সাত বছর পর লন্ডনে মা-ছেলের সাক্ষাৎ
- আপডেট সময় : ০৪:৩৭:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ জানুয়ারী ২০২৫
- / ৭১১ বার পড়া হয়েছে
উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে পৌঁছেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। লন্ডনের হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে বেগম খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানান তার বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান। এর মাধ্যমে প্রায় সাড়ে সাত বছর পর সাক্ষাৎ হলো মা-ছেলের। বেগম খালেদা জিয়াকে দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। মুহূর্ত যেন থমকে যায় মা-ছেলের আবেগী আলিঙ্গনে।
আজ বুধবার (৮ জানুয়ারি) স্থানীয় সময় সকাল ৯টার দিকে (বাংলাদেশ সময় বেলা ৩টার দিকে) খালেদা জিয়াকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্স লন্ডনের হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
হিথ্রো বিমানবন্দরে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমান, পুত্রবধু ডা. জোবাইদা রহমান বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান। এসময় জিয়া পরিবারের তৃতীয় প্রজন্মের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির চেয়ারপারসন সবশেষ ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই লন্ডন সফরে এসেছিলেন। এরপর তার আর কোনও বিদেশ সফরও হয়নি, ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে সরাসরি দেখাও হয়নি। দীর্ঘদিন পর মাকে কাছে পেয়ে কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে থাকতে দেখা যায় ছেলে তারেক রহমানকে।
এর আগে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে তিনি গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’ থেকে বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা দেন। সে সময় তার গাড়িবহরের পাশে ছিল দলীয় নেতাকর্মীদের ভিড়। তাকে বিদায় জানানোর জন্য পথে পথে নেতাকর্মীদের ঢল নেমেছিল।
সবশেষ তিনি লন্ডন যান ২০১৭ সালের জুলাই মাসে। দীর্ঘ সাড়ে সাত বছর পর লন্ডনে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা হবে তারেক রহমান ও তার পরিবারের। খালেদা জিয়ার এই সফরে সাত চিকিৎসকসহ লন্ডন গিয়েছেন ১৫ জন।
নানা শারীরিক জটিলতা, জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণ কাটিয়ে অবশেষে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিদেশে পা রাখলেন। দেশে ফেরার পথে ওমরাহ পালন করতে পারেন বেগম জিয়া। তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গণতন্ত্রের লড়াই করতে আবার দেশে ফিরবেন এমনটাই প্রত্যাশা বিএনপির নেতাকর্মীদের।
২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর থেকে লন্ডনে বসবাস করছেন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান, তার স্ত্রী ডাক্তার জুবাইদা রহমান ও তাদের মেয়ে জাইমা রহমান। আর ২০১৭ সাল থেকে লন্ডনে আছেন ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান ও তার দুই মেয়ে জাহিয়া রহমান ও জাফিয়া রহমান।
১৯৮২ সালে ৩ জানুয়ারি খালেদা জিয়া দলে প্রাথমিক সদস্যপদ নিয়ে গৃহবধূ থেকে রাজনীতিতে আসেন। ১৯৮৩ সালে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান, ১৯৮৪ সালে ১২ জানুয়ারি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও একই বছরে ১ মে চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পান। এরপর থেকে ‘স্বৈরাচারের সঙ্গে কোনো আপস নয়’ এই নীতিতে অটুট থেকে ৯ বছর এরশাদবিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যান। এরশাদের অধীনে ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে যাননি তিনি। ওই নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় খালেদা জিয়া আপসহীন নেত্রী হিসেবে পরিচিতি পান। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করে সরকার গঠন করে। দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা জিয়া।
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ‘একতরফা’ নির্বাচন করে বিএনপি আবারও ক্ষমতায় আসে। বেশিদিন টিকতে পারেননি তারা। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হয়। পরের নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। এরপর ২০০১ সালের আবারও ক্ষমতায় আসে বিএনপি। ২০০৬ সালে ২৮ অক্টোবর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে দলটি। ২০০৭ সালে ২২ জানুয়ারির নির্বাচন আওয়ামী লীগ বয়কট করলে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দেশজুড়ে শুরু হয় তুমুল আন্দোলন। এর প্রভাবে ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন ১১/১ সরকার আবির্ভাব ঘটে। দুর্নীতির দায়ে সপরিবারে খালেদা জিয়াকে জেলে যেতে হয়। পরবর্তীতে জামিনে মুক্তি পান । দুই ছেলেকে বিদেশে চলে যেতে হয়। বড় ছেলে তারেক রহমান এখনও দেশে ফিরতে পারেননি। আরেক ছেলে আরাফাত রহমান কোকো বিদেশের মাটিতেই মারা গেছেন।