কিছু দিন আগেও বাজারে সবজির দাম ছিল চড়া। তবে এখন সেই অবস্থা থেকে শীতের ছোঁয়ায় কিছুটা শীতল হয়েছে সবজির বাজার। মৌসুম না হওয়ায় দুই একটি সবজির বাড়তি দাম যাচ্ছে এখনো। বাকি সব ধরনের সবজির দাম কমেছে। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। আজকের বাজারে এটি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৯০ থেকে ২০০ টাকা। তবে অন্যান্য মুরগি ও গরু-খাশির দাম অনেকটা স্থিতিশীল অবস্থাতেই আছে।
শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে সবজির দামের এমন চিত্র দেখা গেছে।
এসব বাজারে নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা দরে। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা কেজি দরে। পুরাতন আলু ৬০ টাকা, বগুড়ার আলু ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ১০ টাকা কমে ১১০ টাকা, মুড়ি পেঁয়াজ ৬০ টাকা, পাতা পেঁয়াজ ৫০ টাকা, ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। এসব বাজারে আদা ১০০ থেকে ২৮০ টাকা, রসুন ২২০ থেকে ২৪০ টাকা, দেশি মশুর ডাল ১৪০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা, মিনিকেট চাল ৭৬ থেকে ৮০ টাকা এবং নাজিরশাইল চাল ৭৫ থেকে ৮২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
আজকের বাজারে প্রতি পিস ফুল কপি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা, বাঁধা কপির পিসও ৩০ টাকা, গাজর প্রতি কেজি ৫০ টাকা, লম্বা বেগুন ৫০ টাকা, গোল বেগুন ৬০ টাকা, শালগম ৩০ টাকা, পেঁপের কেজি ৪০ টাকা, পাকা টমেটো ৬০ টাকা, কাঁচা টমেটোর কেজি ৪০ টাকা, মুলা প্রতি কেজি ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া পটল প্রতি কেজি ৬০ টাকা, পেঁয়াজের ফুল প্রতি আঁটি ১০ টাকা, বরবটি প্রতি কেজি ১০০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, শসা ৬০ টাকা, শিম (বিচিওয়ালা) প্রতি কেজি ৬০ টাকা, শিম (সাধারণ) কেজি ৪০ টাকা, কাঁচামরিচ ৮০ টাকা, নতুন আলু ৫০ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর মহাখালী বাজারে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বাজার করতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, আজকে বাজারে অন্যান্য জিনিসের তুলনায় সবজির দাম কিছুটা কম দেখতে পেলাম। দুই সপ্তাহ আগেও যেসব সবজির দাম বেশি ছিল সেই সবজিগুলোর দাম এখন কিছুটা কমেছে।
সবজির দামের বিষয়ে মালিবাগ বাজারের সবজি বিক্রেতা শহিদুল ইসলাম বলেন, মোটামুটি সব সবজির দামই আগের চেয়ে কমেছে। বরবটি, পটল, করলার এখন মৌসুম না হওয়ায় এগুলো ৬০ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। বাকি সব সবজির দাম আগের চেয়ে অনেক কম। কম দামে সবজি কিনে ক্রেতারা স্বস্তি পাচ্ছেন, আমাদের বিক্রির পরিমাণও আগের চেয়ে বেড়েছে।
কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা আলমগীর হোসেন বলেন, রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে সবজির যে দাম চলছে তার চেয়েও আরও কম দাম কারওয়ান বাজারে। এখান থেকে খুচরা ব্যবসায়ীরা কিনে সেটা পরিবহন খরচ, দোকান খরচ, লেবার খরচ ধরে পরে নতুন করে সবজির দাম নির্ধারণ করছে। যে কারণে তুলনামূলক কিছুটা বেশি দাম রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে।
তিনি আরও বলেন, শীতের প্রভাব পড়েছে সবজির বাজারে। যে কারণে দাম কমেছে। কিছু কিছু সবজির দাম কয়েকদিন পর আরও কমবে। নতুন সবজি যত পরিমাণে উঠতে থাকবে দাম তত কমবে।
রাজধানীর এসব বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহ ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এসব বাজারে সোনালি কক ৩২০ টাকা, সোনালি হাইব্রিড ২৯০ টাকা, দেশি মুরগি ৫২০ টাকা, লেয়ার লাল মুরগি ৩০০ টাকা এবং সাদা লেয়ার ২৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারগুলোতে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকায়, হাঁসের ডিম ২৩০ টাকায়, দেশি মুরগির ডিমের হালি ৯০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
মাহমুদা খানম নামে এক ক্রেতা বলেন, বাজারে এমনিতেই সব জিনিসের দাম বেশি। এরমধ্যে নতুন করে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে। মাছের দামও গত সপ্তাহের তুলনায় বাড়তি মনে হলো। যার যখন ইচ্ছে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। কারণ বাজারে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। কেউ বাজার মনিটরিং করে বলে মনে হয় না।
বাজার করতে আসা আরিফুল ইসলাম নামে আরেক বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় আজকের বাজারে মুরগি দামটা একটু বেশি। আজকে ব্রয়লার কিনতে হয়েছে ২১০ টাকায়।
মুরগির মাংস বিক্রেতা মনসুর আলী বলেন, বাজারে মুরগির চাহিদা সবসময়ই বেশি থাকে। সে তুলনায় দামটা কমই বলা যায়। তবে গত সপ্তাহের তুলনায় ব্রয়লারের দামটা কিছুটা বেড়েছে। সম্ভবত শীতের কারণে বেড়েছে। এই সময়ে শীতে কিছু মুরগি মরে যায় এবং রোগবালাইও বেশি হয়। যে কারণে খামারি পর্যায়েই বেশি দামে কিনে আনতে হয়। তবুও আলহামদুলিল্লাহ, ভালো বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে, বাজারগুলোতে চলতি সপ্তাহে মাছের দাম কিছুটা কমেছে। সব ধরনের মাছের দাম কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে। এসব বাজারে ৫০০ গ্রামের ইলিশ ১০০০ টাকা, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রামের ১৫৫০ টাকা, এক কেজি ওজনের ১৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারগুলোতে এক কেজি শিং মাছ চাষের (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায়, প্রতি কেজি রুই মাছের দাম বেড়ে (আকারভেদে) ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায়, দেশি মাগুর মাছ ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা , মৃগেল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়, চাষের পাঙ্গাস ২০০ থেকে ২২০ টাকায়, চিংড়ি প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ১১০০ টাকায়, বোয়ালমাছ প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায়, বড় কাতল ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায়, পোয়া মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়, পাবদা মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়, তেলাপিয়া ২২০ টাকায়, কৈ মাছ ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়, মলা ৫০০ টাকা, বাতাসি টেংরা ১৩০০ টাকায়, টেংরা মাছ ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি মাছ ৫০০ টাকায়, পাঁচমিশালি মাছ ২২০ টাকায়, রুপচাঁদা ১২০০ টাকা, বাইম মাছ ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা, দেশি কই ১২০০ টাকা, সোল মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, আইড় মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, বেলে মাছ ৮০০ টাকা, কুড়াল মাছ ৭০০ টাকা, কাজলি মাছ ৮০০ টাকা এবং কাইকলা মাছ ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে অস্থির ইলিশের বাজারও। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ২০০-৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২২৫০ টাকায়। এছাড়া দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ৩২০০ টাকা, ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ২ হাজার টাকা দরে, আর ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৪০০ টাকা ও ৩০০-৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের জন্য গুণতে হচ্ছে ৮০০-১০০০ টাকা পর্যন্ত।
বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত মাছ না আসায় দাম বাড়ছে। ইলিশের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতায় বাইরে চলে যাচ্ছে।
রাজধানীর কারওয়ানবাজারের ইলিশ বিক্রেতা মো. শুকুর আলী বলেন, ইলিশ কম ধরা পড়ছে। এতে বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বাড়ছে। দিন দিন ইলিশের দাম ভোক্তার নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। এতে কমছে বিক্রিও।
আজকের বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা পর্যন্ত। প্রতি কেজি খাসির মাংস ১০৫০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা ও ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১০০০ টাকা কেজি দরে। এছাড়াও প্রতি কেজি দেশি মুরগি ৬৫০-৭০০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৫০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায় এবং প্রতি কেজি সোনালী মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩২০ টাকায়।
তিনি বলেন, একটা সময় প্রতি সপ্তাহে একদিন গরুর মাংস খাওয়া হতো। এখন গরুর মাংসের জায়গা দখল করেছে মুরগির মাংস। গরুর মাংস এখন কিনতে গেলেও বারবার হিসাব করতে হয়। মুরগির দাম কম থাকাটা আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জন্য স্বস্তির জায়গা। তবে এর দামটা আরও কম হওয়া উচিত।
গরুর মাংস বিক্রেতা শান্ত ইসলাম বলেন, এখন খামারিরা গরু কম ছাড়ছে। সামনে ঈদকে কেন্দ্র করে তারা গরু তৈরি করছে। যে কারণে এখন যেগুলোও বিক্রি হচ্ছে দাম তুলনামূলক একটু বেশি দামে। তাই মাংসের বাজারেও তার প্রভাবটা পড়েছে। গরুর মাংস মোটামুটি ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকার মধ্যেই আটকে আছে। আর কমবে বলে মনে হয় না।