়েন্ট নিয়ে নেমে গেছে দ্বিতীয় স্থানে। আর ১৭ ম্যাচে ৩৭ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তৃতীয় স্থানে রেয়াল মাদ্রিদ।
গতকাল বার্সা-আতলেতিকো ম্যাচটা ড্র হলে দুদলেরই পয়েন্ট হতো সমান ৩৯। তখন হাতে থাকা নিজেদের পরের ম্যাচটা জিতলেই শীর্ষে উঠে যেত কার্লো আনচেলত্তির দল। কিন্তু আতলেতিকো জিতে যাওয়ায় আপাতত শীর্ষে ওঠা হচ্ছে না রেয়াল মাদ্রিদের।
ঘরের মাঠ অলিম্পিক লুইস কোম্পানি স্টেডিয়ামে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ বার্সার হাতেই ছিল। ম্যাচের শুরু থেকে আতলেতিকোর রক্ষণে আক্রমণের ঝড় তোলেন রবের্ত লেভানদফস্কি-রাফিনিয়া-পেদ্রিরা। এর ফলও পেয়েছিল হানসি ফ্লিকের দল। ম্যাচের ৩০ মিনিটে পেদ্রির গোলে এগিয়ে গিয়েছিল বার্সা।
তবে দ্বিতীয়ার্ধে সমতায় ফেলে আতলেতিকো। ম্যাচের ৬০ মিনিটে দারুণ এক প্রতি-আক্রমণে বাম প্রান্ত থেকে বক্সের ভেতর পাস দিয়েছিলেন হুলিয়ান আলভারেস। সেটা ক্লিয়ার করতে গিয়ে ব্যর্থ হন বার্সা ডিফেন্ডার মার্ক কাসাদো। বল যায় রদ্রিগো দে পলের সামনে। বক্সের বাইরে থেকে দারুণ এক শটে বার্সার জালে বল জড়ান আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার।
ম্যাচ সমতায় থাকলেও গোল পেতে মরিয়া বার্সা একের পর এক আক্রমণ চালাতে থাকে। অন্যদিকে আতলেতিকোর কৌশল দেখে মনে হয়েছিল, তারা বোধহয় ড্র করার জন্যই খেলতেছে। কিন্তু কে জানে, শেষ মুহূর্তে চিত্রনাট্য পাল্টে দেবে সিমিওনের দল। যোগ করা সময়ের শেষ মুহূর্তে বার্সার জালে বল জড়িয়ে আতলেতিকোর জয় নিশ্চিত করেন বদলি নামা সরলথ।
এ হার যেন কোনোভাবেই মানতে পারছেন না ফ্লিক। ম্যাচ শেষে বার্সা কোচ বলেছেন, ‘এ হারে আমরা সবাই হতাশ। কারণ আমরা দুর্দান্ত খেলেছিলাম।’ তবে এমন বাজে সময় দ্রুতই কাটবে বার্সার, এমনটা মনে করেন ফ্লিক, ‘ম্যাচ শেষে বার্সা কোচ হানসি ফ্লিক বলেছেন, ‘এখন (শীতকালীন) বিরতি শুরু হচ্ছে। আমার মনে হয়, এ বিরতিটা সবারই দরকার ছিল। বিরতির পর দেখাব, আমরা কতটা শক্তিশালী।’