ঢাকা ০৮:১৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০১ জানুয়ারী ২০২৫, ১৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

২৪-এ ক্ষমতার মেরুকরণ দেখলো বিশ্ব

আর্ন্তজাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০১:১৪:৫৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / ৩৭৪ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ক্ষমতার মেরুকরণের বছর ছিলো ২০২৪। প্রতিটি দেশের ওপর ছড়ি ঘোরানো আমেরিকার মসনদে পরিবর্তন এসেছে এ বছরই। ব্রিটেনে ক্ষমতায় ফিরেছে চৌদ্দ বছর অপেক্ষায় থাকা লেবার পার্টি। ভারতের পার্লামেন্টে কমেছে মোদি সরকারের দাপট। আর বিদ্রোহের মুখে অর্ধশত বছরের ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়েছে সিরিয়ার আসাদ পরিবার। যার পুরো ফায়দা লুটছে ইসরাইল।

এ বছর আমেরিকা, ব্রিটেন ও ভারতের মত বিশ্বের ক্ষমতাশীল দেশগুলোর নির্বাচন হয়েছে। যেগুলোর বেশিরভাগেই পরাজিত হয়েছে শাসক দল। এছাড়া কোন কোন দেশে বিদ্রোহীদের তোপের মুখে গদি ছেড়ে সরকার প্রধানকে পালাতে হয়েছে প্রাণ ভয়ে।

বিশ্ব রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কথা বলতে গেলে প্রথমেই উঠে আসে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের কথা। যার ২৪ বছরের সাজানো সাম্রাজ্য কেড়ে নিতে ২৪ দিনও সময় নেয়নি বিদ্রোহীরা। বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়া-ইরানের আশীবার্দের হাত আসাদের উপর থেকে সরে যাওয়ায় এই লজ্জার পতন হয়েছে তার। যা আমেরিকা ও ইসরাইলের জন্য খুশির সংবাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মূলত সিরিয়া ব্যবহার করে ইসরাইলকে দমিয়ে রাখতো ইরান। আসাদ সরকারের পতনে সেই জায়গাটি এখন নড়বড়ে হয়ে গেলো তেহরানের। আর আসাদের পালানোকে ইরান ও রাশিয়ার ব্যর্থতা হিসেবে দেখছে বাইডেন প্রশাসন।

বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ আমেরিকারও ক্ষমতার পলাবদল হয়েছে এবছর। প্রেসিডেন্ট পদে বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছেন রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প। পাশাপাশি দুই কক্ষের পার্লামেটের প্রতিটিতেই ট্রাম্পের দলের কাছে বড় ব্যবধানে হেরেছে ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটরা। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলমান অস্থিরতার আগুনে ঘি ঢালা, বাইডেনের দলের আর তেমন কোন শক্তিই থাকছে না। বিপরীতে বিভিন্ন দেশে চলমান যুদ্ধ বন্ধে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প। কিন্তু ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন যে সুখকর হবে না তা ইতিমধ্যেই বুঝে গেছে অভিবাসীরা।

ইতিহাসের সবচেয়ে বড় পারাজয়ের লজ্জা নিয়ে এবছর ব্রিটেন শাসনভার ছাড়তে হয়েছে টানা ১৪ বছরের ক্ষমতায় থাকা কনজারভেটিভ পার্টিকে। ক্ষমতায় ফিরেছে লেবার পার্টি। ব্রিটেনবাসীর আশা ছিলো আগের সরকারের ব্যর্থতা ঢাকতে উদ্যমী হয়ে কাজ করবে কিয়ার স্টারমার প্রশাসন। কিন্তু বাস্তবে তারও হাটছে আগের সরকারের পথেই। যার কারণে মেয়াদ চার মাস পেরোনোর আগেই তাদের ওপর ভরসা হারাতে বসেছে ব্রিটেনবাসী। এরই মধ্যে আবারও সাধারণ নির্বাচনের চেয়ে এক পিটিশনে সই করেছেন যুক্তরাজ্যে কয়েক লাখ মানুষ।

এ বছর শ্রীলঙ্কার ক্ষমতাও গেছে নতুন নেতৃত্বের হাতে। গণঅভ্যুত্থানের মুখে প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশটিতে অনুষ্ঠিত প্রথম নির্বাচনে ক্ষমতা পেয়েছেন বামপন্থী অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে। আগের পার্লামেন্টে মাত্র তিন আসন পাওয়া এই দলনেতার ধারে টিকতেও পারেনি শ্রীলঙ্কার জনপ্রিয় দলগুলো।

ভারতেও এ বছর সাধারণ নির্বাচন হয়েছে। তবে সেখানে নেতৃত্বের পরিবর্তন না হলেও কিছুটা কমেছে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের শক্তি। কারণ এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় জোটগতভাবে সরকার গঠন করতে হয়েছে মোদিকে। ফলে গত দুই দশক দাপটের সাথে চলা মোদিকে অনেকটা তোয়াজ করেই চলতে হবে আগামী পাঁচ বছর। সেই সাথে পার্লামেন্টে বিরোধী দলনেতা হয়ে এসেছেন প্রতিদ্বন্দ্বি রাহুল গান্ধী। তিনি যে সহজে মোদিকে ইচ্ছামতো দেশ চালাতে দেবেন না, তা স্পষ্ট। এমনকি বিদেশ নীতিতে রাহুলের চাহিদাকে ও প্রাধান্য দিতে হবে মোদিকে।

এদিকে, নানা নাটকীয়তার পর পার্লামেন্টে ভোটাভুটির মাধ্যমে অভিশংসিত হয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল। হঠাৎ মার্শাল ল জারি করার উদ্যোগ নেয়ার পরই তার ওপর চোটে যান দেশটির সাধারণ মানুষ ও পার্লামেন্ট মেম্মাররা। সব মিলিয়ে বিশ্ব নেতৃত্বের এত পালাবদলে কি পরিবর্তন হতে যাচ্ছে তা দেখার অপেক্ষায় মুখিয়ে রয়েছে সবাই। তবে সকলের আশা, আগামীতে যাই ঘটুক না কেন বিশ্ববাসির জন্য যেন তা কল্যাণকরই হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

২৪-এ ক্ষমতার মেরুকরণ দেখলো বিশ্ব

আপডেট সময় : ০১:১৪:৫৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪

ক্ষমতার মেরুকরণের বছর ছিলো ২০২৪। প্রতিটি দেশের ওপর ছড়ি ঘোরানো আমেরিকার মসনদে পরিবর্তন এসেছে এ বছরই। ব্রিটেনে ক্ষমতায় ফিরেছে চৌদ্দ বছর অপেক্ষায় থাকা লেবার পার্টি। ভারতের পার্লামেন্টে কমেছে মোদি সরকারের দাপট। আর বিদ্রোহের মুখে অর্ধশত বছরের ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়েছে সিরিয়ার আসাদ পরিবার। যার পুরো ফায়দা লুটছে ইসরাইল।

এ বছর আমেরিকা, ব্রিটেন ও ভারতের মত বিশ্বের ক্ষমতাশীল দেশগুলোর নির্বাচন হয়েছে। যেগুলোর বেশিরভাগেই পরাজিত হয়েছে শাসক দল। এছাড়া কোন কোন দেশে বিদ্রোহীদের তোপের মুখে গদি ছেড়ে সরকার প্রধানকে পালাতে হয়েছে প্রাণ ভয়ে।

বিশ্ব রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কথা বলতে গেলে প্রথমেই উঠে আসে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের কথা। যার ২৪ বছরের সাজানো সাম্রাজ্য কেড়ে নিতে ২৪ দিনও সময় নেয়নি বিদ্রোহীরা। বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়া-ইরানের আশীবার্দের হাত আসাদের উপর থেকে সরে যাওয়ায় এই লজ্জার পতন হয়েছে তার। যা আমেরিকা ও ইসরাইলের জন্য খুশির সংবাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মূলত সিরিয়া ব্যবহার করে ইসরাইলকে দমিয়ে রাখতো ইরান। আসাদ সরকারের পতনে সেই জায়গাটি এখন নড়বড়ে হয়ে গেলো তেহরানের। আর আসাদের পালানোকে ইরান ও রাশিয়ার ব্যর্থতা হিসেবে দেখছে বাইডেন প্রশাসন।

বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ আমেরিকারও ক্ষমতার পলাবদল হয়েছে এবছর। প্রেসিডেন্ট পদে বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছেন রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প। পাশাপাশি দুই কক্ষের পার্লামেটের প্রতিটিতেই ট্রাম্পের দলের কাছে বড় ব্যবধানে হেরেছে ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটরা। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলমান অস্থিরতার আগুনে ঘি ঢালা, বাইডেনের দলের আর তেমন কোন শক্তিই থাকছে না। বিপরীতে বিভিন্ন দেশে চলমান যুদ্ধ বন্ধে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প। কিন্তু ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন যে সুখকর হবে না তা ইতিমধ্যেই বুঝে গেছে অভিবাসীরা।

ইতিহাসের সবচেয়ে বড় পারাজয়ের লজ্জা নিয়ে এবছর ব্রিটেন শাসনভার ছাড়তে হয়েছে টানা ১৪ বছরের ক্ষমতায় থাকা কনজারভেটিভ পার্টিকে। ক্ষমতায় ফিরেছে লেবার পার্টি। ব্রিটেনবাসীর আশা ছিলো আগের সরকারের ব্যর্থতা ঢাকতে উদ্যমী হয়ে কাজ করবে কিয়ার স্টারমার প্রশাসন। কিন্তু বাস্তবে তারও হাটছে আগের সরকারের পথেই। যার কারণে মেয়াদ চার মাস পেরোনোর আগেই তাদের ওপর ভরসা হারাতে বসেছে ব্রিটেনবাসী। এরই মধ্যে আবারও সাধারণ নির্বাচনের চেয়ে এক পিটিশনে সই করেছেন যুক্তরাজ্যে কয়েক লাখ মানুষ।

এ বছর শ্রীলঙ্কার ক্ষমতাও গেছে নতুন নেতৃত্বের হাতে। গণঅভ্যুত্থানের মুখে প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশটিতে অনুষ্ঠিত প্রথম নির্বাচনে ক্ষমতা পেয়েছেন বামপন্থী অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে। আগের পার্লামেন্টে মাত্র তিন আসন পাওয়া এই দলনেতার ধারে টিকতেও পারেনি শ্রীলঙ্কার জনপ্রিয় দলগুলো।

ভারতেও এ বছর সাধারণ নির্বাচন হয়েছে। তবে সেখানে নেতৃত্বের পরিবর্তন না হলেও কিছুটা কমেছে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের শক্তি। কারণ এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় জোটগতভাবে সরকার গঠন করতে হয়েছে মোদিকে। ফলে গত দুই দশক দাপটের সাথে চলা মোদিকে অনেকটা তোয়াজ করেই চলতে হবে আগামী পাঁচ বছর। সেই সাথে পার্লামেন্টে বিরোধী দলনেতা হয়ে এসেছেন প্রতিদ্বন্দ্বি রাহুল গান্ধী। তিনি যে সহজে মোদিকে ইচ্ছামতো দেশ চালাতে দেবেন না, তা স্পষ্ট। এমনকি বিদেশ নীতিতে রাহুলের চাহিদাকে ও প্রাধান্য দিতে হবে মোদিকে।

এদিকে, নানা নাটকীয়তার পর পার্লামেন্টে ভোটাভুটির মাধ্যমে অভিশংসিত হয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল। হঠাৎ মার্শাল ল জারি করার উদ্যোগ নেয়ার পরই তার ওপর চোটে যান দেশটির সাধারণ মানুষ ও পার্লামেন্ট মেম্মাররা। সব মিলিয়ে বিশ্ব নেতৃত্বের এত পালাবদলে কি পরিবর্তন হতে যাচ্ছে তা দেখার অপেক্ষায় মুখিয়ে রয়েছে সবাই। তবে সকলের আশা, আগামীতে যাই ঘটুক না কেন বিশ্ববাসির জন্য যেন তা কল্যাণকরই হয়।