ঢাকা ০২:৫২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

সিরিয়ায় আসাদ সরকারের পতনের এক মাস

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৩:৫৩:৩৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারী ২০২৫
  • / ৩৫৭ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সিরিয়ায় আসাদ সরকারের পতনের এক মাস পেরিয়ে গেলেও স্বস্তি নেই জনমনে। ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম বলছে, দেশটিতে প্রতিদিন ক্ষুধার সাথে লড়াই করছে অন্তত ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র মানবিক সহায়তার প্রশ্নে সাময়িকভাবে সিরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পরিকল্পনা জানালেও বিশেষজ্ঞদের দাবি, অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানো সহজ হবে না।

২০০০ সালে প্রেসিডেন্ট পদে ক্ষমতা নেয়ার টানা দুই যুগ পর সিরিয়ায় বাশার আল আসাদের পতন হয় গেল বছরের ৮ ডিসেম্বর। স্বৈরাচারী শাসককে ক্ষমতাচ্যুত করার এক মাস অতিবাহিত হলেও সিরিয়ার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে স্বস্তিতে নেই দেশটির জনগণ। আর ২০১১ সাল থেকে দেশটিতে চলছে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ। ১৩ বছর পরও থামেনি লড়াই-রক্তপাত।

বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘পরিস্থিতি আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে। তবে কিছু সমস্যা রয়েই গেছে। লড়াই করতে করতে আমরা ক্লান্ত। আমাদের অর্থ সংকট বেড়েই চলছে। তবে আশাহত নই। যারা দেশ পুনর্গঠনে পরিশ্রম করছেন তাদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা আছে।’

আরেকজন বলেন, ‘বাশার আল-আসাদের পতনের পর এত অল্প সময়ের ব্যবধানে প্রত্যাশা নিয়ে ভাবতে চাই না। সরকারের পতন হলেও, দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখনও আসাদের নিয়ন্ত্রণ মুক্ত হয়নি।’

এমন পরিস্থিতিতে সিরিয়ার রাজনৈতিক ব্যবস্থার সংস্কার, অর্থনীতি পুনর্গঠন ও মানবিক সংকট থেকে পরিত্রাণকেই গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে দেশটির ওপর আরোপিত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা।

বুধবার ফ্রান্সের পররাষ্ট্র দপ্তর জানায়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন যদি ধীরে ধীরে সিরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় তাহলে মানবিক সহায়তা পাঠানোর পথ সুগম হবে। আর নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি তুলে না নিলেও গেল সোমবার মানবিক সহায়তার প্রশ্নে সিরিয়ার ওপর আনা কয়েকটি নিষেধাজ্ঞা শিথিলের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই শিথিলতা কার্যকর থাকবে আগামী ৬ মাস, ৭ জুলাই পর্যন্ত।

বাশার আল-আসাদের পতনের পর সিরিয়ার বিমান ব্যবস্থা অকার্যকর করতে কয়েক দফায় রাজধানী দামেস্কে হামলা চালায় ইসরাইল। যদিও, অবশেষে সচল হয়েছে দামেস্ক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্যক্রম। ১৩ বছর পর এই প্রথম কাতারের দোহা থেকে বেসামরিক বিমান অবতরণ করেছে দামেস্কে। এই ফ্লাইটে এমন অনেক সিরীয় নাগরিক ছিলেন যারা আসাদের পতনের পর এই প্রথম দেশে ফিরলেন। মঙ্গলবার সকালে আরব আমিরাতের শারজাহ’র উদ্দেশে ছেড়ে গেছে বিমানবন্দরের প্রথম ফ্লাইট।

পরবর্তীতে আলেপ্পো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্যক্রম সচলের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সিরীয় এভিয়েশন ও এয়ার কন্ট্রোল বিভাগ। ২০১২ সালে আসাদ রেজিমের অপশাসনের জেরে বেশিরভাগ এয়ারলাইন্স কোম্পানি দামেস্ক বিমানবন্দরে ফ্লাইট উড্ডয়ন ও অবতরণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এতে লেবানন বা জর্ডান হয়ে বিদেশ যাত্রা করতে বাধ্য হতেন সিরীয় নাগরিকরা। মঙ্গলবার, কাতার এয়ার ওয়েজই প্রথম দামেস্কে বিমান অবতরণের সিদ্ধান্ত নেয়।

বিমানবন্দর সচল হলেও সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে থাকা চ্যালেঞ্জের তালিকাও নেহাত ছোট নয়। আসাদ বিরোধী সংগঠন- হায়াত তাহরির আল-শাম বা এইচটিএস, যাদের একচ্ছত্র আধিপত্য অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর- তাদেরকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে এখনও নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কিছু দেশ। ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম বলছে, দেশটিতে ১৩ মিলিয়নের বেশি মানুষ পেট ভরে খেতে পায় না। ফলে পশ্চিমা সহায়তা ছাড়া এইচটিএস কোনো উপায়ে সিরীয়দের খাদ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে-সেটিও পরিষ্কার নয়।

যদিও প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ দেশটি ভূমধ্যসাগরের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। ৯৪ শতাংশ শিক্ষিতের হার গোটা মধ্যপ্রাচ্যে সর্বোচ্চ। ফলে অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি সুযোগও আছে সিরীয়দের সামনে। কাতার ও আরব আমিরাতের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে দামেস্কের ওপর আরোপিত বেশ কিছু বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞাও শিথিলের পরিকল্পনা জানাচ্ছে হোয়াইট হাউজ। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, এ ক্ষেত্রে সিরিয়ার সরকারকে রাশিয়া ও ইরানের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও নিশ্চিত করতে হবে।

আল জাজিরার প্রতিবেদন বলছে, ২০১১ সাল থেকে ২০২১ পর্যন্ত সিরিয়ার রাজস্ব আয়, প্রবৃদ্ধির তুলনায় ১১ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত নিচে নেমে আসে। বিশ্বের যে কোনো দেশের তুলনায় সিরিয়ার রাজস্ব আয় আশঙ্কাজনক কম। কাজেই বৈদেশিক বিনিয়োগ ছাড়া অর্থনৈতিকভাবে দেশটির ঘুরে দাঁড়ানো সহজ হবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

নিউজটি শেয়ার করুন

সিরিয়ায় আসাদ সরকারের পতনের এক মাস

আপডেট সময় : ০৩:৫৩:৩৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারী ২০২৫

সিরিয়ায় আসাদ সরকারের পতনের এক মাস পেরিয়ে গেলেও স্বস্তি নেই জনমনে। ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম বলছে, দেশটিতে প্রতিদিন ক্ষুধার সাথে লড়াই করছে অন্তত ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র মানবিক সহায়তার প্রশ্নে সাময়িকভাবে সিরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পরিকল্পনা জানালেও বিশেষজ্ঞদের দাবি, অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানো সহজ হবে না।

২০০০ সালে প্রেসিডেন্ট পদে ক্ষমতা নেয়ার টানা দুই যুগ পর সিরিয়ায় বাশার আল আসাদের পতন হয় গেল বছরের ৮ ডিসেম্বর। স্বৈরাচারী শাসককে ক্ষমতাচ্যুত করার এক মাস অতিবাহিত হলেও সিরিয়ার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে স্বস্তিতে নেই দেশটির জনগণ। আর ২০১১ সাল থেকে দেশটিতে চলছে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ। ১৩ বছর পরও থামেনি লড়াই-রক্তপাত।

বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘পরিস্থিতি আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে। তবে কিছু সমস্যা রয়েই গেছে। লড়াই করতে করতে আমরা ক্লান্ত। আমাদের অর্থ সংকট বেড়েই চলছে। তবে আশাহত নই। যারা দেশ পুনর্গঠনে পরিশ্রম করছেন তাদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা আছে।’

আরেকজন বলেন, ‘বাশার আল-আসাদের পতনের পর এত অল্প সময়ের ব্যবধানে প্রত্যাশা নিয়ে ভাবতে চাই না। সরকারের পতন হলেও, দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখনও আসাদের নিয়ন্ত্রণ মুক্ত হয়নি।’

এমন পরিস্থিতিতে সিরিয়ার রাজনৈতিক ব্যবস্থার সংস্কার, অর্থনীতি পুনর্গঠন ও মানবিক সংকট থেকে পরিত্রাণকেই গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে দেশটির ওপর আরোপিত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা।

বুধবার ফ্রান্সের পররাষ্ট্র দপ্তর জানায়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন যদি ধীরে ধীরে সিরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় তাহলে মানবিক সহায়তা পাঠানোর পথ সুগম হবে। আর নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি তুলে না নিলেও গেল সোমবার মানবিক সহায়তার প্রশ্নে সিরিয়ার ওপর আনা কয়েকটি নিষেধাজ্ঞা শিথিলের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই শিথিলতা কার্যকর থাকবে আগামী ৬ মাস, ৭ জুলাই পর্যন্ত।

বাশার আল-আসাদের পতনের পর সিরিয়ার বিমান ব্যবস্থা অকার্যকর করতে কয়েক দফায় রাজধানী দামেস্কে হামলা চালায় ইসরাইল। যদিও, অবশেষে সচল হয়েছে দামেস্ক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্যক্রম। ১৩ বছর পর এই প্রথম কাতারের দোহা থেকে বেসামরিক বিমান অবতরণ করেছে দামেস্কে। এই ফ্লাইটে এমন অনেক সিরীয় নাগরিক ছিলেন যারা আসাদের পতনের পর এই প্রথম দেশে ফিরলেন। মঙ্গলবার সকালে আরব আমিরাতের শারজাহ’র উদ্দেশে ছেড়ে গেছে বিমানবন্দরের প্রথম ফ্লাইট।

পরবর্তীতে আলেপ্পো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্যক্রম সচলের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সিরীয় এভিয়েশন ও এয়ার কন্ট্রোল বিভাগ। ২০১২ সালে আসাদ রেজিমের অপশাসনের জেরে বেশিরভাগ এয়ারলাইন্স কোম্পানি দামেস্ক বিমানবন্দরে ফ্লাইট উড্ডয়ন ও অবতরণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এতে লেবানন বা জর্ডান হয়ে বিদেশ যাত্রা করতে বাধ্য হতেন সিরীয় নাগরিকরা। মঙ্গলবার, কাতার এয়ার ওয়েজই প্রথম দামেস্কে বিমান অবতরণের সিদ্ধান্ত নেয়।

বিমানবন্দর সচল হলেও সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে থাকা চ্যালেঞ্জের তালিকাও নেহাত ছোট নয়। আসাদ বিরোধী সংগঠন- হায়াত তাহরির আল-শাম বা এইচটিএস, যাদের একচ্ছত্র আধিপত্য অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর- তাদেরকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে এখনও নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কিছু দেশ। ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম বলছে, দেশটিতে ১৩ মিলিয়নের বেশি মানুষ পেট ভরে খেতে পায় না। ফলে পশ্চিমা সহায়তা ছাড়া এইচটিএস কোনো উপায়ে সিরীয়দের খাদ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে-সেটিও পরিষ্কার নয়।

যদিও প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ দেশটি ভূমধ্যসাগরের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। ৯৪ শতাংশ শিক্ষিতের হার গোটা মধ্যপ্রাচ্যে সর্বোচ্চ। ফলে অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি সুযোগও আছে সিরীয়দের সামনে। কাতার ও আরব আমিরাতের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে দামেস্কের ওপর আরোপিত বেশ কিছু বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞাও শিথিলের পরিকল্পনা জানাচ্ছে হোয়াইট হাউজ। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, এ ক্ষেত্রে সিরিয়ার সরকারকে রাশিয়া ও ইরানের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও নিশ্চিত করতে হবে।

আল জাজিরার প্রতিবেদন বলছে, ২০১১ সাল থেকে ২০২১ পর্যন্ত সিরিয়ার রাজস্ব আয়, প্রবৃদ্ধির তুলনায় ১১ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত নিচে নেমে আসে। বিশ্বের যে কোনো দেশের তুলনায় সিরিয়ার রাজস্ব আয় আশঙ্কাজনক কম। কাজেই বৈদেশিক বিনিয়োগ ছাড়া অর্থনৈতিকভাবে দেশটির ঘুরে দাঁড়ানো সহজ হবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।