ঢাকা ০৯:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

১২০ দেশের সংবিধান পর্যালোচনা করে যেসব প্রস্তাবনা দেবে কমিশন

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৩:৩৬:১৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ জানুয়ারী ২০২৫
  • / ৩৭৬ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

স্বাধীনতার পর থেকে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে বার বার সংবিধানকে কাটাছেঁড়া করেছে বিভিন্ন সরকার। সংসদীয় ব্যবস্থা পাল্টে একদলীয় ব্যবস্থা কিংবা সমরিক শাসনকে বৈধতা দিতে ব্যবহার করা হয়েছে সংবিধানকে। সবশেষ ১৬ বছরে শেখ হাসিনা সরকার স্বৈরতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে পঞ্চদশ সংশোধনীসহ বেশ কয়েকবার সংবিধানে আনে পরিবর্তন। সবমিলিয়ে ‘৭২-এর সংবিধানে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে ১৭ বার পরিবর্তন আনা হয়েছে। এবার ১২০টি দেশের সংবিধান পর্যালোচনা ও রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন মহলের প্রস্তাবের ভিত্তিতে প্রস্তুত করা হয়েছে সংবিধান সংস্কার প্রস্তাবনা। চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে তা প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেবে সংবিধান সংস্কার কমিশন।

জানা গেছে, ২৫ নয়, ২১ বছরেই করা যাবে নির্বাচন, সংসদ হবে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট, দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রিত্ব নয়, এককেন্দ্রিক ক্ষমতা ঠেকাতে নানা প্রস্তাবনা দিতে যাচ্ছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদসহ বিতর্কিত ধারা বাতিলও থাকছে তাদের প্রস্তাবে। তবে কাগজ-কলমের এসব সংস্কার বাস্তবে রূপ দিতে রাজনৈতিক ঐক্যের উপর জোর দিচ্ছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞরা।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পালানোর পর দাবি ওঠে সংবিধান পরিবর্তনের। সেই ক্ষেত্রে পুনর্লিখন নাকি সংস্কার, তা নিয়ে মতভেদ দেখা যায় বিভিন্ন মহলে। ৬ অক্টোবর গঠন করা হয় সংবিধান সংস্কার কমিশন। ৩ মাসে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং নাগরিকদের মতামত নিয়েছেন সদস্যরা।

কমিশন প্রধান ড. আলী রীয়াজ বলছেন, বিভিন্ন পক্ষের প্রস্তাবনা এবং ১২০টি দেশের সংবিধান পর্যালোচনা করে প্রস্তুত করা হয়েছে সংস্কার প্রস্তাবনা। পুনর্লিখন না হলেও কার্যকর সংস্কারের মাধ্যমে জন-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের আশা তার।

তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। জবাবদিহির ব্যবস্থা করতে হবে। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে অংশীজনদের একটা বড় অংশ কথা বলেছেন। তাদের আকাঙ্ক্ষা ও চিন্তাগুলোকে সমন্বয় করার চেষ্টা করছি।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, অনেক ধরনের মতের প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্টের একটা ভূমিকা থাকে। তাই এটাকে একটা ইতিবাচক হিসেবে আমরা বিবেচনা করেছি। প্রধানমন্ত্রীর জায়গায় একটা জবাবদিহি তৈরি করতে হবে।

তরুণদের দেশ গঠনের সুযোগ দিতে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বয়স ৪ বছর কমিয়ে করা হচ্ছে ২১। এ ছাড়াও সংবিধানের বিভিন্ন বিতর্কিত ধারা পরিবর্তনে রাখা হচ্ছে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা। আলী রীয়াজ বলেন, সংসদ সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে বর্তমান বয়স ২৫ আছে। সেটি কমিয়ে ২১ বিবেচনা করেছি। সংবিধান ১৯৭২ সাল থেকে যে ১৭টি সংশোধন হয়েছে, সেগুলো বিবেচনায় রেখেছি যে এগুলোর শেষ পর্যন্ত কী লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে।

এদিকে এসব সংস্কার প্রস্তাবনাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও তা কার্যকর হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ আহসানুল করিম। রাজনৈতিক ঐকের ওপর জোর তার।

আহসানুল করিম বলেন, কী সংস্কার হবে, সেটা প্রতিটি দল একমত হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জনগণের কথা চিন্তা করে প্রতিটি দলকে এমনভাবে একমত হতে হবে, যাতে সংস্কারের বিষয়ে পরবর্তী বাংলাদেশে যে সরকারই থাকুক না কেন, তাদের যেন একটা দায়বদ্ধতা থাকে।

প্রস্তাবনা শেষে সব অংশীজনের মতামত নিয়েই চূড়ান্ত সংস্কার প্রস্তাবনা তৈরি করবে অন্তর্বর্তী সরকার।

নিউজটি শেয়ার করুন

১২০ দেশের সংবিধান পর্যালোচনা করে যেসব প্রস্তাবনা দেবে কমিশন

আপডেট সময় : ০৩:৩৬:১৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ জানুয়ারী ২০২৫

স্বাধীনতার পর থেকে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে বার বার সংবিধানকে কাটাছেঁড়া করেছে বিভিন্ন সরকার। সংসদীয় ব্যবস্থা পাল্টে একদলীয় ব্যবস্থা কিংবা সমরিক শাসনকে বৈধতা দিতে ব্যবহার করা হয়েছে সংবিধানকে। সবশেষ ১৬ বছরে শেখ হাসিনা সরকার স্বৈরতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে পঞ্চদশ সংশোধনীসহ বেশ কয়েকবার সংবিধানে আনে পরিবর্তন। সবমিলিয়ে ‘৭২-এর সংবিধানে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে ১৭ বার পরিবর্তন আনা হয়েছে। এবার ১২০টি দেশের সংবিধান পর্যালোচনা ও রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন মহলের প্রস্তাবের ভিত্তিতে প্রস্তুত করা হয়েছে সংবিধান সংস্কার প্রস্তাবনা। চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে তা প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেবে সংবিধান সংস্কার কমিশন।

জানা গেছে, ২৫ নয়, ২১ বছরেই করা যাবে নির্বাচন, সংসদ হবে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট, দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রিত্ব নয়, এককেন্দ্রিক ক্ষমতা ঠেকাতে নানা প্রস্তাবনা দিতে যাচ্ছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদসহ বিতর্কিত ধারা বাতিলও থাকছে তাদের প্রস্তাবে। তবে কাগজ-কলমের এসব সংস্কার বাস্তবে রূপ দিতে রাজনৈতিক ঐক্যের উপর জোর দিচ্ছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞরা।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পালানোর পর দাবি ওঠে সংবিধান পরিবর্তনের। সেই ক্ষেত্রে পুনর্লিখন নাকি সংস্কার, তা নিয়ে মতভেদ দেখা যায় বিভিন্ন মহলে। ৬ অক্টোবর গঠন করা হয় সংবিধান সংস্কার কমিশন। ৩ মাসে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং নাগরিকদের মতামত নিয়েছেন সদস্যরা।

কমিশন প্রধান ড. আলী রীয়াজ বলছেন, বিভিন্ন পক্ষের প্রস্তাবনা এবং ১২০টি দেশের সংবিধান পর্যালোচনা করে প্রস্তুত করা হয়েছে সংস্কার প্রস্তাবনা। পুনর্লিখন না হলেও কার্যকর সংস্কারের মাধ্যমে জন-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের আশা তার।

তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। জবাবদিহির ব্যবস্থা করতে হবে। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে অংশীজনদের একটা বড় অংশ কথা বলেছেন। তাদের আকাঙ্ক্ষা ও চিন্তাগুলোকে সমন্বয় করার চেষ্টা করছি।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, অনেক ধরনের মতের প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্টের একটা ভূমিকা থাকে। তাই এটাকে একটা ইতিবাচক হিসেবে আমরা বিবেচনা করেছি। প্রধানমন্ত্রীর জায়গায় একটা জবাবদিহি তৈরি করতে হবে।

তরুণদের দেশ গঠনের সুযোগ দিতে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বয়স ৪ বছর কমিয়ে করা হচ্ছে ২১। এ ছাড়াও সংবিধানের বিভিন্ন বিতর্কিত ধারা পরিবর্তনে রাখা হচ্ছে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা। আলী রীয়াজ বলেন, সংসদ সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে বর্তমান বয়স ২৫ আছে। সেটি কমিয়ে ২১ বিবেচনা করেছি। সংবিধান ১৯৭২ সাল থেকে যে ১৭টি সংশোধন হয়েছে, সেগুলো বিবেচনায় রেখেছি যে এগুলোর শেষ পর্যন্ত কী লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে।

এদিকে এসব সংস্কার প্রস্তাবনাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও তা কার্যকর হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ আহসানুল করিম। রাজনৈতিক ঐকের ওপর জোর তার।

আহসানুল করিম বলেন, কী সংস্কার হবে, সেটা প্রতিটি দল একমত হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জনগণের কথা চিন্তা করে প্রতিটি দলকে এমনভাবে একমত হতে হবে, যাতে সংস্কারের বিষয়ে পরবর্তী বাংলাদেশে যে সরকারই থাকুক না কেন, তাদের যেন একটা দায়বদ্ধতা থাকে।

প্রস্তাবনা শেষে সব অংশীজনের মতামত নিয়েই চূড়ান্ত সংস্কার প্রস্তাবনা তৈরি করবে অন্তর্বর্তী সরকার।