ঢাকা ১০:২৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

নতুন শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবইয়ে উঠে এসেছে ২৪ এর গণঅভ্যুত্থান

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৩:১২:১৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ জানুয়ারী ২০২৫
  • / ৩৫০ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ইতিহাসের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে ‘২৪ এর গণঅভ্যুত্থান গল্প-কবিতা, সংকলন এবং ছবি ও গ্রাফিতির মাধ্যমে স্থান পেয়েছে ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবইয়ে। থাকছে শহীদ আবু সাঈদ, মীর মুগ্ধের বিরত্বগাথাও। ২০১৪, ১৮ ও ২৪ সালে আওয়ামী লীগের প্রহসনের নির্বাচন, গুম, খুন, হত্যাসহ বিরোধী মতের ওপর দমন পীড়ন যেমন তুলে ধরা হয়েছে, তেমনি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জনরোষ থেকে বাঁচতে শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়ার কথাও স্থান পেয়েছে পাঠ্যবইয়ে।

স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে পুলিশের গুলির সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে আবু সাঈদ। মীর মুগ্ধের ‘পানি লাগবে পানি’র কথা মনে করিয়ে দেয় কারবালার কাহিনী। এসবই এখন ইতিহাস, পাঠ্যবইয়ের পাতায় পাতায়।

২০২৫ শিক্ষাবর্ষের ৫ম থেকে ৯ম-১০ম শ্রেণির বাংলা ও ইংরেজি বইয়ে গল্প-কবিতা, সংকলন এবং ছবি ও গ্রাফিতির মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থান। ৫ম শ্রেণির বাংলা বইয়ে ‘আমরা তোমাদের ভুলবো না’ শীর্ষক পাঠ্যে শহিদ তিতুমীর, প্রীতিলতা, ৫২’র রফিক-সালাম-বরকত-জব্বার, ১৯৮৭’র শহিদ নূর হোসেন, ৯০ এর ডা. মিলন ও জেহাদ।

ইতিহাসের এই ধারাবাহিকতায় স্থান পেয়েছে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহিদ আবু সাঈদ, মীর মুগ্ধের নাম। ষষ্ঠ শ্রেণির ‘চারুপাঠ’ বইয়ে ‘কার্টুন ব্যঙ্গচিত্র ও পোস্টারের ভাষা’ বোঝাতে হেলিকপ্টার থেকে গুলি করার গ্রাফিতি।

৭ম শ্রেণির ‘স্বপ্তবর্ণ’ বইয়ে যুক্ত হয়েছে হাসান রোবায়েতের ‘সিঁথি’ নামক জুলাইয়ের কবিতা। একই শ্রেণির ইংরেজি বইয়ে আলোচনা করা হয়েছে জেনারেশন জেড এবং ২৪ এর গণঅভ্যুত্থান।

৮ম শ্রেণির সাহিত্য কণিকা বইয়ে ‘গণঅভ্যুত্থানের কথা’ শীর্ষক গদ্যে ১৯৬৯, ১৯৯০ এবং ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থান। প্রেক্ষাপট আলোচনা করতে তুলে ধরা হয়েছে- ২০১৪, ১৮ ও ২৪ সালে মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে শেখ হাসিনা নানান কায়দাকানুন করে একের পর এক প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যম ক্ষমতা দখল এবং সবশেষ কোটা সংস্কার আন্দোলনে ব্যাপক নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ। অবশেষে জনরোষ থেকে বাঁচার জন্য শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।

৮ম শ্রেণির ইংরেজি বইয়ে দেশের সামাজিক এবং রাজনৈতিক পরিবর্তনে নারীর অবদান তুলে ধরা হয়েছে। যেখানে ব্রিটিশবিরোধী, স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ আনা হয়েছে।

২৪ এ কীভাবে ছাত্রীরা হল থেকে বের হয়ে আন্দোলনে অংশ নেয়, কাঁদানে গ্যাস ও গুলি উপেক্ষা করে কীভাবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের খাবার সরবরাহ করে মায়েরা, শহীদ আবু সাঈদের মায়ের ‘হামার ব্যাটাক মারলু কেনে’ বাক্যও তুলে ধরা হয়েছে।

দেশের ক্যালেন্ডারে জুলাই থামেনি, ৫ আগস্ট-ই হয়ে যায় ৩৬ জুলাই। ১৬ জুলাই রংপুরে আবু সাঈদের শাহাদাৎ বরণের বিরত্বগাথা তুলে ধরা হয়েছে ৯ম-১০ম শ্রেণির বাংলা সাহিত্যের ‘আমাদের নতুন গৌরবগাথা’ গদ্যে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারি দলের বহিরাগত সন্ত্রাসীরা ছাত্রীদের ওপর চালানো বর্বরতার চিত্রও ফুটে উঠেছে। একই শ্রেণির ইংরেজি বইয়ে জুলাই-আগস্টের ‘গ্রাফিতি’র কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। পাঠ্যবইয়ে ইতিহাসের ধারাবাহিকতা রক্ষা করেই ২৪ এর গণঅভ্যুত্থান তুলে ধরা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআর বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের বিভিন্ন বিষয়, গ্রাফিতি থেকে শুরু করে ইতিহাসের যে বিভিন্ন ব্যাখ্যা বা বর্ণনা পাঠ্যপুস্তকে এসেছে আমি মনে করি এটা স্বাভাবিক।’

এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ. কে. এম রিয়াজুল হাসান বলেন, ‘কোনটার আবেদন কী, কোনো টা সার্বজনীন কি না, কোনটা কোন বয়সের জন্য উপযোগী- সেগুলো আমাদের ভাবতে হয়েছে।’

তবে ৯ম-১০ম শ্রেণির ইংরেজি বইয়ে জুলাই-আগস্টের ‘গ্রাফিতি’ অধ্যায়ে রংপুরে আবু সাঈদকে হত্যার তারিখ ১৬ জুলাইয়ের বদলে ভুল করে লেখা হয়েছে ১৭ জুলাই।

এনসিটিবি চেয়ারম্যান বলেন, এটা আমরা অনলাইন বইতে ঠিক করে দিয়েছি। এবং যে সব বই এখনো ছাপা হয় নাই সে বইয়ের ফর্মায় ওই প্লেটটা সংশোধন করে দিয়েছি।’

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় শিক্ষার্থীদের আঁকা, বাছাই করা ৪০টি গ্রাফিতি প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের প্রায় ৯০টি বইয়ের ব্যাক কাভারে রাখা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

নতুন শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবইয়ে উঠে এসেছে ২৪ এর গণঅভ্যুত্থান

আপডেট সময় : ০৩:১২:১৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ জানুয়ারী ২০২৫

ইতিহাসের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে ‘২৪ এর গণঅভ্যুত্থান গল্প-কবিতা, সংকলন এবং ছবি ও গ্রাফিতির মাধ্যমে স্থান পেয়েছে ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবইয়ে। থাকছে শহীদ আবু সাঈদ, মীর মুগ্ধের বিরত্বগাথাও। ২০১৪, ১৮ ও ২৪ সালে আওয়ামী লীগের প্রহসনের নির্বাচন, গুম, খুন, হত্যাসহ বিরোধী মতের ওপর দমন পীড়ন যেমন তুলে ধরা হয়েছে, তেমনি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জনরোষ থেকে বাঁচতে শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়ার কথাও স্থান পেয়েছে পাঠ্যবইয়ে।

স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে পুলিশের গুলির সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে আবু সাঈদ। মীর মুগ্ধের ‘পানি লাগবে পানি’র কথা মনে করিয়ে দেয় কারবালার কাহিনী। এসবই এখন ইতিহাস, পাঠ্যবইয়ের পাতায় পাতায়।

২০২৫ শিক্ষাবর্ষের ৫ম থেকে ৯ম-১০ম শ্রেণির বাংলা ও ইংরেজি বইয়ে গল্প-কবিতা, সংকলন এবং ছবি ও গ্রাফিতির মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থান। ৫ম শ্রেণির বাংলা বইয়ে ‘আমরা তোমাদের ভুলবো না’ শীর্ষক পাঠ্যে শহিদ তিতুমীর, প্রীতিলতা, ৫২’র রফিক-সালাম-বরকত-জব্বার, ১৯৮৭’র শহিদ নূর হোসেন, ৯০ এর ডা. মিলন ও জেহাদ।

ইতিহাসের এই ধারাবাহিকতায় স্থান পেয়েছে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহিদ আবু সাঈদ, মীর মুগ্ধের নাম। ষষ্ঠ শ্রেণির ‘চারুপাঠ’ বইয়ে ‘কার্টুন ব্যঙ্গচিত্র ও পোস্টারের ভাষা’ বোঝাতে হেলিকপ্টার থেকে গুলি করার গ্রাফিতি।

৭ম শ্রেণির ‘স্বপ্তবর্ণ’ বইয়ে যুক্ত হয়েছে হাসান রোবায়েতের ‘সিঁথি’ নামক জুলাইয়ের কবিতা। একই শ্রেণির ইংরেজি বইয়ে আলোচনা করা হয়েছে জেনারেশন জেড এবং ২৪ এর গণঅভ্যুত্থান।

৮ম শ্রেণির সাহিত্য কণিকা বইয়ে ‘গণঅভ্যুত্থানের কথা’ শীর্ষক গদ্যে ১৯৬৯, ১৯৯০ এবং ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থান। প্রেক্ষাপট আলোচনা করতে তুলে ধরা হয়েছে- ২০১৪, ১৮ ও ২৪ সালে মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে শেখ হাসিনা নানান কায়দাকানুন করে একের পর এক প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যম ক্ষমতা দখল এবং সবশেষ কোটা সংস্কার আন্দোলনে ব্যাপক নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ। অবশেষে জনরোষ থেকে বাঁচার জন্য শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।

৮ম শ্রেণির ইংরেজি বইয়ে দেশের সামাজিক এবং রাজনৈতিক পরিবর্তনে নারীর অবদান তুলে ধরা হয়েছে। যেখানে ব্রিটিশবিরোধী, স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ আনা হয়েছে।

২৪ এ কীভাবে ছাত্রীরা হল থেকে বের হয়ে আন্দোলনে অংশ নেয়, কাঁদানে গ্যাস ও গুলি উপেক্ষা করে কীভাবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের খাবার সরবরাহ করে মায়েরা, শহীদ আবু সাঈদের মায়ের ‘হামার ব্যাটাক মারলু কেনে’ বাক্যও তুলে ধরা হয়েছে।

দেশের ক্যালেন্ডারে জুলাই থামেনি, ৫ আগস্ট-ই হয়ে যায় ৩৬ জুলাই। ১৬ জুলাই রংপুরে আবু সাঈদের শাহাদাৎ বরণের বিরত্বগাথা তুলে ধরা হয়েছে ৯ম-১০ম শ্রেণির বাংলা সাহিত্যের ‘আমাদের নতুন গৌরবগাথা’ গদ্যে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারি দলের বহিরাগত সন্ত্রাসীরা ছাত্রীদের ওপর চালানো বর্বরতার চিত্রও ফুটে উঠেছে। একই শ্রেণির ইংরেজি বইয়ে জুলাই-আগস্টের ‘গ্রাফিতি’র কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। পাঠ্যবইয়ে ইতিহাসের ধারাবাহিকতা রক্ষা করেই ২৪ এর গণঅভ্যুত্থান তুলে ধরা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআর বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের বিভিন্ন বিষয়, গ্রাফিতি থেকে শুরু করে ইতিহাসের যে বিভিন্ন ব্যাখ্যা বা বর্ণনা পাঠ্যপুস্তকে এসেছে আমি মনে করি এটা স্বাভাবিক।’

এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ. কে. এম রিয়াজুল হাসান বলেন, ‘কোনটার আবেদন কী, কোনো টা সার্বজনীন কি না, কোনটা কোন বয়সের জন্য উপযোগী- সেগুলো আমাদের ভাবতে হয়েছে।’

তবে ৯ম-১০ম শ্রেণির ইংরেজি বইয়ে জুলাই-আগস্টের ‘গ্রাফিতি’ অধ্যায়ে রংপুরে আবু সাঈদকে হত্যার তারিখ ১৬ জুলাইয়ের বদলে ভুল করে লেখা হয়েছে ১৭ জুলাই।

এনসিটিবি চেয়ারম্যান বলেন, এটা আমরা অনলাইন বইতে ঠিক করে দিয়েছি। এবং যে সব বই এখনো ছাপা হয় নাই সে বইয়ের ফর্মায় ওই প্লেটটা সংশোধন করে দিয়েছি।’

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় শিক্ষার্থীদের আঁকা, বাছাই করা ৪০টি গ্রাফিতি প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের প্রায় ৯০টি বইয়ের ব্যাক কাভারে রাখা হয়েছে।