প্রিন্ট এর তারিখঃ ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪, ১২:৫২ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪, ৪:৩৫ পি.এম
অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, রাজধানীর পিলখানায় ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে।
আজ সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর পিলখানায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদর দপ্তরে বিজিবি দিবস উপলক্ষে পদক প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
রাষ্ট্রীয় শোক পালনের অংশ হিসেবে আজ সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) বিজিবিতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয় এবং বিজিবি দিবসের অনুষ্ঠানে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
এই অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সীমান্তের প্রতিটি ইঞ্চি রক্ষা ও চোরাচালান বন্ধ করতে বিজিবি সদস্যদের হতে হবে দৃঢ় ও নির্ভীক।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা বলেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ২২৯ বছরের ঐতিহ্যবাহী সীমান্তরক্ষী বাহিনী। সীমান্ত রক্ষাসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা প্রদান, বিভিন্ন দুর্ঘটনা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলাসহ দেশগঠনমূলক বিভিন্ন কাজে বিজিবির ভূমিকা ও পেশাদারত্ব প্রশংসার দাবিদার।
এসময় তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজিবির (সাবেক বিডিআর) সাহসী ও গৌরবময় ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এ বাহিনীর প্রায় ১২ হাজার বাঙালি সদস্য মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তাঁদের মধ্যে ২ জন বীরশ্রেষ্ঠ, ৮ জন বীর উত্তম, ৩২ জন বীর বিক্রম এবং ৭৭ জন বীর প্রতীকসহ সর্বমোট ৮১৭ জন সদস্য মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন। তিনি এসময় মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁদের গভীর আত্মত্যাগের কথা অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় সাত সদস্যের তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে। গতকাল রোববার (২২ ডিসেম্বর) রাতে প্রধান উপদেষ্টা এতে সই করে দিয়েছেন।
এ সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে জানিয়ে অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ীই তাকে ফেরানো যাবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘নতুন করে রোহিঙ্গাদের কোনো অবস্থাতেই প্রবেশ করতে দেবো না। যারা অসুস্থ, শুধু তারাই মানবিক দিক বিবেচনায় আশ্রয় পাচ্ছেন।’
মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘পররাষ্ট্র উপদেষ্টা দুই মাসের মধ্যে ৬০ হাজার রোহিঙ্গা প্রবেশের যে কথা বলেছেন, সেটা স্লিপ অব টাং। দুই মাসে নয়, গত দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যে ৬০ হাজার রোহিঙ্গা নাগরিক প্রবেশ করেছে।’
এ সময় কুমিল্লায় মুক্তিযোদ্ধাকে হেনস্থাকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে বলেও জানান মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘যারা মুক্তিযোদ্ধাদের হেনস্তা করছে, তাদের আইনের আওতায় অবশ্যই নিয়ে আসব।’
বিজিবি দিবস উদযাপন উপলক্ষে আজ সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বিজিবি সদর দপ্তরে রেজিমেন্টাল পতাকা উত্তোলন করেন এবং সকাল ৬টা ৫০ ঘটিকায় মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পিলখানার ‘সীমান্ত গৌরব’-এ পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে আজ সকাল ১১টায় পিলখানার বিজিবি সদর দপ্তরে বিজিবিতে বিগত বছরে কৃতিত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পদক প্রদান এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা/উত্তরাধিকার ও তাদের পরিবারের লোকজনকে সংবর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব:), স্বরাষ্ট্র ও কৃষি মন্ত্রণালয় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিজিবিতে কৃতিত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পদকপ্রাপ্ত ৩৩ জনকে পদক পরিয়ে দেন।
উল্লেখ্য, এ বছর ১২ জনকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ পদক (বিজিবিএম), ২৪ জনকে রাষ্ট্রপতি বর্ডার গার্ড পদক (পিবিজিএম), ১২ জনকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ পদক-সেবা (বিজিবিএমএস) এবং ২৪ জনকে রাষ্ট্রপতি বর্ডার গার্ড পদক-সেবা (পিবিজিএমএস) সহ সর্বমোট ৭২ জন বিজিবি সদস্যকে বিভিন্ন পদকে ভূষিত করা হয়।
অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক বিশেষ সহকারী মোঃ খোদা বখস চৌধুরী, বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব (চলতি দায়িত্ব) ড. নাসিম আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
পদক প্রদান শেষে মাননীয় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বিজিবি'র খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারকে সংবর্ধনা ও উপহার সামগ্রী প্রদান করেন এবং ভবিষ্যতেও বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারবর্গের পাশে থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেন।
অনুষ্ঠানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাননীয় উপদেষ্টারা, বিশেষ সহকারীরা, তিন বাহিনী প্রধান, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সমন্বয়করা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা, উচ্চ পদস্থ সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তারা এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত ২০ ডিসেম্বর বিজিবি দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে দেশের স্বনামধন্য জাতীয় পত্রিকায় বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয় এবং জুম্মার নামাজের পর বিজিবির উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি ও শান্তি কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়।
বিজিবি দিবস উদযাপন উপলক্ষে পিলখানা ছাড়াও বিজিবি’র সকল রিজিয়ন, প্রতিষ্ঠান, সেক্টর ও ইউনিট পর্যায়ে রেজিমেন্টাল পতাকা উত্তোলন, বিশেষ দোয়া ও প্রীতিভোজের আয়োজন করা হয়।