অর্থনীতিকে পঙ্গু করে গেছে ফ্যাসিস্ট সরকার
- আপডেট সময় : ০৩:৪৭:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
- / ৩৪৮ বার পড়া হয়েছে
২০২৪ সালের পুরোটা সময় নানা সংকটের মধ্য দিয়ে গেছে দেশের অর্থনীতি। উচ্চ মূল্যস্ফীতি, টাকার মান কমা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া, মার্কিন ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও ডলার সংকট প্রকট আকার ধারণ করে।
দেশে ফ্যাসিবাদি কায়েম হওয়ায় টাকা পাচার, ব্যাংক লুট সব মিলিয়ে দেশের মানুষ বিদায় করে দীর্ঘদিন মাথার উপর বসে থাকা স্বৈরশাসককে। নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের তৈরি করা বিভিন্ন কমিটির দুর্নীতি ও অনিয়মের নানা শ্বেতপত্রে চাঞ্চল্যকর ও উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে। অর্থনীতিবিদদের প্রত্যাশা বাস্তব ভিত্তিক পদক্ষেপ নিলে আগামীতে ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ।
কয়েক বছর ধরেই নানামুখী সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশের অর্থনীতি। গত দুই বছরে এ সংকট আরও গভীর হয়েছে। ডলারের তীব্র সংকট, ঋণের নামে ব্যাংক লুটপাট আর বিদেশে অর্থ পাচার অর্থনীতিতে রক্তক্ষরণের মাত্রা আরো জোরালো করে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে সাধারণ মানুষ রীতিমতো পিষ্ট হয়েছে।
২০২৪ সালের শুরুর দিকে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তাতে একতরফা ডামি নির্বাচন করে পতিত সরকার। প্রশ্নবিদ্ধ পরিসংখ্যানের মাধ্যমে অর্থনীতির একটি ভালো চেহারা দেখানোর চেষ্টা করে আওয়ামী লীগ সরকার। তাতে জনজীবনে স্বস্তি আনতে পারেনি তারা। শেষ পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারের কাঁধে সাড়ে ১৮ লাখ কোটি টাকার ঋণ রেখে জনতার রোষানলে বিদায় নিতে হয় শেখ হাসিনার সরকারকে।
টানা ১৫ বছরের বেশি ক্ষমতায় থেকেও অর্থনীতির রক্তক্ষরণ বন্ধে আওয়ামী লীগ সরকার যেসব উদ্যোগ নিতে পারেনি, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার ৩০ দিনের মধ্যেই সেসব উদ্যোগ নিতে শুরু করেছে। অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্ব পরিবর্তনের মাধ্যমে সংস্কার ও পরিবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। বিশেষ করে আর্থিক খাতে এ বার্তা দেওয়া হয়েছে যে অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতাসীনদের ছত্রচ্ছায়ায় থেকে ব্যাংক দখল করে নামে-বেনামে ঋণ নেওয়ার দিন শেষ হয়েছে।
মূল্যস্ফীতি সাধারণভাবে সবার ওপর চাপ বাড়ায়। নতুন সরকার দায়িত্ব নেয়ার ৪ মাস পরেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। চলতি বছরের নভেম্বর মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশ। গত নভেম্বর মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশ। এটি গত সাড়ে ১৩ বছরের মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হার। এতে বছরজুড়েই দ্রব্যমূল্য ছিল উর্ধ্বগতি। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা হবে।
রপ্তানী আয়ে ছিলো না আশানুরুপ সফলতা। জুলাই-আগষ্ট বিল্পবের সময় তা আরো কমে যায়। ডলারের যোগানের আরেক উৎস রেমিট্যান্স প্রবাহেও ছিল অস্বস্তি। তবে অক্টোবর থেকে অনেকটা বাড়তে শুরু করে রপ্তানী আয়, রেমিট্যান্স প্রবাহেও ফিরে সুবাতাস। বাড়তে থাকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। দুর্বল ব্যাংকগুলোকেও টেনে তুলতে চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর মোট রিজার্ভ প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের রেখে যাওয়া অনেক ঋণ পরিশোধ করে হালকা হয়েছে দেশ।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ জানিয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি চাপে আছে। গণঅভ্যুত্থান, বন্যা ও সংকোচনমূলক নীতি গ্রহণের কারণে বছর শেষে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। তবে সময়মতো অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করায় ক্রমান্বয়ে অর্থনীতি স্বাভাবিক হচ্ছে।
অর্থনীতিবিদের মতে, ধসে পড়া অর্থনৈতিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে অন্তর্বর্তী সরকারের যে সময় দরকার তা এখনো পর্যাপ্ত নয়।
অর্থনীতির যে সংকোচন অবস্থা রয়েছে, সেখান থেকে ঘুড়ে দাঁড়ানোটাই হবে আগামী ২০২৫ সালের জন্য চ্যালেঞ্জ । এতো কিছুর পড়েও বছরজুড়ে সুখবর ছিল কৃষিখাতে, বেড়েছে উৎপাদন।