ঢাকা ১২:৩৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২৫, ২৪ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে আরাকান আর্মি!

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১২:৩০:৪৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ জানুয়ারী ২০২৫
  • / ৩৪৮ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ইউনাইটেড লিগ অফ আরাকান (ইউএলএ) এবং এর সামরিক শাখা আরাকান আর্মি একটি লক্ষ্য অর্জনের খুব কাছাকাছি, যা তিন মাস আগে অসম্ভব বলে মনে হয়েছিল। এই লক্ষ্য স্বাধীনতা অর্জন। স্বাধীন দেশ গড়া। আরাকান আর্মি ইতিমধ্যে মায়ানমার ইউনিয়নের রাখাইন (সাবেক আরাকান) রাজ্যের ১৮টি শহরের মধ্যে ১৫টি দখল করেছে। তবে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান এখনও মায়ানমারের সামরিক বাহিনীর হাতে রয়েছে। এই স্থানগুলি হল বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত সিতওয়ে বন্দর। কালাদান মাল্টি-মোডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পের আওতায় ভারত এই বন্দরের পরিকাঠামো উন্নয়নে টাকা ঢেলেছে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চীনের সহায়তায় নির্মিত কিউকফিউ বন্দর এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে মংডু শহর। ২০২৪ সালের শেষ দিনে আরাকান আর্মি গওয়া শহর দখল করে। গত সপ্তাহে বিদ্রোহী আরাকান আর্মি এই শহরটি দখল করে নেয়। এই শহরের কৌশলগত গুরুত্ব রয়েছে, এটি পশ্চিমী সামরিক বাহিনীর আঞ্চলিক কমান্ডের সদর দফতর।

মাত্র কয়েকদিন আগে আরাকান আর্মি সেনাবাহিনীর হাত থেকে মংডু শহর ছিনিয়ে নিয়েছে। এই বিদ্রোহী গোষ্ঠী পুরো রাখাইন রাজ্য দখল করে স্বাধীনতা ঘোষণা করতে সফল হলে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্মের পর এটিই হবে এশিয়ায় প্রথম সফল বিচ্ছিন্নতাবাদী সামরিক অভিযান। ফলে একটি নতুন দেশের জন্ম হতে পারে। রাখাইন রাজ্যের বেশিরভাগ অংশ ও কৌশলগত শহর পালেতোয়া দখল করার পর আরাকান আর্মি মায়ানমায়ারের সামরিক জান্তা সরকাররে সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছে। উভয় পক্ষই চীনের মধ্যস্থতায় হাইগাং চুক্তির আশ্রয় নিয়েছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে স্বাক্ষরিত ওই চুক্তিতে বলা হয়েছে, আমরা সর্বদা সামরিক সমাধানের পরিবর্তে রাজনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে বিদ্যমান অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলি সমাধান করতে প্রস্তুত।

ইউনাইটেড লিগ অফ আরাকান এক বিবৃতিতে অন্য দেশগুলিকেও বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। ইউনাইটেড লিগ অফ আরাকান-এর এই বিবৃতি চীনা ভাষাতেও জারি করা হয়েছে। এতে ULA বলেছে যে তারা রাখাইন রাজ্যে বিদেশি বিনিয়োগ অর্থাৎ ভারত ও চীনের বিনিয়োগ রক্ষা করবে। চীনের নেতৃত্বের প্রশংসা করে আরাকান আর্মি বলেছে যে আরাকান জনগণের বিপ্লবী সরকার সব বিদেশি বিনিয়োগকে স্বাগত জানায় এবং স্বীকৃতি দেয়, যা আরাকান অঞ্চলকে উপকৃত করবে এবং এর উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে সহায়তা করবে। আরাকান আর্মি বলেছে যে সরকার নানা প্রকল্প ও ব্যবসায় জড়িত ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। সম্প্রতি, ভারত ও চীনের শীর্ষ নিরাপত্তা কর্তাদের সঙ্গে গোপন বৈঠক হয়েছে আরাকার আর্মির। তারপরই এই বিবৃতি এসেছে।

রাজনৈতিক স্বীকৃতির জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলেও এটা এখনও স্পষ্ট নয় যে ইউনাইটেড লিগ অফ আরাকান ও আরাকান আর্মি সিত্তওয়ে এবং কিয়াউকফিউ দখলের জন্য সরাসরি আক্রমণ শুরু করবে নাকি চীন ও ভারতের প্রতিক্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করবে। মায়ানমারের বিমান বাহিনী ও নৌবাহিনীর ব্যবহার সত্ত্বেও আরাকান আর্মি এই জয় পেয়েছে। অতএব, শেষ বড় আক্রমণের জন্য পুনরায় সংগঠিত হওয়ার জন্য বিরতির প্রয়োজন হতে পারে, তবে আলোচনার প্রস্তাব এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করার পেছনের আসল কারণটি হল যে যদি সত্যিই স্বাধীনতা অর্জিত হয় তবে কূটনৈতিক স্বীকৃতি পাওয়ার সম্ভাবনা বিবেচনা করা যেতে পারে। এশিয়া ও পশ্চিমা বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোর স্বীকৃতি ছাড়া আরাকান ইউনাইটেড লিগের স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের উদ্দেশ্য সফল হবে না। মায়ানমার সরকারের কাছ থেকে স্বাধীনতার লড়াইয়ে আরও দুটি সংগঠন জড়িত, এই তিনটিকে একসঙ্গে বলা হয় থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স। আরাকান আর্মি ছাড়াও ‘তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) এবং মায়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিডিএ)ও এখন মায়ানমারের সামরিক জান্তার সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছে।চীনের মধ্যস্থতায় এটা সম্ভব হতে পারে

কিন্তু তিনি উত্তর-পশ্চিম সামরিক কমান্ডের সদর দফতর লাশিও শহরটিকে সামরিক জান্তার হাতে ফিরিয়ে দিতে অস্বীকার করেছে আরাকান আর্মি, যেমনটি চীন চায়। সামরিক জান্তা সরকার আলোচনায় রাজি হলে আরাকান বিদ্রোহীরা এখনই স্বাধীনতার জন্য চাপ নাও দিতে পারে। বদলে তারা অন্যান্য সশস্ত্র সংগঠনগুলির সঙ্গে মিলে বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসন পাওয়ার চেষ্টা করতে পারে। এটি আংশিকভাবে নির্ভর করবে অন্যান্য বিদ্রোহী দলগুলো জান্তার বিরুদ্ধে আক্রমণে কতটা সফল। মায়ানমার স্পষ্টতই প্রাচ্যের নতুন সিরিয়া হয়ে উঠছে, কিন্তু এখনও পর্যন্ত প্রত্যাশা মতো বিশ্বের বেশিরভাগ অংশের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে আরাকান আর্মি!

আপডেট সময় : ১২:৩০:৪৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ জানুয়ারী ২০২৫

ইউনাইটেড লিগ অফ আরাকান (ইউএলএ) এবং এর সামরিক শাখা আরাকান আর্মি একটি লক্ষ্য অর্জনের খুব কাছাকাছি, যা তিন মাস আগে অসম্ভব বলে মনে হয়েছিল। এই লক্ষ্য স্বাধীনতা অর্জন। স্বাধীন দেশ গড়া। আরাকান আর্মি ইতিমধ্যে মায়ানমার ইউনিয়নের রাখাইন (সাবেক আরাকান) রাজ্যের ১৮টি শহরের মধ্যে ১৫টি দখল করেছে। তবে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান এখনও মায়ানমারের সামরিক বাহিনীর হাতে রয়েছে। এই স্থানগুলি হল বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত সিতওয়ে বন্দর। কালাদান মাল্টি-মোডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পের আওতায় ভারত এই বন্দরের পরিকাঠামো উন্নয়নে টাকা ঢেলেছে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চীনের সহায়তায় নির্মিত কিউকফিউ বন্দর এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে মংডু শহর। ২০২৪ সালের শেষ দিনে আরাকান আর্মি গওয়া শহর দখল করে। গত সপ্তাহে বিদ্রোহী আরাকান আর্মি এই শহরটি দখল করে নেয়। এই শহরের কৌশলগত গুরুত্ব রয়েছে, এটি পশ্চিমী সামরিক বাহিনীর আঞ্চলিক কমান্ডের সদর দফতর।

মাত্র কয়েকদিন আগে আরাকান আর্মি সেনাবাহিনীর হাত থেকে মংডু শহর ছিনিয়ে নিয়েছে। এই বিদ্রোহী গোষ্ঠী পুরো রাখাইন রাজ্য দখল করে স্বাধীনতা ঘোষণা করতে সফল হলে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্মের পর এটিই হবে এশিয়ায় প্রথম সফল বিচ্ছিন্নতাবাদী সামরিক অভিযান। ফলে একটি নতুন দেশের জন্ম হতে পারে। রাখাইন রাজ্যের বেশিরভাগ অংশ ও কৌশলগত শহর পালেতোয়া দখল করার পর আরাকান আর্মি মায়ানমায়ারের সামরিক জান্তা সরকাররে সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছে। উভয় পক্ষই চীনের মধ্যস্থতায় হাইগাং চুক্তির আশ্রয় নিয়েছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে স্বাক্ষরিত ওই চুক্তিতে বলা হয়েছে, আমরা সর্বদা সামরিক সমাধানের পরিবর্তে রাজনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে বিদ্যমান অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলি সমাধান করতে প্রস্তুত।

ইউনাইটেড লিগ অফ আরাকান এক বিবৃতিতে অন্য দেশগুলিকেও বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। ইউনাইটেড লিগ অফ আরাকান-এর এই বিবৃতি চীনা ভাষাতেও জারি করা হয়েছে। এতে ULA বলেছে যে তারা রাখাইন রাজ্যে বিদেশি বিনিয়োগ অর্থাৎ ভারত ও চীনের বিনিয়োগ রক্ষা করবে। চীনের নেতৃত্বের প্রশংসা করে আরাকান আর্মি বলেছে যে আরাকান জনগণের বিপ্লবী সরকার সব বিদেশি বিনিয়োগকে স্বাগত জানায় এবং স্বীকৃতি দেয়, যা আরাকান অঞ্চলকে উপকৃত করবে এবং এর উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে সহায়তা করবে। আরাকান আর্মি বলেছে যে সরকার নানা প্রকল্প ও ব্যবসায় জড়িত ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। সম্প্রতি, ভারত ও চীনের শীর্ষ নিরাপত্তা কর্তাদের সঙ্গে গোপন বৈঠক হয়েছে আরাকার আর্মির। তারপরই এই বিবৃতি এসেছে।

রাজনৈতিক স্বীকৃতির জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলেও এটা এখনও স্পষ্ট নয় যে ইউনাইটেড লিগ অফ আরাকান ও আরাকান আর্মি সিত্তওয়ে এবং কিয়াউকফিউ দখলের জন্য সরাসরি আক্রমণ শুরু করবে নাকি চীন ও ভারতের প্রতিক্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করবে। মায়ানমারের বিমান বাহিনী ও নৌবাহিনীর ব্যবহার সত্ত্বেও আরাকান আর্মি এই জয় পেয়েছে। অতএব, শেষ বড় আক্রমণের জন্য পুনরায় সংগঠিত হওয়ার জন্য বিরতির প্রয়োজন হতে পারে, তবে আলোচনার প্রস্তাব এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করার পেছনের আসল কারণটি হল যে যদি সত্যিই স্বাধীনতা অর্জিত হয় তবে কূটনৈতিক স্বীকৃতি পাওয়ার সম্ভাবনা বিবেচনা করা যেতে পারে। এশিয়া ও পশ্চিমা বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোর স্বীকৃতি ছাড়া আরাকান ইউনাইটেড লিগের স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের উদ্দেশ্য সফল হবে না। মায়ানমার সরকারের কাছ থেকে স্বাধীনতার লড়াইয়ে আরও দুটি সংগঠন জড়িত, এই তিনটিকে একসঙ্গে বলা হয় থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স। আরাকান আর্মি ছাড়াও ‘তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) এবং মায়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিডিএ)ও এখন মায়ানমারের সামরিক জান্তার সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছে।চীনের মধ্যস্থতায় এটা সম্ভব হতে পারে

কিন্তু তিনি উত্তর-পশ্চিম সামরিক কমান্ডের সদর দফতর লাশিও শহরটিকে সামরিক জান্তার হাতে ফিরিয়ে দিতে অস্বীকার করেছে আরাকান আর্মি, যেমনটি চীন চায়। সামরিক জান্তা সরকার আলোচনায় রাজি হলে আরাকান বিদ্রোহীরা এখনই স্বাধীনতার জন্য চাপ নাও দিতে পারে। বদলে তারা অন্যান্য সশস্ত্র সংগঠনগুলির সঙ্গে মিলে বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসন পাওয়ার চেষ্টা করতে পারে। এটি আংশিকভাবে নির্ভর করবে অন্যান্য বিদ্রোহী দলগুলো জান্তার বিরুদ্ধে আক্রমণে কতটা সফল। মায়ানমার স্পষ্টতই প্রাচ্যের নতুন সিরিয়া হয়ে উঠছে, কিন্তু এখনও পর্যন্ত প্রত্যাশা মতো বিশ্বের বেশিরভাগ অংশের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেনি।