মারা গেছেন হাঙ্গেরির জিমন্যাস্ট আগনেস কেলেটি
- আপডেট সময় : ০২:৫৯:০৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ জানুয়ারী ২০২৫
- / ৩৪৯ বার পড়া হয়েছে
অলিম্পিকে সোনাজয়ী জীবিত অ্যাথলেটদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বয়স ছিল তাঁর। আগামী ৯ জানুয়ারি ১০৪তম জন্মদিনের কেক কাটার কথা ছিল হাঙ্গেরির জিমন্যাস্ট আগনেস কেলেটির। কিন্তু সেটা আর হলো না। কয়েকদিন আগে বড় দিনে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ১০৩ পেরিয়ে যাওয়া এ জিমন্যাস্ট। সঙ্গে যোগ হয় শ্বাসকষ্ট আর হৃদযন্ত্রের সমস্যা। ক্রমে জটিল হতে থাকে পরিস্থিতি। শেষ পর্যন্ত গতকাল বৃহস্পতিবার বুদাপেস্ট মিলিটারি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন অলিম্পিকে ৫ স্বর্ণসহ ১০ পদক জয়ী এ জিমন্যাস্ট। হাঙ্গেরির ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অলিম্পিক পদকজয়ী অ্যাথলেট তিনি।
কেলেটির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে হাঙ্গেরিয়ান অলিম্পিক কমিটি (এইচওসি) এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে, ‘হাঙ্গেরি এখন পর্যন্ত যতজন জিমন্যাস্ট পেয়েছে, আগনেস কেলেটি সবার চেয়ে এগিয়ে। কিন্তু তাঁর জীবন ও ক্যারিয়ার তাঁর ধর্ম ও দেশের রাজনীতির মারপ্যাঁচে পড়েছিল।’
এইচওসি-র এ বিবৃতি থেকেই কেলেটির জীবন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। ১৯২১ সালের ৯ জানুয়ারি ইহুদি পরিবারে জন্ম নেওয়া কেলেটি ছোটবেলাতেই সঙ্গীত ও জিমন্যাস্টে নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেন। মাত্র ১৬ বছর বয়সে জাতীয় জিমন্যাস্টিক চ্যাম্পিয়নশিপ জেতেন তিনি।
সে থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল, ১৯৪০ টোকিও অলিম্পিকে নিশ্চিত পদক জিততে যাচ্ছেন কেলেটি! কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে সে অলিম্পিক বাতিল হয়ে যায়। কেলেটির দুর্ভাগ্যের এখানেই শেষ নয়, ইহুদি বংশোদ্ভুত হওয়ার কারণে তাঁকে হাঙ্গেরির সব ধরনের ক্রীড়া কার্যক্রম থেকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে নাৎসি বাহিনী।
জীবন নিয়ে শঙ্কা জাগে কেলেটির। তাই অনেকটা বাধ্য হয়ে পালিয়ে হাঙ্গেরির একটি গ্রামে আশ্রয় নেন কেলেটি। সেটাও আবার নিজের পরিচয় লুকিয়ে। তাঁর মা, বোনকে সঙ্গে নিয়ে যান তিনি। তবে তাঁর বাবা ও অন্য কয়েকজন ইহুদি ক্যাম্পে নাৎসি হামলায় মারা যান।
সে সময়কার পরিস্থিতি নিয়ে ২০২০ সালের এক সাক্ষাৎকারে কেলেটি বলেছিলেন, ‘আমি আমার বয়সী একজন খ্রিষ্টান মেয়ের পরিচয়পত্রের ব্যবস্থা করেছিলাম। আমি মিথ্যা কাগজপত্র দিয়ে পালাতে সক্ষম হয়েছিলাম। আমি একটা প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়েছিলাম এবং সেখানে দাসি (পরিচারিকা) হিসেবে কাজ করেছি।’
১৯৪৪ অলিম্পিকও যুদ্ধের কারণে বাতিল হয়ে যায়। পরবর্তীতে ১৯৪৮ অলিম্পিকের জন্য কোয়ালিফাইড হলেও শেষ পর্যন্ত মূল পর্বে অংশ নিতে পারেননি। এবার দুর্ভাগ্য হয়ে আগে অ্যাঙ্কেলের চোট।
তাই ১৯৫২ অলিম্পিক হয়ে ওঠে এ প্রতিযোগিতায় কেলেটির প্রথম যাত্রা। যে বয়সে অনেক জিমন্যাস্ট পদত্যাগের চিন্তা করেন, সে বয়সে প্রথম অলিম্পিকে অংশ নিয়ে কেলেটি ফ্লোর এক্সারসাইজে ১টি সোনা এবং দলগতভাবে ১টি রূপা ও ২টি ব্রোঞ্জ জেতেন।
১৯৫৬ সালে মেলবোর্ন অলিম্পিকে জীবনের সেরা সময় কাটান কেলেটি। সেবার কিংবদন্তি লারিসা লাথিনিনার (পরবর্তীতে অলিম্পিক ইতিহাসে সবচেয়ে ডেকোরেটেড মেয়ে জিমন্যাস্ট হয়েছিলেন) সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেন কেলেটি। সেই অলিম্পিকে ৪টি সোনা ও ২টি রূপা জেতেন হাঙ্গেরির জিমন্যাস্ট।
কিন্তু সুসময় বেশিদিন থাকেনি কেলেটির জীবনে। ওই বছরই আবারও বড় মোড় নেয় কেলেটির জীবন। ১৯৫৬ সালের নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়াতে অনুশীলনে সময় কাটাচ্ছিলেন কেলেটি। সে সময় সোভিয়েত ট্যাংক ঢুকে পড়ে হাঙ্গেরিতে। দেশে ফেরা সম্ভব হয়ে ওঠে না কেলেটির। বাধ্য হয়ে থেকে যান অস্ট্রেলিয়াতেই।
সেখানে অস্ট্রেলিয়া জিমন্যাস্ট দলের কোচ হিসেবে কিছুদিন কাজ করেন। পরে ১৯৫৭ সালে ইসরায়েলে চলে যান এবং সেখানেই স্থায়ীভাবে থাকা শুরু করেন। ইসরায়েলে জাতীয় জিমন্যাস্ট প্রোগ্রাম শুরু করেন। পাশাপাশি দেশটির জিমন্যাস্ট দলের কোচ হিসেবেও কাজ করতে থাকেন। ২০১৭ সালে তিনি দেশটির সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘ইসরায়েল পুরস্কার’ জেতেন।