ঢাকা ০৩:০৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

চড়া দামে গ্যাস মজুতই এখন ইউরোপের বড় চ্যালেঞ্জ

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১২:৩৮:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ জানুয়ারী ২০২৫
  • / ৩৪৫ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

রাতারাতি তরল গ্যাসের সংকট মোকাবিলা নয়; বরং চড়া দামে গ্যাস মজুত করাই এই মুহূর্তে ইউরোপের দেশগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন বাজার বিশ্লেষকরা। গেল বুধবার, ইউক্রেন হয়ে ইউরোপের দেশগুলোতে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহের চুক্তি নবায়নে ব্যর্থ হয় মস্কো। এতে করে ইউরোপে জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম বাড়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউক্রেন-রাশিয়ার এই চুক্তি যে ভঙ্গ হবে- তা আগে থেকেই জানতো ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

১৯৯১ সাল থেকে ইউক্রেনের পাইপলাইন ব্যবহার করে ইউরোপের দেশগুলোতে তুলনামূলক সস্তা দামে গ্যাস সরবরাহ করতো রাশিয়া। মস্কো আর কিয়েভের মধ্যে ৫ বছরের গ্যাস ট্রানজিটের যে চুক্তি ছিল নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে তা অকেজো হয়েছে। চুক্তি নবায়নে ব্যর্থ ইউক্রেনীয় ‘নাফটোগ্যাজ’ আর রুশ এনার্জি কর্পোরেশন ‘গ্যাজপ্রম’।

গেল বুধবার, পহেলা জানুয়ারি থেকে বন্ধ আছে সোভিয়েত আমলের এই গ্যাস সরবরাহের রুট। যদিও রয়টার্স বলছে, হাঙ্গেরি, সার্বিয়া ও তুরস্কের ভেতর দিয়ে তুর্কস্ট্রিম পাইপলাইন ব্যবহার করে গ্যাস সরবরাহ অব্যাহত রাখার সুযোগ আছে মস্কোর।

মস্কো থেকে সস্তায় গ্যাস কিনতে না পারলে আবারও ইউরোপীয় দেশগুলো বড় ধাক্কা খাবে- আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের এই ন্যারেটিভের সাথে পুরোপুরি একমত নন বাজার বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া, অস্ট্রিয়া বা ইতালির মতো কিছু দেশ মস্কোর গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল হলেও, কিয়েভ যে এই চুক্তি নবায়ন করবে না সেটা ইউরোপের কর্তাব্যক্তিরা আগে থেকেই জানতেন।

কানাডিয়ান গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স ইনস্টিটিউটের ফেলো অ্যান্ড্রু রাসিউলিস বলেন, ‘তারা জানতেন পরিস্থিতি খারাপ হতে যাচ্ছে। সেই অনুপাতে মজুদও বাড়িয়েছেন তারা। গ্যাসের বাজারে নাটকীয় কোনো পরিবর্তন আসবে না। কিন্তু এই মুহূর্তে বিকল্প উপায়ে গ্যাস কেনার তাড়াহুড়া শুরু হয়েছে। যদিও এর জন্য চড়া মূল্য দিতে হবে।’

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষকদের পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে কানাডিয়ার গণমাধ্যম সিটিভি নিউজ জানায়, তরল গ্যাসের মজুদ বাড়াতে বিগত কয়েকবছরে প্রচুর বিনিয়োগ করছে যুক্তরাষ্ট্র। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ইউরোপের জন্য গ্যাসের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হয়ে উঠতে পারে। এতে করে চীন বা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় বেশি দামে প্রাকৃতিক তরল গ্যাস কিনবে হবে ইউরোপকে।

যুক্তরাষ্ট্র, কাতার কিংবা নরওয়ের মতো দেশ যখন রাশিয়ার বাজার দখল করছে তখন, স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকো বলছে, মস্কো এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারলেও চরম সংকটে পড়বে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যরাষ্ট্রগুলো।

মস্কোপন্থী এই নেতা শুরু থেকেই সতর্ক করছেন, ইউক্রেন-রাশিয়া গ্যাস রুট বন্ধ হলে স্লোভাকিয়ার ট্রানজিট রাজস্ব আয়ে ঘাটতির পরিমাণ কয়েক মিলিয়ন ইউরো ছাড়িয়ে যাবে; ইউরোপ জুড়ে বাড়বে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম। এবং এই পুরো বিষয়টির জন্য ইউরোপের রাঘবোয়ালদের দুষছেন স্লোভাক প্রধানমন্ত্রী।

স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকো বলেন, ‘ইউরোপের নেতাদের কারণে স্লোভাকিয়া যে মারাত্মক সংকটে পড়েছে, অন্য কেউ আমাদের এতটা চাপে রাখেনি। ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রগুলো শুরু থেকেই নিজেদের অভ্যন্তরীণ স্বার্থ আর বৈশ্বিক রাজনীতিতে অর্থহীন ফায়দা হাসিলের জন্য ইউনিয়নের বাকি সদস্যদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে আসছে।’

মস্কো-কিয়েভ রুট বন্ধ হওয়ার পরপরই জার্মানি ও ইতালি থেকে গ্যাস কেনার পরিকল্পনা জানিয়েছে রাশিয়ার গ্যাস নির্ভর আরেক দেশ অস্ট্রিয়া। গার্ডিয়ান বলছে, ইউরোপজুড়ে গ্যাস মজুদের তোড়জোড় দেখে বোঝা যাচ্ছে গ্যাসের সরবরাহ সংকট নয় বরং গ্যাসের চড়া মূল্যই ইউরোপের নেতাদের মাথা ব্যথার মূল কারণ হতে যাচ্ছে।

গেল ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ইউরোপে ৫ হাজার কোটি বা ৫০ বিলিয়ন কিউবিক মিটার পাইপলাইনজাত ও তরল গ্যাস সরবরাহ করেছে রশিয়া। ক্রেমলিন জানাচ্ছে, ২০২৩ এর তুলনায় যা ১৮ থেকে ২০ শতাংশ বেশি। যদিও ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর ইউরোপ জুড়ে গ্যাস কেনার তোড়জোড় শুরু হয়। কারণ, ২০২২ এর তুলনায় ২০২৩ এ ইউরোপের দেশগুলোতে ৫৫ শতাংশ বেশি তরল গ্যাস বিক্রি করে মস্কো।

নিউজটি শেয়ার করুন

চড়া দামে গ্যাস মজুতই এখন ইউরোপের বড় চ্যালেঞ্জ

আপডেট সময় : ১২:৩৮:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ জানুয়ারী ২০২৫

রাতারাতি তরল গ্যাসের সংকট মোকাবিলা নয়; বরং চড়া দামে গ্যাস মজুত করাই এই মুহূর্তে ইউরোপের দেশগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন বাজার বিশ্লেষকরা। গেল বুধবার, ইউক্রেন হয়ে ইউরোপের দেশগুলোতে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহের চুক্তি নবায়নে ব্যর্থ হয় মস্কো। এতে করে ইউরোপে জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম বাড়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউক্রেন-রাশিয়ার এই চুক্তি যে ভঙ্গ হবে- তা আগে থেকেই জানতো ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

১৯৯১ সাল থেকে ইউক্রেনের পাইপলাইন ব্যবহার করে ইউরোপের দেশগুলোতে তুলনামূলক সস্তা দামে গ্যাস সরবরাহ করতো রাশিয়া। মস্কো আর কিয়েভের মধ্যে ৫ বছরের গ্যাস ট্রানজিটের যে চুক্তি ছিল নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে তা অকেজো হয়েছে। চুক্তি নবায়নে ব্যর্থ ইউক্রেনীয় ‘নাফটোগ্যাজ’ আর রুশ এনার্জি কর্পোরেশন ‘গ্যাজপ্রম’।

গেল বুধবার, পহেলা জানুয়ারি থেকে বন্ধ আছে সোভিয়েত আমলের এই গ্যাস সরবরাহের রুট। যদিও রয়টার্স বলছে, হাঙ্গেরি, সার্বিয়া ও তুরস্কের ভেতর দিয়ে তুর্কস্ট্রিম পাইপলাইন ব্যবহার করে গ্যাস সরবরাহ অব্যাহত রাখার সুযোগ আছে মস্কোর।

মস্কো থেকে সস্তায় গ্যাস কিনতে না পারলে আবারও ইউরোপীয় দেশগুলো বড় ধাক্কা খাবে- আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের এই ন্যারেটিভের সাথে পুরোপুরি একমত নন বাজার বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া, অস্ট্রিয়া বা ইতালির মতো কিছু দেশ মস্কোর গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল হলেও, কিয়েভ যে এই চুক্তি নবায়ন করবে না সেটা ইউরোপের কর্তাব্যক্তিরা আগে থেকেই জানতেন।

কানাডিয়ান গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স ইনস্টিটিউটের ফেলো অ্যান্ড্রু রাসিউলিস বলেন, ‘তারা জানতেন পরিস্থিতি খারাপ হতে যাচ্ছে। সেই অনুপাতে মজুদও বাড়িয়েছেন তারা। গ্যাসের বাজারে নাটকীয় কোনো পরিবর্তন আসবে না। কিন্তু এই মুহূর্তে বিকল্প উপায়ে গ্যাস কেনার তাড়াহুড়া শুরু হয়েছে। যদিও এর জন্য চড়া মূল্য দিতে হবে।’

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষকদের পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে কানাডিয়ার গণমাধ্যম সিটিভি নিউজ জানায়, তরল গ্যাসের মজুদ বাড়াতে বিগত কয়েকবছরে প্রচুর বিনিয়োগ করছে যুক্তরাষ্ট্র। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ইউরোপের জন্য গ্যাসের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হয়ে উঠতে পারে। এতে করে চীন বা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় বেশি দামে প্রাকৃতিক তরল গ্যাস কিনবে হবে ইউরোপকে।

যুক্তরাষ্ট্র, কাতার কিংবা নরওয়ের মতো দেশ যখন রাশিয়ার বাজার দখল করছে তখন, স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকো বলছে, মস্কো এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারলেও চরম সংকটে পড়বে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যরাষ্ট্রগুলো।

মস্কোপন্থী এই নেতা শুরু থেকেই সতর্ক করছেন, ইউক্রেন-রাশিয়া গ্যাস রুট বন্ধ হলে স্লোভাকিয়ার ট্রানজিট রাজস্ব আয়ে ঘাটতির পরিমাণ কয়েক মিলিয়ন ইউরো ছাড়িয়ে যাবে; ইউরোপ জুড়ে বাড়বে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম। এবং এই পুরো বিষয়টির জন্য ইউরোপের রাঘবোয়ালদের দুষছেন স্লোভাক প্রধানমন্ত্রী।

স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকো বলেন, ‘ইউরোপের নেতাদের কারণে স্লোভাকিয়া যে মারাত্মক সংকটে পড়েছে, অন্য কেউ আমাদের এতটা চাপে রাখেনি। ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রগুলো শুরু থেকেই নিজেদের অভ্যন্তরীণ স্বার্থ আর বৈশ্বিক রাজনীতিতে অর্থহীন ফায়দা হাসিলের জন্য ইউনিয়নের বাকি সদস্যদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে আসছে।’

মস্কো-কিয়েভ রুট বন্ধ হওয়ার পরপরই জার্মানি ও ইতালি থেকে গ্যাস কেনার পরিকল্পনা জানিয়েছে রাশিয়ার গ্যাস নির্ভর আরেক দেশ অস্ট্রিয়া। গার্ডিয়ান বলছে, ইউরোপজুড়ে গ্যাস মজুদের তোড়জোড় দেখে বোঝা যাচ্ছে গ্যাসের সরবরাহ সংকট নয় বরং গ্যাসের চড়া মূল্যই ইউরোপের নেতাদের মাথা ব্যথার মূল কারণ হতে যাচ্ছে।

গেল ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ইউরোপে ৫ হাজার কোটি বা ৫০ বিলিয়ন কিউবিক মিটার পাইপলাইনজাত ও তরল গ্যাস সরবরাহ করেছে রশিয়া। ক্রেমলিন জানাচ্ছে, ২০২৩ এর তুলনায় যা ১৮ থেকে ২০ শতাংশ বেশি। যদিও ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর ইউরোপ জুড়ে গ্যাস কেনার তোড়জোড় শুরু হয়। কারণ, ২০২২ এর তুলনায় ২০২৩ এ ইউরোপের দেশগুলোতে ৫৫ শতাংশ বেশি তরল গ্যাস বিক্রি করে মস্কো।