ভারত-পাকিস্তান সহ ৯ দেশে সিনেমার রেকর্ড প্রয়াত অঞ্জনার
- আপডেট সময় : ১২:৩২:৪৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ জানুয়ারী ২০২৫
- / ৩৩৬ বার পড়া হয়েছে
সুদীর্ঘ কেরিয়ারে অঞ্জনা শুধু বাংলাদেশই নয়, ৯টি দেশের ১৩টি ভাষার সিনেমায় অভিনয় করেছেন। দুই বাংলাতে তিনি অভিনয় করেছেন। বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও অভিনয় করেছেন পাকিস্তান, নেপাল, তুরস্ক, থাইল্যান্ড ও শ্রীলংকার সিনেমায়। বাংলাদেশি সিনেমার এক সময়ের প্রভাবশালী প্রযোজক-পরিচালক আজিজুর রহমান বুলিকে ভালোবেসে বিয়ে করে অঞ্জনা সাহা থেকে হয়েছিলেন অঞ্জনা রহমান।
গত শুক্রবার রাত ১টা ১০ মিনিটে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী অঞ্জনা রহমান (Anjana Rahman)। টানা ১০ দিন অচেতন অবস্থায় এক বেসরকারি হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি ছিলেন অঞ্জনা রহমান। কিন্তু আশানুরূপ কোনো উন্নতি না হওয়ায় বুধবার (১ জানুয়ারি) রাতে তাঁকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়েছিল। রক্ত সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বর্ষীয়ান নায়িকা অঞ্জনা রহমান।
ঢাকার বনানী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী ও নৃত্যশিল্পী অঞ্জনা রহমানকে। শনিবার বিকেল ৩টা ১৫ মিনিটে তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন অভিনেত্রীর ছেলে নিশাত রহমান মনি।
এর আগে, বেলা সাড়ে ১১টায় অঞ্জনার মরদেহ নেওয়া হয় তাঁর প্রিয় কর্মস্থল বিএফডিসিতে। শেষবারের মতো এই চিত্রনায়িকাকে দেখতে ছুটে আসেন দীর্ঘদিনের সহকর্মী, ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা। জোহরের নামাজের পর প্রথম জানাজা শেষে অভিনেত্রীর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
সুদীর্ঘ কেরিয়ারে অঞ্জনা শুধু বাংলাদেশই নয়, ৯টি দেশের ১৩টি ভাষার সিনেমায় অভিনয় করেছেন। তাঁর ছবির সংখ্যা তিন শতাধিক। শুধু ওপার বাংলা নয়, এপার বাংলাতেও তিনি অভিনয় করেছেন। বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও অভিনয় করেছেন পাকিস্তান, নেপাল, তুরস্ক, থাইল্যান্ড ও শ্রীলংকার সিনেমায়। অঞ্জনা দাবি করেছিলেন, তিনিই বাংলাদেশের একমাত্র নায়িকা যিনি ৯টি দেশের এতোগুলো ভাষায় প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন। নিজের সময়কালের শীর্ষ জনপ্রিয় সব অভিনেতার সঙ্গেই অভিনয় করেছেন অঞ্জনা। তাদের মধ্যে আছেন- রাজ্জাক, আলমগীর, জসিম, বুলবুল আহমেদ, জাফর ইকবাল, ওয়াসিম, উজ্জ্বল, ফারুক, ইলিয়াস জাভেদ , ইলিয়াস কাঞ্চন, সোহেল চৌধুরী, রুবেল, সুব্রত বড়ুয়া, মান্না প্রমুখ। এছাড়াও এপার বাংলায় মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন অঞ্জনা। ১৯৮৯ সালে মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে অর্জুন ছবিতে অভিনয় করে তিনি প্রশংসিত হন।
১৯৮১ সালে ‘গাংচিল’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য বাংলাদেশের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার লাভ করেন অঞ্জনা। এরপর ১৯৮৬ সালে ‘পরিণীতা’ সিনেমায় ললিতা চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করে একই পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া তিনি ‘পরিণীতা’, ‘মোহনা’ ও ‘রাম রহিম জন’ সিনেমার জন্য তিনবার বাচসাস পুরস্কার লাভ করেন।
এক সময়ের প্রভাবশালী প্রযোজক-পরিচালক আজিজুর রহমান বুলিকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন তিনি। তখন নাম পরিবর্তন করে হয়ে যান অঞ্জনা রহমান। দেশের একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে নিজের নাম পরিবর্তনের ব্যাপারে ২০২৩ সালের অক্টোবরে অঞ্জনা বলেন, ‘‘আমার বিয়ের পর নামের সঙ্গে রহমান যুক্ত হয়েছে। সেটা এখনো আছে। আমি সাহা পরিবারের, হিন্দু ছিলাম আমি।’’
ওই সাক্ষাতকারে তিনি জানান যে, শুধুমাত্র নামই পরিবর্তন করেননি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পরে নামাজ, রোজাও নিয়মিত পালন করেন অঞ্জনা। যদিও অঞ্জনার সঙ্গে আজিজুর রহমান বুলির বিচ্ছেদ হয়ে যায়। কিন্তু এরপরেও তিনি ইসলাম ধর্ম পালন করতেন। এই বিষয়ে অঞ্জনা ওই সাক্ষাতকারে জানিয়েছিলেন, বিয়ে বিচেছদ হয়েছে কিন্তু ইসলাম ধর্ম ছাড়েননি তিনি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের ব্যবসাসফল সিনেমার অন্যতম প্রযোজক-পরিচালক আজিজুর রহমান বুলি। তার পরিচালনায় অঞ্জনা ‘হিম্মতওয়ালী’, ‘নেপালি মেয়ে’, ‘বাপের বেটা’, ‘সন্দেহ’, ‘দেশ-বিদেশ’ ও ‘লালু সরদার’ মোট ছয়টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন।