মুক্তিপণ দিয়েও নিখোঁজ লিবিয়ায় প্রবাসীরা
- আপডেট সময় : ০৩:৫২:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫
- / ৩৫৩ বার পড়া হয়েছে
চলতি অর্থবছরে প্রবাসী আয় ছাড়িয়েছে ১ হাজার ৩৭৭ কোটি ৬১ লাখ ডলার। অথচ ইউরোপে যাবার পথে লিবিয়াতে আটকে পড়াদের দায় নিতে চাইছে না প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। একের পর এক মারধরের ছবি পাঠিয়ে দেশীয় ব্যাংক অ্যাকাউন্টে মুক্তিপণের টাকা নিলেও নির্বিকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। লাখ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়েও নিখোঁজ লিবিয়ায় আটকে পড়াদের অনেকেই।
ইউএনএইচসিআরের তথ্য অনুযায়ী ২০১৫ সাল থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত ২৫ লাখ মানুষ ইউরোপে পাড়ি জমিয়েছে যাদের মধ্যে ২২ হাজার মানুষ সাগরে ডুকে মারা গেছে।
ইউরোপের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৭০ হাজার ৯০৬ জন বাংলাদেশী ইউরোপে প্রবেশ করেছে নদী পথ হয়ে। যৌথ উদ্যোগ ছাড়া মানব পাচারের এই চক্র থামানো সম্ভব না, এমন দাবি বিশ্লেষকদের।
হুট করেই মুঠোফোনে ২৩ সেকেন্ডের ভিডিও। হাত পা বাঁধা কাউকে বেধড়ক মারধর করছে এক ব্যক্তি। ছেলে রিপন সিকদারের ছবি চিনতে ভুল হলো না বাবার। সাথে ভয়েস ম্যাসেজ।
জীবন বাঁচাতে টাকা চাইছে ছেলে রিপন সিকদার। কিছুক্ষণ পরই একের পর এক শরীরের ক্ষত চিহ্নের ছবি।
এর পর শুরু হয় ছেলেকে বাঁচানোর লড়াই। লিবিয়ার মাফিয়া সিন্ডিকেটের দালালরা যোগাযোগ শুরু করে টাকার জন্য। পাঠায় ইসলামী ব্যাংকের ৪ টি অ্যাকাউন্ট নম্বর। সাথে শুরু হয় তীব্র মারধর ও মেরে ফেলার হুমকি।
একমাত্র ছেলের জীবন বাঁচাতে ইসলামী ব্যাংকের নির্ধারিত অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে শুরু করে বাবা। এভাবে হুমকি দিয়ে চেকের মাধ্যমে ২১ লাখ টাকা নেয়ার পরও খোঁজ নেই রিপন সরদারের।
একই অবস্থা মাসুম মোল্লার । ইতালি যাওয়ার পথে মাফিয়াদের হাতে আটকা তিনিও। একই ভাবে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ৩৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তার কাছ থেকেও।
জিম্মি হওয়া ব্যক্তিদের দেশে ফেরাতে শেষ আশ্রয় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। অভিযোগ গ্রহণেই সীমাবদ্ধ তাদের কার্যক্রম। এমন অভিযোগ নাকি প্রতিদিনই আসে তাদের কাছে।
অভিযুক্ত সিকদার ট্রাভেলস দেখা পেতে যেতে হবে শাহজাদপুরের কনফিডেন্স টাওয়ারে। সেখানে গিয়ে জানা গেলো প্রায় সময় মানুষ খুঁজতে আসে সিকদার ট্রাভেলস এর কর্ণধারকে। জানা গেলো ট্রাভেল এজেন্সি ছেড়ে দিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে দালাল চক্র। অবশেষে গুলশান থানায়। পুলিশের কাছে অভিযোগ পত্র জমা দিলেন ভুক্তভোগী।
ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম ও ইয়ুথ প্লাটফর্মের সহযোগী পরিচালক শরিফুল ইসলাম হাসান বলেন, ‘সংঘবদ্ধ অপরাধে টাকা বা অর্থের লেনদেন অনেক বড় একটা বিষয়। যেটায় আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর খুব বেশি সফলতা নেই। যে মানুষগুলো ফেরত আসে তাদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে, কে তার পাচারকারী ছিল, লোকালি কে ছিল অন্য জায়গায় কারা ছিল তো সে জায়গাগুলোতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে আমি মনে করি আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আরো করণীয় রয়েছে।’
দেশী চক্র মানব পাচারের সাথে জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। এই ঘটনায় যারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করার কথা জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। এরা লিবিয়ায় আটকা আছে, কিন্তু হয়তো অন্য দেশে যেতে চেয়েছিল। এরা আমাদের বড় ধরনের রত্ন। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের স্পেসিফিক তথ্য দরকার। আপনারা আমাদের তথ্য দিলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’
লোভে পড়ে ইউরোপে যাওয়ার জন্য জীবনের ঝুঁকি না নেয়ার আহবান সংশ্লিষ্টদের।