৪৩ পণ্যে ভ্যাট, বিত্তবানদের আয়কর বাড়ানোর দাবি ক্যাবের
- আপডেট সময় : ০৩:০৮:১৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ জানুয়ারী ২০২৫
- / ৩৬৮ বার পড়া হয়েছে
ভ্যাট বাড়াতে প্রস্তাবিত ৪৩ পণ্য-সেবা নিত্যপণ্যের মধ্যে পড়ে না, আর এ কারণে বাজারে এর প্রভাব পড়বে না বলে দাবি করেছেন এনবিআর চেয়ারম্যান। তবে বাড়তি ভ্যাটে নিত্যপণ্যের দামে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ড. আল আমিন। আর ক্যাব বলছে, প্রস্তাবিত পণ্যগুলো নিত্য পণ্য না হলেও জনজীবনে অত্যাবশ্যকীয় হওয়ায় জীবনযাত্রায় ব্যয় বাড়াবে, যার প্রভাব পড়বে নিত্যপণ্যের দামেও। তাই, ভ্যাটে নজর না দিয়ে বিত্তবানদের আয়কর বাড়ানোর দাবি ক্যাবের।
অর্থ বছরের মাঝামাঝি এসে ৪৩ ধরনের পণ্য ও সেবায় বিদ্যমান ৫ থেকে ১০ শতাংশ ভ্যাট বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে এনবিআর। বাস্তবায়নে অপেক্ষা রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের।
এনবিআরের প্রস্তাবনায় আবাসিক হোটেল-রেস্তোরাঁ ছাড়াও পোশাক, ওষুধ, বিস্কুট, আচারসহ বিভিন্ন পণ্যে ভ্যাট বাড়বে। এছাড়া সাবান, ডিটারজেন্ট, পেইন্ট, সুপারি ও আরও ৭টি পণ্যের আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক বাড়তে পারে।
বাড়তি ভ্যাটে নিত্যপণ্যের দামে প্রভাব পড়বে না- অর্থ উপদেষ্টার এমন মন্তব্যে সুর মিলিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যানের দাবি- প্রস্তাবিত সবকিছুই নিত্যপণ্যের বাইরে। তবে, ব্যাংকিং খাতে ধস ও করপোরেট ট্যাক্স ফাঁকির চাপেই এমন সিদ্ধান্ত বলে ইঙ্গিত দেন তিনি।
এনবিআরের চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান বলেন, ‘বেশ কিছু ব্যাংক নন-পারফরেমবল হয়ে গেছে। তারপর আমরা ট্যাক্স পাচ্ছি না। আরো কিছু বিষয় আছে। বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আমরা কর পাচ্ছি না। তারপর আমরা ব্যাপক হারে ছাড় দিয়েছি। রেভেনিউ যদি জেনারেট না করতে পারি আমাদের ঋণের বোঝা আরো বাড়বে।’
তিনি বলেন, ‘যেসব পণ্য মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় না, অসংখ্য পণ্য আছে যেগুলোতে আমরা ডিউটি স্ট্রাকচারটা একটু রেশনালাইজ করার চেষ্টা করেছি।’
ব্যবসায়ীদের অধিক মুনাফার সঙ্গে বাড়তি ভ্যাট শুধু জনগণের ওপরেই চাপছে কি না এমন প্রশ্নে একই সুরে কথা বললেন ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসকও।
প্রশাসক হাফিজুর রহমান বলেন, ‘দাম বাড়লে সেল একটু কম হয়। এটা একটু স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে সামগ্রিকভাবে যেটা হবে যেহেতু কিছু পণ্যের ট্যাক্স কমে গেছে সেটা কমার কারণে বা নতুন করে যেখানে বাড়ছে তার কারণে বড় ধরনের কোনো প্রভাব পড়বে বলে আমার মনে হয় না।’
এনবিআরের সাবেক সদস্য বলছেন, ব্যবসায়ীদের লভ্যাংশ হাত দিতে না পারায় ভ্যাটের বোঝা বহন করতে হচ্ছে ভোক্তাকেই।
এনবিআরের সাবেক সদস্য মো. আব্দুল কাফী বলেন, ‘তেল, চিনি, চাল এগুলোর দাম আমরা কমিয়েছি। কর মওকুফ করেছি। তো মানুষ কি এ কয়টা জিনিসই ব্যবহার করে? সে কি জামা-কাপড় কেনেনা, মোবাইল ব্যবহার করে না? তাই মুনাফাটা কমিয়ে কিছুটা আপনারা দায়িত্ব নেন। সেটা রিকোয়েস্ট করতে পারি। কিন্তু আপনার পণ্যমূল্য কত হবে এটা আপনার অগ্রাধিকার।’
বাড়তি ভ্যাটে নিত্যপণ্যের দামে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ড. আল আমিন। তবে নিরুপায় হয়েই মূল্য সংযোজন কর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘করহার কম থাকলে ব্যবসায়ীরা লাভবান হয়ে যেমন সরকারকে দিতে পারে সেক্ষেত্রে বিক্রির স্কেলও বাড়ে। আবার কর হার বেশি থাকলে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে মানুষের সক্ষমতা যদি না বাড়ে তাহলে একটা প্রভাব থেকে যেতেই পারে।’
এনবিআরের প্রস্তাবিত পণ্যগুলো নিত্য পণ্য না হলেও মানুষের জীবনে অত্যাবশ্যকীয় হওয়ায় এসব পণ্যের দাম বাড়লে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে সীমিত আয়ের মানুষের। যার প্রভাব পড়বে নিত্যপণ্যের ওপরেও। তাই, ভ্যাটে নজর না দিয়ে বিত্তবানদের আয়কর বাড়ানোর দাবি ক্যাবের।
ক্যাবের সহ-সভাপদতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘অর্থ উপদেষ্টা বলছেন এগুলো নিত্যপণ্য নয়। তারপরও এগুলো অত্যাবশ্যকীয় পণ্য, যেগুলো আমাদের জীবনযাত্রাকে অনেকভাবে প্রভাবিত করে। তার যখন খরচ বাড়বে তখন সাধারণতই কোনো না কোনো জায়গায় কাটছাট করে তাকে এগুলো করতে হবে।’
চলতি কর বর্ষের প্রথম ৫ মাসে এনবিআরের ঘাটতি ৪২ হাজার কোটি টাকা। এরই মধ্যে বাংলাদেশ সফরে ১২ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আহরণের পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ। যদিও সে পরামর্শ আমলে নিচ্ছে না দাবি করে এনবিআর বলছে, বিগত ৫ মাসে নিত্যপণ্যের ছাড় ও রাজস্ব আহরণের ঘাটতি মেটাবে আগামী ৬ মাসে।