ঢাকা ১২:৫৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২৫, ২৪ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা প্রবীর মিত্র আর নেই

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১২:১২:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ জানুয়ারী ২০২৫
  • / ৩৪৭ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ঢাকাই সিনেমার অভিনেতা প্রবীর মিত্র মুত্যুবরণ করেছেন। গতকাল রোববার (৫ জানুয়ারি) রাত সোয়া ১০টায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। এখবর সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে মাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশের শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিশা সওদাগর।

প্রয়াত বর্ষীয়ান অভিনেতা প্রবীর মিত্র। গত ২২শে ডিসেম্বর থেকে ঢাকার এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ঋত্বিক ঘটকের নায়ক। আজ (সোমবার, ৬ জানুয়ারি) বাদ জোহর এফডিসিতে জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।

শনিবার, ৪ জানুয়ারি প্রবীর মিত্রের ছেলে মিথুন বাংলাদেশের সময়ের কণ্ঠস্বরকে জানিয়েছিলেন, ‘বাবার অবস্থা বেশি ভালো না। উনার ফুসফুসে ইনফেকশন হয়েছে, ভিতরে রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে।’ আবার ওইদিনই অভিনেতার পুত্র সিফাত ইসলাম ‘প্রথম আলো’ সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ‘বাবা শরীরে অক্সিজেন পাচ্ছিল না। এরপর আইসিইউতে নেওয়া হয়। সেখান থেকে কেবিনে দেওয়া হয়েছিল। এখন আবার এইচডিইউতে রাখা হয়েছে। তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। খারাপ অবস্থার দিকে। ব্লাড লস হচ্ছে, প্লাটিলেটও কমে যাচ্ছে।’ তবে শেষ রক্ষা হল না। নতুন বছরের শুরুতেই না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন প্রবীর মিত্র।

১৯৬৮ সাল থেকে প্রবীর মিত্রের চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু হয়ে ছিল। স্কুলে পড়া অবস্থায় প্রথমবার রবীন্দ্রনাথের ‘ডাকঘর’ নাটকে অভিনয় করেছিলেন তিনি। এরপর পুরনো ঢাকার লালকুঠিতে শুরু হয় তার নাট্যচর্চা। ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম অভিনয় করেন।

১৯৭০ থেকে ১৯৭৯ সালের মধ্যে তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবির তালিকায় রয়েছে ‘জীবন তৃষ্ণা’, ‘জলছবি’, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘সেয়ানা’, ‘জালিয়াত’, ‘রক্তের ডাক’, ‘ফরিয়াদ’, ‘রক্ত শপথ’, ‘চরিত্রহীন’, ‘জয়পরাজয়’, ‘অঙ্গার’, ‘মিন্টু আমার নাম’, ‘ফকির মজনু শাহ’, ‘মধুমিতা’, ‘অশান্ত ঢেউ’, ‘অলঙ্কার’, ‘অনুরাগ’, ‘প্রতিজ্ঞা’, ‘তরুলতা’, ‘গায়ের ছেলে’, ‘পুত্রবধূ’ প্রভৃতি।

১৯৮০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত প্রবীর মিত্র অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবির তালিকায় রয়েছে ‘নৌ চোর’, সুখে থাকো’, ‘ঝুমকা’, ‘সোনারতরী’, ‘সুখের সংসার’, ‘প্রতিহিংসা’, ‘আরশীনগর’, ‘মানসম্মান’, ‘চেনামুখ’, ‘অপমান’, ‘চ্যালেঞ্জ’, ‘ফেরারী বসন্ত’, ‘আঁখি মিলন’, ‘রসের বাইদানী’, ‘নয়নের আলো’, ‘মন পাগলা’, ‘জিপসি সর্দার’, ‘দহন’, ‘মায়ের দাবি’, ‘ঘর ভাঙা ঘর’, রানী কেন ডাকাত’, ‘বেদেনীর প্রেম’ প্রভৃতি।

প্রবীর মিত্র ‘বড় ভালো লোক ছিল’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য ১৯৮৩ সালে প্রথমবাররে মতো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার র্অজন করেন।

প্রসঙ্গত, ১৯৪৩ সালের ১৮ অগস্ট কুমিল্লার চান্দিনায় জন্ম হয় প্রবীর মিত্রর। অভিনেতা পুরো নাম প্রবীর কুমার মিত্র। তাঁর বড় হওয়া পুরনো ঢাকায়, তিনি স্কুলজীবন থেকেই নাট্যচর্চার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সিনেমার দুনিয়ার তাঁর পথচলা শুরু প্রয়াত এইচ আকবরের ‘জলছবি’ ছবির হাত ধরে। ১৯৭১ সালের ১ জানুয়ারি মুক্তি পেয়েছিল এই ছবি। তবে ৫৫ বছরের দীর্ঘ কেরিয়ারে প্রবীর মিত্র ‘নায়ক’ হিসেবে হাতেগোনা সিনেমাতেই অভিনয় করেছেন, তবে তাঁকে নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছিল যখন তিনি পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’-এ অভিনয় করেন।

অদ্বৈত মল্লবর্মণ রচিত উপন্যাস ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ অবলম্বনে সিনেমা বানিয়েছিলেন পরিচালক ঋত্বিক ঘটক। সেখানে কিশোরের চরিত্রে অভিনয় করে নজর কেড়েছিলেন প্রবীর মিত্র। বাংলা সিনেমার ইতিহাসে এক দলিল হয়ে রয়েছে ঋত্বিক ঘটকের এই ছবি।

নিউজটি শেয়ার করুন

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা প্রবীর মিত্র আর নেই

আপডেট সময় : ১২:১২:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ জানুয়ারী ২০২৫

ঢাকাই সিনেমার অভিনেতা প্রবীর মিত্র মুত্যুবরণ করেছেন। গতকাল রোববার (৫ জানুয়ারি) রাত সোয়া ১০টায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। এখবর সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে মাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশের শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিশা সওদাগর।

প্রয়াত বর্ষীয়ান অভিনেতা প্রবীর মিত্র। গত ২২শে ডিসেম্বর থেকে ঢাকার এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ঋত্বিক ঘটকের নায়ক। আজ (সোমবার, ৬ জানুয়ারি) বাদ জোহর এফডিসিতে জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।

শনিবার, ৪ জানুয়ারি প্রবীর মিত্রের ছেলে মিথুন বাংলাদেশের সময়ের কণ্ঠস্বরকে জানিয়েছিলেন, ‘বাবার অবস্থা বেশি ভালো না। উনার ফুসফুসে ইনফেকশন হয়েছে, ভিতরে রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে।’ আবার ওইদিনই অভিনেতার পুত্র সিফাত ইসলাম ‘প্রথম আলো’ সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ‘বাবা শরীরে অক্সিজেন পাচ্ছিল না। এরপর আইসিইউতে নেওয়া হয়। সেখান থেকে কেবিনে দেওয়া হয়েছিল। এখন আবার এইচডিইউতে রাখা হয়েছে। তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। খারাপ অবস্থার দিকে। ব্লাড লস হচ্ছে, প্লাটিলেটও কমে যাচ্ছে।’ তবে শেষ রক্ষা হল না। নতুন বছরের শুরুতেই না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন প্রবীর মিত্র।

১৯৬৮ সাল থেকে প্রবীর মিত্রের চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু হয়ে ছিল। স্কুলে পড়া অবস্থায় প্রথমবার রবীন্দ্রনাথের ‘ডাকঘর’ নাটকে অভিনয় করেছিলেন তিনি। এরপর পুরনো ঢাকার লালকুঠিতে শুরু হয় তার নাট্যচর্চা। ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম অভিনয় করেন।

১৯৭০ থেকে ১৯৭৯ সালের মধ্যে তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবির তালিকায় রয়েছে ‘জীবন তৃষ্ণা’, ‘জলছবি’, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘সেয়ানা’, ‘জালিয়াত’, ‘রক্তের ডাক’, ‘ফরিয়াদ’, ‘রক্ত শপথ’, ‘চরিত্রহীন’, ‘জয়পরাজয়’, ‘অঙ্গার’, ‘মিন্টু আমার নাম’, ‘ফকির মজনু শাহ’, ‘মধুমিতা’, ‘অশান্ত ঢেউ’, ‘অলঙ্কার’, ‘অনুরাগ’, ‘প্রতিজ্ঞা’, ‘তরুলতা’, ‘গায়ের ছেলে’, ‘পুত্রবধূ’ প্রভৃতি।

১৯৮০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত প্রবীর মিত্র অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবির তালিকায় রয়েছে ‘নৌ চোর’, সুখে থাকো’, ‘ঝুমকা’, ‘সোনারতরী’, ‘সুখের সংসার’, ‘প্রতিহিংসা’, ‘আরশীনগর’, ‘মানসম্মান’, ‘চেনামুখ’, ‘অপমান’, ‘চ্যালেঞ্জ’, ‘ফেরারী বসন্ত’, ‘আঁখি মিলন’, ‘রসের বাইদানী’, ‘নয়নের আলো’, ‘মন পাগলা’, ‘জিপসি সর্দার’, ‘দহন’, ‘মায়ের দাবি’, ‘ঘর ভাঙা ঘর’, রানী কেন ডাকাত’, ‘বেদেনীর প্রেম’ প্রভৃতি।

প্রবীর মিত্র ‘বড় ভালো লোক ছিল’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য ১৯৮৩ সালে প্রথমবাররে মতো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার র্অজন করেন।

প্রসঙ্গত, ১৯৪৩ সালের ১৮ অগস্ট কুমিল্লার চান্দিনায় জন্ম হয় প্রবীর মিত্রর। অভিনেতা পুরো নাম প্রবীর কুমার মিত্র। তাঁর বড় হওয়া পুরনো ঢাকায়, তিনি স্কুলজীবন থেকেই নাট্যচর্চার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সিনেমার দুনিয়ার তাঁর পথচলা শুরু প্রয়াত এইচ আকবরের ‘জলছবি’ ছবির হাত ধরে। ১৯৭১ সালের ১ জানুয়ারি মুক্তি পেয়েছিল এই ছবি। তবে ৫৫ বছরের দীর্ঘ কেরিয়ারে প্রবীর মিত্র ‘নায়ক’ হিসেবে হাতেগোনা সিনেমাতেই অভিনয় করেছেন, তবে তাঁকে নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছিল যখন তিনি পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’-এ অভিনয় করেন।

অদ্বৈত মল্লবর্মণ রচিত উপন্যাস ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ অবলম্বনে সিনেমা বানিয়েছিলেন পরিচালক ঋত্বিক ঘটক। সেখানে কিশোরের চরিত্রে অভিনয় করে নজর কেড়েছিলেন প্রবীর মিত্র। বাংলা সিনেমার ইতিহাসে এক দলিল হয়ে রয়েছে ঋত্বিক ঘটকের এই ছবি।