হাতের নাগালে সবজি বাজার
- আপডেট সময় : ০৩:১৭:৩৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ জানুয়ারী ২০২৫
- / ৩৫১ বার পড়া হয়েছে
কয়েক সপ্তাহ আগেই বাজারে সব ধরনের সবজির দাম ছিল বাড়তি। তবে গত ২ থেকে ৩ সপ্তাহ ধরে বাজারে কমেছে সবজির দাম। সাধারণ ক্রেতাদের হাতের নাগালে আসায় স্বাচ্ছন্দ্য ফিরেছে সবজি কেনায়। তবে চলতি সপ্তাহে রাজধানীর বাজারগুলোতে মুরগির দাম চড়া রয়েছে। সব ধরনের মুরগির দাম কেজিতে ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তবে সপ্তাহ ব্যবধানে মাছের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। আগের সপ্তাহের দামেই বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের মাছ।
সরবরাহ বাড়ায় রাজধানীর বাজারগুলোতে সপ্তাহের ব্যবধানে আলু ও পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। গত সপ্তাহের তুলনায় আলু ও পেঁয়াজ কেজিতে ১০ টাকা কমেছে।
শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে সবজির দামের এমন চিত্র দেখা গেছে।
রাজধানীর এসব বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সরবরাহ বাড়ায় গত সপ্তাহের তুলনায় আলু ও পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা কমেছে। এসব বাজারে নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা দরে। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা দরে। পুরাতন আলু ৬০ টাকা, বগুড়ার আলু ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এসব বাজারে দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ১০ টাকা কমে ১০০ টাকা, মুড়ি পেঁয়াজ ৫০ টাকা, পাতা পেঁয়াজ ৪০ টাকা, ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
এদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকায় গত সপ্তাহের তুলনায় আলু ও পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা কমেছে। নতুন আলুর দাম আরও কমে আসবে বলেও তারা জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে শেওড়াপাড়া বাজারের আলু-পেঁয়াজ বিক্রেতা মো. সোলায়মান বলেন, বাজারে নতুন আলু ও পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ছে। আগের তুলনায় দাম কমেছে, আগামী সপ্তাহে আলুর দাম আরও কমবে বলে তিনি জানান।
এসব বাজারে আদা ২৮০ টাকা, রসুন ২২০ থেকে ২৪০ টাকা, দেশি মশুর ডাল ১৪০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা, মিনি কেট চাল ৭৮ থেকে ৮৪ টাকা এবং নাজির শাল কেজি ৭৬ থেকে ৮২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় গত সপ্তাহের তুলনায় শীতকালীন সব ধরনের সবজি কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কমেছে। এসব বাজারে শিমের কেজি ২০ থেকে ৪০ টাকা, বড় আকারের ফুলকপি ১৫ থেকে ২০ টাকা পিস, বাঁধাকপি বড় সাইজের ৩০ টাকা পিস, প্রতিটি লাউ ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পাকা টমেটোর কেজি ৫০ থেকে ৭০ টাকা, গাজর ৫০ থেকে ৬০ টাকা, মুলা ২০ টাকা, খিরা ৪০ টাকা এবং শসার কেজি ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এসব বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজি বেগুন ৪০ থেকে ৫০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, পেঁপে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ধুন্দল ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০ টাকা, কচুর লতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ঝিঙ্গা এবং কাঁচামরিচ ৪০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এসব বাজারে লেবুর হালি ২০ থেকে ৪০ টাকা, ধনে পাতা ১০০ টাকা কেজি, কাঁচা কলা হালি ৫০ টাকা, চাল কুমড়া ৬০ টাকা পিস, ক্যাপসিকাম ২০০ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়া ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারগুলোতে লাল শাক ১০ টাকা আঁটি, লাউ শাক ৪০ টাকা, মুলা শাক ১০ টাকা, পালং শাক ১০ টাকা, কলমি শাক তিন আঁটি ২০ টাকা, পুঁই শাক ৪০ টাকা এবং ডাঁটা শাক ২০ টাকা আঁটি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাজধানীর মালিবাগ বাজারে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী সাব্বির আহমেদ। এ ক্রেতা বলেন, কিছুদিন আগেও সবজির দাম ছিল আকাশছোঁয়া, সেই তুলনায় এখন সবজির দাম কমেছে। তবে এখনো কিছু কিছু সবজির দাম বাড়তি রয়ে গেছে, যদিও বিক্রেতারা বলছেন— এখন এই সবজিগুলোর মৌসুম নয়। বাকি সবজিগুলোর দাম তুলনামূলক কম।
তিনি আরও বলেন, এখন সবজি কিনে খুব স্বাচ্ছন্দ্য পাওয়া যাচ্ছে। বিগত কয়েক সপ্তাহের তুলনায় সবজির দাম কমেছে ঠিকই, তবে দু-এক বছর আগে শীতের সময় সবজির দাম আরও কম থাকতো। তারপরেও কিছুদিন আগের চেয়ে সবজির দাম তুলনামূলক অনেকটাই কমে এসেছে।
মহাখালীর সবজি বিক্রেতা আব্দুর রহিম বলেন, আগের তুলনায় সবজির দাম এখন অনেক কম। যে কারণে সবজি বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে। আগে এক আইটেমের সবজি যদি পাঁচ কেজি বিক্রি হতো, এখন সেটা ৮-১০ কেজি বিক্রি হয়। দাম কম থাকলে ক্রেতারা কিনে স্বস্তি পায়। বিক্রির পরিমাণ বাড়ায় আমরাও লাভবান হই।
তিনি আরও বলেন, পুরো শীতজুড়েই সবজির দাম এমন কমই থাকবে। শীত কমার পর সবজির দাম আবার কিছুটা বাড়তে পারে। তবে এখন যে সবজির দাম চলছে, এমন কম দাম অনেকদিন দেখা যায়নি।
সার্বিক বিষয় নিয়ে কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা আলমগীর হোসেন বলেন, এখনো সবজির দাম খুব কম, সামনে হয়ত আরও কমতে পারে। রাজধানীর অন্যান্য খুচরা বাজারগুলোর তুলনায় কারওয়ান বাজারের সবজির দাম আরও কম। কিন্তু যারা খুচরা ব্যবসায়ী তারা এখান থেকে কিনে, পরে পরিবহন, লেবার খরচ, দোকান খরচ সবকিছু ধরে সবজির দাম নির্ধারণ করে। ফলে কারওয়ান বাজারের তুলনায় অন্যান্য সব খুচরা বাজারে সবজির দাম একটু বেশি। তবে সব দিক থেকে হিসেব করলে গত বছরের পুরো সময়ের চেয়ে নতুন বছরের শুরুতে এই সময় এসে বাজারের সবচেয়ে কম দাম যাচ্ছে সবজিগুলোর।
রাজধানীর এসব বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহ ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ২১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এসব বাজারে সোনালি কক কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে ৩৫০ টাকা, সোনালি হাইব্রিড ৩২০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা, লেয়ার লাল মুরগি ৩১০ টাকা এবং সাদা লেয়ার ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে, বাজারগুলোতে চলতি সপ্তাহে মাছের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। সব ধরনের মাছ গত সপ্তাহের দামেই বিক্রি করতে দেখা গেছে। এসব বাজারে ৫০০ গ্রামের ইলিশ ১০০০ টাকা, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রামের ১৫৫০ টাকা, এক কেজি ওজনের ১৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোতে এক কেজি শিং মাছ চাষের (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায়, প্রতি কেজি রুই মাছের দাম বেড়ে (আকারভেদে) ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায়, দেশি মাগুর মাছ ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা , মৃগেল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়, চাষের পাঙ্গাস ২০০ থেকে ২২০ টাকায়, চিংড়ি প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ১১০০ টাকায়, বোয়ালমাছ প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায়, বড় কাতল ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায়, পোয়া মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়, পাবদা মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়, তেলাপিয়া ২২০ টাকায়, কই মাছ ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়, মলা ৫০০ টাকা, বাতাসি টেংরা ১৩০০ টাকায়, টেংরা মাছ ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি মাছ ৫০০ টাকায়, পাঁচ মিশালি মাছ ২২০ টাকায়, রুপচাঁদা ১২০০ টাকা, বাইম মাছ ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা, দেশি কই ১২০০ টাকা, সোল মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, আইড় মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, বেলে মাছ ৮০০ টাকা, কুড়াল মাছ ৭০০ টাকা, কাজলি মাছ ৮০০ টাকা এবং কাইকলা মাছ ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এসব বাজারে গরুর মাংস কেজি প্রতি ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা, গরুর কলিজা ৮০০ টাকা, গরুর মাথার মাংস ৪৫০ টাকা, গরুর বট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা এবং খাসির মাংস কেজি প্রতি ১১৫০-১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারগুলোতে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়, হাঁসের ডিম ২২০ টাকায়, দেশি মুরগির ডিমের হালি ৯০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
বাজার করতে আসা নাইম আহমেদ নামক এক শিক্ষার্থী বলেন, ঢাকায় গত ৫ বছর মেসে থেকে পড়াশোনা করছি, দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধির কারণে দিনদিন শুধু খরচ বেড়েই চলছে। প্রথমদিকে ৫ হাজার টাকায় মাস শেষ করা যেতো, এখন ৮/৯ হাজার টাকাতেও ঠিকমতো চলা যায় না। শুরুর দিকে কিছু না করলেও এখন একটা টিউশনি করিয়ে বাবার উপর টাকার চাপ কিছুটা কম হচ্ছে । কিন্তু সবাই কি টিউশনি পায়?
তিনি আরও বলেন, বাজারে মাছের অভাব নাই, প্রচুর মাছ। কিন্তু দাম গত সপ্তাহের চেয়েও বেশি মনে হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগি দেখলাম ২১০ টাকা, যা ১৭০-১৮০ টাকার মধ্যে হলেই চলে। মাস-ছয়েক আগেও এই দামে বিক্রি হয়েছে, হঠাৎ করেই আবার দাম বেড়ে গেছে।
শফিকুল ইসলাম নামক আরেক ক্রেতা বলেন, শীতের সময় সাধারণত শুনি মাছের দাম কম থাকে, এবার দেখছি উলটো বাজারে এখন মাছের দাম অনেক। বাসায় সবচেয়ে বেশি চলে পাঙাস মাছ। গত সপ্তাহেও ১৮০ টাকা কেজি নিয়েছি, কিন্তু আজকে ২০০ টাকার নিচে দিতেই চায় না। ছোট মাছে তো হাত দেওয়ার মতো অবস্থা নেই।
বাড়তি দাম প্রসঙ্গে মাছ বিক্রেতা মঞ্জিল মিয়া বলেন, আমাদের যদি বেশি দামে কেনা লাগে, আমরা কি কমে বিক্রি করতে পারবো? আর ১০/২০ টাকা লাভের জায়গায় কি আমরা ১০০ টাকা লাভ করতে পারবো? কমে বিক্রি করতে পারলেই বরং আমাদের বিক্রি বেশি হয়। আর এখন যে দাম আছে, এটাকে খুব বেশি বলার সুযোগ নেই। এই সপ্তাহে যদি কেজি ১০/২০ টাকা বাড়ে, পরের সপ্তাহে আবার কমে যায়। এটা খুবই স্বাভাবিক।
মুরগির বিক্রেতা মনসুর আলী বলেন, অন্যান্য দিনের তুলনায় শুক্রবারে মুরগির চাহিদাটা একটু বেশিই থাকে। সে তুলনায় দামটা কমই বলা যায়। গত সপ্তাহেও ২০০ থেকে ২১০ টাকায় বিক্রি করেছি, এই সপ্তাহেও একই দাম। শীতের আগে দামটা ২০০ টাকার নিচে ছিল। সম্ভবত শীতের কারণে বাড়ছে। সাধারণত শীতে কিছু মুরগি মরে যায়, এবং রোগবালাইও বেশি হয়। যে কারণে খামারি পর্যায়ে বেশি দামে কিনে আনতে হয়। তবুও আলহামদুলিল্লাহ, ভালো বিক্রি হচ্ছে।