ঢাকা ০৬:০৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০২ জানুয়ারী ২০২৫, ১৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

জিমি কার্টারের মৃত্যুতে বিশ্বনেতাদের শোক

আর্ন্তজাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৩:৩৬:১৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / ৩৬৬ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

শান্তিতে নোবেল জয়ী যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার আর নেই। স্থানীয় সময় রোববার বিকেলে জর্জিয়ার প্লেইনস শহরে নিজ বাড়িতে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ১০০ বছর। এতে শোক জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ বিশ্ব নেতারা। অসংখ্য মানবিক কাজে দৃষ্টান্ত রাখা এই নেতার মৃত্যুতে শোকের মাতম বইছে পুরো যুক্তরাষ্ট্রে। চিরবিদায় নেয়া জিমি কার্টার কীভাবে একজন কৃষক থেকে বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠে ছিলেন।

পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চির বিদায় নিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৯তম প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার। একজন কৃষক থেকে ১৯৭৭ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হয়ে ওঠার ইতিহাস গড়া এই বর্ষীয়ান ডেমোক্রেট নেতার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরো যুক্তরাষ্ট্রে। শত বছরের জীবদ্দশায় অসংখ্য মানবিক কাজের দৃষ্টান্ত রেখে যাওয়া নোবেল জয়ী এই নেতার মৃত্যুতে শোক ও শ্রদ্ধায় নামানো হয়েছে হোয়াইট হাউস এবং ক্যাপিটল হিলের জাতীয় পতাকা।

শোক ও পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে গিয়ে বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, একটি আদর্শ, বিশ্বাসযোগ্য, পরোপকারী ও মানবিক জীবনযাপনের অর্থ কী হতে পারে তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন জিমি কার্টার।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ‘আজ একটি দুঃখজনক দিন, তবে অবিশ্বাস্য কিছু স্মৃতি মনে করিয়ে দিচ্ছে। আমার দৃষ্টিতে আজ আমেরিকা এবং পুরো বিশ্ব একজন অসাধারণ নেতাকে হারালো। তিনি একজন রাষ্ট্রনায়ক এবং একজন মানবতাবাদী ছিলেন। জিল এবং আমি একজন প্রিয় বন্ধুকে হারিয়েছি।’

শোক বার্তায়, নব নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, সংকটময় সময়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের জীবনমান উন্নত করার জন্য সামর্থ্যের সবটুকু করেছিলেন জিমি কার্টার। যুক্তরাষ্ট্রবাসী আজীবন তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে বলেও মনে করেন ট্রাম্প। সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন কানাডা, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা।

জর্জিয়ার কৃষক পরিবারের সন্তান জিমি কার্টার, যুক্তরাষ্ট্রের নেভাল একাডেমি থেকে ১৯৪৬ সালে স্নাতক পাস করেন। এরপর পারমাণবিক সাবমেরিন কর্মসূচিতে কাজ করেন। পরবর্তীতে চাকরি ছেড়ে পরিবারের বাদাম চাষাবাদ ও ব্যবসা দেখভাল করেই কোটিপতি বনে যান তিনি।

মানবিক কাজে সংশ্লিষ্টতায় ব্যাপক পরিচিতি থাকায় জর্জিয়া থেকে কংগ্রেস সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭১ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন জর্জিয়ার গভর্নর হিসেবে। ১৯৭৬ সালে ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে নির্বাচন করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৭৭ সালে হোয়াইট হাউজের দায়িত্ব বুঝে পেয়ে সংকটময় মার্কিন অর্থনীতি এবং ইরানের জিম্মি সংকটের সাথে লড়াই করেছিলেন তিনি। এছাড়া ইসরাইল ও মিশরের মধ্যে শান্তি স্থাপনেও নজির গড়েছিলেন এই নেতা।

১৯৮০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয়বার অংশ নিয়ে রিপাবলিকান নেতা রোনাল্ড রেগানের কাছে হেরে ৫৬ বছর বয়সে রাজনীতি থেকে অবসরে যান জিমি কার্টার। তবে হোয়াইট হাউজ ছাড়লেও মানবিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেই নিজেকে ব্যস্ত রাখতেন জিমি কার্টার। বছরের পর বছর ধরে আন্তর্জাতিক সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে পেতে নিরলস প্রচেষ্টা, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখা, মানবাধিকার রক্ষাসহ দেশে দেশে দারিদ্র্য জনসংখ্যা কমানো কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বেশ আলোচনায় ছিলেন তিনি। স্বীকৃতি হিসেবে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন ২০০২ সালে।

১৯৪৬ সালে রোসালিন স্মিথকে বিয়ে করেন জিমি কার্টার। গত বছরের নভেম্বরে ৯৬ বছর বয়সে মারা যান স্ত্রী রোসালিন। ৭৭ বছরের দাম্পত্য জীবনে রেখে গেছেন চার সন্তান, ১১ নাতি-নাতনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

জিমি কার্টারের মৃত্যুতে বিশ্বনেতাদের শোক

আপডেট সময় : ০৩:৩৬:১৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪

শান্তিতে নোবেল জয়ী যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার আর নেই। স্থানীয় সময় রোববার বিকেলে জর্জিয়ার প্লেইনস শহরে নিজ বাড়িতে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ১০০ বছর। এতে শোক জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ বিশ্ব নেতারা। অসংখ্য মানবিক কাজে দৃষ্টান্ত রাখা এই নেতার মৃত্যুতে শোকের মাতম বইছে পুরো যুক্তরাষ্ট্রে। চিরবিদায় নেয়া জিমি কার্টার কীভাবে একজন কৃষক থেকে বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠে ছিলেন।

পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চির বিদায় নিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৯তম প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার। একজন কৃষক থেকে ১৯৭৭ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হয়ে ওঠার ইতিহাস গড়া এই বর্ষীয়ান ডেমোক্রেট নেতার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরো যুক্তরাষ্ট্রে। শত বছরের জীবদ্দশায় অসংখ্য মানবিক কাজের দৃষ্টান্ত রেখে যাওয়া নোবেল জয়ী এই নেতার মৃত্যুতে শোক ও শ্রদ্ধায় নামানো হয়েছে হোয়াইট হাউস এবং ক্যাপিটল হিলের জাতীয় পতাকা।

শোক ও পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে গিয়ে বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, একটি আদর্শ, বিশ্বাসযোগ্য, পরোপকারী ও মানবিক জীবনযাপনের অর্থ কী হতে পারে তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন জিমি কার্টার।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ‘আজ একটি দুঃখজনক দিন, তবে অবিশ্বাস্য কিছু স্মৃতি মনে করিয়ে দিচ্ছে। আমার দৃষ্টিতে আজ আমেরিকা এবং পুরো বিশ্ব একজন অসাধারণ নেতাকে হারালো। তিনি একজন রাষ্ট্রনায়ক এবং একজন মানবতাবাদী ছিলেন। জিল এবং আমি একজন প্রিয় বন্ধুকে হারিয়েছি।’

শোক বার্তায়, নব নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, সংকটময় সময়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের জীবনমান উন্নত করার জন্য সামর্থ্যের সবটুকু করেছিলেন জিমি কার্টার। যুক্তরাষ্ট্রবাসী আজীবন তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে বলেও মনে করেন ট্রাম্প। সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন কানাডা, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা।

জর্জিয়ার কৃষক পরিবারের সন্তান জিমি কার্টার, যুক্তরাষ্ট্রের নেভাল একাডেমি থেকে ১৯৪৬ সালে স্নাতক পাস করেন। এরপর পারমাণবিক সাবমেরিন কর্মসূচিতে কাজ করেন। পরবর্তীতে চাকরি ছেড়ে পরিবারের বাদাম চাষাবাদ ও ব্যবসা দেখভাল করেই কোটিপতি বনে যান তিনি।

মানবিক কাজে সংশ্লিষ্টতায় ব্যাপক পরিচিতি থাকায় জর্জিয়া থেকে কংগ্রেস সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭১ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন জর্জিয়ার গভর্নর হিসেবে। ১৯৭৬ সালে ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে নির্বাচন করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৭৭ সালে হোয়াইট হাউজের দায়িত্ব বুঝে পেয়ে সংকটময় মার্কিন অর্থনীতি এবং ইরানের জিম্মি সংকটের সাথে লড়াই করেছিলেন তিনি। এছাড়া ইসরাইল ও মিশরের মধ্যে শান্তি স্থাপনেও নজির গড়েছিলেন এই নেতা।

১৯৮০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয়বার অংশ নিয়ে রিপাবলিকান নেতা রোনাল্ড রেগানের কাছে হেরে ৫৬ বছর বয়সে রাজনীতি থেকে অবসরে যান জিমি কার্টার। তবে হোয়াইট হাউজ ছাড়লেও মানবিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেই নিজেকে ব্যস্ত রাখতেন জিমি কার্টার। বছরের পর বছর ধরে আন্তর্জাতিক সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে পেতে নিরলস প্রচেষ্টা, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখা, মানবাধিকার রক্ষাসহ দেশে দেশে দারিদ্র্য জনসংখ্যা কমানো কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বেশ আলোচনায় ছিলেন তিনি। স্বীকৃতি হিসেবে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন ২০০২ সালে।

১৯৪৬ সালে রোসালিন স্মিথকে বিয়ে করেন জিমি কার্টার। গত বছরের নভেম্বরে ৯৬ বছর বয়সে মারা যান স্ত্রী রোসালিন। ৭৭ বছরের দাম্পত্য জীবনে রেখে গেছেন চার সন্তান, ১১ নাতি-নাতনি।