সাবেক হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়াকে হত্যার পাঁচ মাস পর দায় স্বীকার করলো ইসরাইল। নেতানিয়াহু প্রশাসনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুথিদের নিশ্চিহ্ন করে হুঁশিয়ারি দিলেও হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইয়েমেনের সশস্ত্র এ গোষ্ঠীটি। যদিও নেতানিয়াহু বলছেন, জিম্মিদের বিষয়ে কার্যকর আলোচনা হয়েছে। এদিকে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল থেকে কয়েক হাজার সামরিক অস্ত্র জব্দের দাবি করেছে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী।
টানা প্রায় ১৫ মাসের যুদ্ধে গাজা উপত্যকাকে রীতিমতো ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। গতকাল (সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর) একদিনেই তাদের হামলায় প্রাণ গেছে অর্ধশতাধিক ফিলিস্তিনির।
এ নিয়ে ফিলিস্তিনে নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৪৫ হাজার ৩০০। ১৭টি ট্যাংক, বুলডোজার ও সামরিক যান নিয়ে নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর বর্বর হামলা চালায় ইসরাইলি সেনারা। শুধু তাই নয়, তাদের হামলায় প্রাণ গেছে গাজার নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্রগোষ্ঠী হামাসের বহু শীর্ষ নেতার।
এরমধ্যেই সাবেক হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়াকে হত্যার প্রায় পাঁচ মাস প্রথমবারের মতো এর দায় স্বীকার করলো তেল আবিব। ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী এক বিবৃতিতে জানান, হামাস ও হিজবুল্লাহকে পরাজিত করেছে ইসরাইল। হানিয়ার মতো বাকি নেতাদেরও একই অবস্থা হবে। এ সময় হুথিদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেন, ‘হামাস, হিজবুল্লাহর মতো করুণ পরিণতি অপেক্ষা করছে হুথি বিদ্রোহীদের জন্য। ইরানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকেও অন্ধ করে দিয়েছে ইসরাইল। হুথিরা ইসরাইলি ভূখণ্ডে হামলার পরিকল্পনা করলে এর পরিণতি হবে ভয়াবহ। কৌশলগত অবকাঠামো ধ্বংস করে তাদের নেতাদের শিরশ্ছেদ করা হবে।’
এদিকে হুথি গোষ্ঠীর দাবি, ইসরাইলের সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে দুটি সফল ড্রোন হামলা চালিয়েছে তারা। যা দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর আশকেলন এবং তেল আবিবে আঘাত করে।
হুথির সামরিক মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারা বলেন, ‘গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া হুথি বিদ্রোহীরা আক্রমণ চালিয়ে যাবে। ইয়েমেনসহ মুসলমানদের রক্ষায় ইসরাইলকে প্রতিহত করা হবে। গাজা যুদ্ধের অবসান না হলে ইসরাইলিদের বিরুদ্ধেও হামলা বন্ধ হবে না তাদের।’
এমন অবস্থায় ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু জানান, জিম্মিদের মুক্ত করার বিষয়ে হামাসের সঙ্গে আলোচনার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। পার্লামেন্টে বক্তৃতায় তিনি বলেন, ইসরাইলের অর্থনীতি শক্তিশালী হয়েছে এবং বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘বন্দিদের মুক্ত করে আনার বিষয়ে আলোচনায় কার্যকর অগ্রগতি হয়েছে। তবে কতদিন সময় লাগবে তা জানি না। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা ইসরাইলকে শত্রুমুক্ত করতে না পারবো এবং জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে না পারবো ততদিন আমাদের অভিযান চলবে। যেকোনও উপায়ে আমরা তাদের মুক্ত করবো।’
এই যখন অবস্থা তখন, ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর দাবি, দক্ষিণ লেবানন থেকে শত শত সামরিক অস্ত্র জব্দ করেছে তারা। তাদের ধারণা এসব অস্ত্র ইরান ও সিরিয়া হয়ে হিজবুল্লাহর কাছে এসেছিল। এগুলোর মধ্যে কিছু অস্ত্র রাশিয়া ও চীন থেকেও এসেছে।
আইডিএফ আন্তর্জাতিক মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাদভ শোশানি বলেন, ‘স্থল ও আকাশ পথে হিজবুল্লাহর হামলা চালানোর সক্ষমতার প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ প্রতিরোধ ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে ইসরাইল। এখানে যেসব অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে, তা খুব ছোট একটি অংশ। ইসরাইল ভূখণ্ড থেকে ১ বা ২ কিলোমিটারের মধ্যে রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের পরিকল্পনা করেছিল হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী।’
এদিকে গাজা উপত্যকায় ২৫ বছরের মধ্যে গেল আগস্টে প্রথমবারের মতো পোলিও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। এখন পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ লাখের বেশি শিশুকে পোলিও ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।