ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে যাওয়াই দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে সরিষা চাষ। অল্প সময়ে ও কম খরচে অধিক মুনাফা হওয়ায় অনেক মেহেরপুরের চাষীরা সরিষা চাষের দিকে ঝুঁকেছেন। ভোজ্য তেলের পাশাপাশি সরিষার খৈল গো খাদ্য হিসেবে বেশ পুষ্টিকর। এর পাশাপাশি সরিষার কাঠি জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। চলিত মৌসুমে জেলায় প্রায় ৭ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হচ্ছে।
হলুদ সাজে সেজেছে প্রকৃতি। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে হলুদের সমারোহ। প্রকৃতি সেজেছে হলুদ বর্ণের অপরূপ সাজে। চলিত মৌসুমে মেহেরপুর জেলার তিন উপজেলার বিভিন্ন মাঠে এমন দৃশ্য। এ বছর ভালো ফলনে কৃষকদের মুখেও হাসি।
আমন ধান কাটার পর সেই জমিতে কোন প্রকার সার ও সেচ ছাড়াই সরিষা আবাদ করা যায়। তাই ধান কেটে অনেকেই সরিষার আবাদ করছে। মাত্র ৭০ থেকে ৭৫ দিনের মধ্যে সরিষা হারভেস্ট করে ফসল ঘরে তোলা যায়।
প্রতি বিঘা সরিষায় খরচ হয় মাত্র চার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় ফলন হয় পাঁচ থেকে ছয় মন করে সরিষা। বর্তমানে প্রতি মন সরিষার দাম ৪ হাজার টাকা করে। সে হিসেবে প্রতি বিঘায় ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা লাভ করতে পারে চাষিরা।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব মতে, চলিত মৌসুমে জেলার তিন উপজেলায় মোট ৬ হাজার ৯শ ৩৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে।
প্রতি হেক্টরে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১.৪৪ টন করে। সেই হিসেবে জেলায় এবার মোট ৯ হাজার ৬শ ৮৬ টন সরিষা উৎপাদন হবে। প্রতি টন সরিষার বর্তমান বাজার মূল্য ১লাখ ১০ হাজার টাকা।
সে হিসেবে চলিত মৌসুমে মেহেরপুর জেলায় ৭৬ কোটি ২৮ লাখ ৫০ হাজার টাকার সরিষা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
মেহেরপুর সদরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জাকারিয়া পারভেজ বলেন, ‘এখন জাব পোকার খুব আনাগোনা হচ্ছে। জাব দমনের জন্য ম্যারাথন গ্রুপের ওষুধ, কীটনাশন প্রতি লিটার পানিতে দুই মিলি লিটার মিশিয়ে দশ দিন পর পর দুইবার স্প্রে করতে হবে।’
ভোজ্যতেলের বিকল্প হিসেবে সরিষা চাষ করতে চাষীদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এ চাষ আরো বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছেন জেলার কৃষি বিভাগ।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিজয় কৃঞ্চ হালদার বলেন, ‘নিজে তেল উৎপন্ন করবো, নিজের তেল নিজে খাব, এ স্লোগান রেখে আমরা চাষীদের উদ্বুদ্ধ করছি। গত দুই বছরে সরিষায় আমা দের মোটামোটি একটা রেভোলিউশন হয়েছে।’
সরিষা চাষ বাড়াতে পারলে সয়াবিনের আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে সরিষা রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করাও সম্ভব।