ঢাকা ০৭:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে টিউলিপের সম্পর্কের গোমর ফাঁস

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৪:৪০:৫৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫
  • / ৩৪২ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির এমপি ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে সম্প্রতি বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সম্পত্তি বিনামূল্যে গ্রহণের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর যুক্তরাজ্যের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে তিনি কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন।

প্রকাশিত খবরে উঠে এসেছে, টিউলিপ সিদ্দিক বিনামূল্যে দুটি ফ্ল্যাট পেয়েছেন। প্রথমটি বাংলাদেশি ব্যবসায়ী আবদুল মোতালিফের কাছ থেকে এবং দ্বিতীয়টি তার বোন আজমিনা সিদ্দিক রুপন্তির মাধ্যমে। আজমিনাকে এই ফ্ল্যাট উপহার দেন মঈন গনি নামের একজন বাংলাদেশি আইনজীবী, যিনি হাসিনা সরকারের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।

এ নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কনজারভেটিভ পার্টির ছায়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস ফিলিপ দাবি করেছেন, টিউলিপকে নিজের সম্পদের উৎস নিয়ে ব্যাখ্যা দিতে হবে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সঙ্গে টিউলিপের সম্পৃক্ততা এবং তার সম্পত্তি নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, টিউলিপের আর্থিক উৎস এবং শেখ হাসিনার সঙ্গে তার যোগসূত্র নিয়ে জনমনে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। তবুও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার এখনো টিউলিপের প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছেন।

টেলিগ্রাফ এক প্রতিবেদনে কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে টিউলিপ সিদ্দিকের একটি ছবি ছাপায়। সেখানে বলা হয়, সদ্য বিজয়ী প্রধানমন্ত্রী এবং তার স্ত্রীর সঙ্গে মুখে এক প্রশস্ত হাসিমাখা যে নারীকে দেখা যাচ্ছে তিনি টিউলিপ সিদ্দিক। কিয়ার স্টারমারের পাশে থাকলে টিউলিপকে এমনই হাস্যোজ্জ্বল দেখায়। গত বছরের ৫ জুলাই ভোরে উত্তর লন্ডনের ক্যামডেন টাউন হলে নির্বাচনে বিজয় উদযাপনকালে একজনের সেলফিতে ছবিটি ফ্রেমবন্দি হয়। ছবিতে লেবার পার্টি ক্ষমতায় আসার পর তিনজনের উল্লাসের মুহূর্তটি ধারণ করা হয়েছিল।

এ ছবিটিকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ধরা হচ্ছে। সাধারণ বিজয় উদযাপন মনে হলেও ছবির ভাষা স্যার কিয়ার স্টারমার এবং টিউলিপের মধ্যে দীর্ঘ বন্ধুত্ব নির্দেশ করে।

এদিকে, বিভিন্ন পক্ষের দাবির পরও কিয়ার টিউলিপেরে পাশেই দাঁড়িয়েছেন। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, তাদের মধ্যে দীর্ঘ সম্পর্কের কথা। কিয়ারের তার কয়েকজন ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিগত রাজনৈতিক বন্ধুর প্রতি আনুগত্যশীল। টিউলিপকে সেই পক্ষেরই একজন বলা হচ্ছে।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ও টিউলিপের রাজনৈতিক বন্ধন ২০১৪ সাল থেকে শুরু হয়। টিউলিপ তখন হ্যাম্পস্টেড এবং কিলবার্নে লেবারের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। অপরদিকে প্রতিবেশী হলবর্ন এবং সেন্ট প্যানক্রাসে বিজয়ের জন্য লড়ছিলেন স্যার কিয়ার। টিউলিপ সে সময় কিয়ারের পাশে দাঁড়ান।

২০১৫ সালের নির্বাচনে একই রাতে তারা একসঙ্গে পার্লামেন্টে প্রবেশ করেন। সেই বছরের শেষের দিকে ভিন্ন ভিন্ন প্রার্থীকে সমর্থন করা সত্ত্বেও উভয়ই জেরেমি করবিনের অধীনে সামনের বেঞ্চে বসেছিলেন।

২০২০ সালের গোড়ার দিকে যখন দলের শীর্ষ পদটি নির্বাচনের সময় এলো তখন টিউলিপই প্রথম লেবার এমপিদের একজন, যিনি স্যার কিয়ারকে প্রকাশ্যে নেতা হিসেবে মনোনীত করেন। এমনকি তার প্রার্থিতাকে লেবার ফ্রেন্ডস অফ বাংলাদেশও সমর্থন করে। এ গ্রুপটি দলীয় চাপ বৃদ্ধিতে বেশ সহায়কের ভূমিকায় ছিল। এটা স্পষ্ট যে, টিউলিপের সঙ্গে সম্পর্ক থাকাতেই গ্রুপটি কিয়ারকে সমর্থন দেয়।

টিউলিপ বিভিন্ন সময় স্টারমারের পাশে বন্ধুর মতো থাকার কথা সংবাদমাধ্যমে বলেছেন। এ জয়ের পেছনে তার ভূমিকা নিয়েও তিনি প্রকাশ্যে মন্তব্য করেছেন।

এদিকে টিউলিপের দুর্নীতির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, টিউলিপের প্রতি আস্থা রয়েছে তার। তবে এই পরিস্থিতি লেবার পার্টির অভ্যন্তরে অস্বস্তি সৃষ্টি করেছে। যুক্তরাজ্যের আর্থিক খাতের দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে থাকা একজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ দলটির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে টিউলিপের সম্পর্কের গোমর ফাঁস

আপডেট সময় : ০৪:৪০:৫৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫

যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির এমপি ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে সম্প্রতি বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সম্পত্তি বিনামূল্যে গ্রহণের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর যুক্তরাজ্যের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে তিনি কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন।

প্রকাশিত খবরে উঠে এসেছে, টিউলিপ সিদ্দিক বিনামূল্যে দুটি ফ্ল্যাট পেয়েছেন। প্রথমটি বাংলাদেশি ব্যবসায়ী আবদুল মোতালিফের কাছ থেকে এবং দ্বিতীয়টি তার বোন আজমিনা সিদ্দিক রুপন্তির মাধ্যমে। আজমিনাকে এই ফ্ল্যাট উপহার দেন মঈন গনি নামের একজন বাংলাদেশি আইনজীবী, যিনি হাসিনা সরকারের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।

এ নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কনজারভেটিভ পার্টির ছায়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস ফিলিপ দাবি করেছেন, টিউলিপকে নিজের সম্পদের উৎস নিয়ে ব্যাখ্যা দিতে হবে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সঙ্গে টিউলিপের সম্পৃক্ততা এবং তার সম্পত্তি নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, টিউলিপের আর্থিক উৎস এবং শেখ হাসিনার সঙ্গে তার যোগসূত্র নিয়ে জনমনে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। তবুও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার এখনো টিউলিপের প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছেন।

টেলিগ্রাফ এক প্রতিবেদনে কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে টিউলিপ সিদ্দিকের একটি ছবি ছাপায়। সেখানে বলা হয়, সদ্য বিজয়ী প্রধানমন্ত্রী এবং তার স্ত্রীর সঙ্গে মুখে এক প্রশস্ত হাসিমাখা যে নারীকে দেখা যাচ্ছে তিনি টিউলিপ সিদ্দিক। কিয়ার স্টারমারের পাশে থাকলে টিউলিপকে এমনই হাস্যোজ্জ্বল দেখায়। গত বছরের ৫ জুলাই ভোরে উত্তর লন্ডনের ক্যামডেন টাউন হলে নির্বাচনে বিজয় উদযাপনকালে একজনের সেলফিতে ছবিটি ফ্রেমবন্দি হয়। ছবিতে লেবার পার্টি ক্ষমতায় আসার পর তিনজনের উল্লাসের মুহূর্তটি ধারণ করা হয়েছিল।

এ ছবিটিকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ধরা হচ্ছে। সাধারণ বিজয় উদযাপন মনে হলেও ছবির ভাষা স্যার কিয়ার স্টারমার এবং টিউলিপের মধ্যে দীর্ঘ বন্ধুত্ব নির্দেশ করে।

এদিকে, বিভিন্ন পক্ষের দাবির পরও কিয়ার টিউলিপেরে পাশেই দাঁড়িয়েছেন। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, তাদের মধ্যে দীর্ঘ সম্পর্কের কথা। কিয়ারের তার কয়েকজন ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিগত রাজনৈতিক বন্ধুর প্রতি আনুগত্যশীল। টিউলিপকে সেই পক্ষেরই একজন বলা হচ্ছে।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ও টিউলিপের রাজনৈতিক বন্ধন ২০১৪ সাল থেকে শুরু হয়। টিউলিপ তখন হ্যাম্পস্টেড এবং কিলবার্নে লেবারের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। অপরদিকে প্রতিবেশী হলবর্ন এবং সেন্ট প্যানক্রাসে বিজয়ের জন্য লড়ছিলেন স্যার কিয়ার। টিউলিপ সে সময় কিয়ারের পাশে দাঁড়ান।

২০১৫ সালের নির্বাচনে একই রাতে তারা একসঙ্গে পার্লামেন্টে প্রবেশ করেন। সেই বছরের শেষের দিকে ভিন্ন ভিন্ন প্রার্থীকে সমর্থন করা সত্ত্বেও উভয়ই জেরেমি করবিনের অধীনে সামনের বেঞ্চে বসেছিলেন।

২০২০ সালের গোড়ার দিকে যখন দলের শীর্ষ পদটি নির্বাচনের সময় এলো তখন টিউলিপই প্রথম লেবার এমপিদের একজন, যিনি স্যার কিয়ারকে প্রকাশ্যে নেতা হিসেবে মনোনীত করেন। এমনকি তার প্রার্থিতাকে লেবার ফ্রেন্ডস অফ বাংলাদেশও সমর্থন করে। এ গ্রুপটি দলীয় চাপ বৃদ্ধিতে বেশ সহায়কের ভূমিকায় ছিল। এটা স্পষ্ট যে, টিউলিপের সঙ্গে সম্পর্ক থাকাতেই গ্রুপটি কিয়ারকে সমর্থন দেয়।

টিউলিপ বিভিন্ন সময় স্টারমারের পাশে বন্ধুর মতো থাকার কথা সংবাদমাধ্যমে বলেছেন। এ জয়ের পেছনে তার ভূমিকা নিয়েও তিনি প্রকাশ্যে মন্তব্য করেছেন।

এদিকে টিউলিপের দুর্নীতির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, টিউলিপের প্রতি আস্থা রয়েছে তার। তবে এই পরিস্থিতি লেবার পার্টির অভ্যন্তরে অস্বস্তি সৃষ্টি করেছে। যুক্তরাজ্যের আর্থিক খাতের দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে থাকা একজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ দলটির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন।