ঢাকা ০৭:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

সবজির বাজার স্থিতিশীল, মুরগি ও মাছের দাম বেড়েছে

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৩:২৭:০৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫
  • / ৩৩৩ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

গেল ২-৩ সপ্তাহ ধরে বাজারে কমেছে সবজির দাম। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজারে সবজির সরবরাহও বেড়েছে। নতুন টাটকা সবজিতে ভরে গেছে বাজার, ফলে কমেছে দামও । তবে সপ্তাহ ব্যবধানে নতুন আলু কেজিতে ১০ টাকা কমলেও পেঁয়াজ আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোতে মুরগির দাম চড়া রয়েছে। সোনালি কক ও লেয়ার মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে।

শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দামের এমন চিত্র দেখা গেছে। একই সঙ্গে মাছের বাজারেও অস্থিরতা দেখা গেছে। সপ্তাহ ব্যবধানে সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে।

পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় বাজারে সবজি আগের সপ্তাহের দামেই বিক্রি হচ্ছে। এসব বাজারে সিম ২০ থেকে ৪০ টাকা, বড় আকারের ফুলকপি ১৫ থেকে ২০ টাকা পিস, বাঁধা কপি বড় সাইজের ৩০ টাকা পিস, প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা, পাকা টমেটো কেজিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, গাজর ৫০ থেকে ৬০ টাকা, মুলা কেজি ২০ টাকা, খিরাই ৪০ টাকা এবং শশা ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এসব বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজি বেগুন ৪০ থেকে ৫০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকায়, পেঁপে প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ধুন্দুল ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০ টাকা, কচুর লতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ঝিঙ্গা এবং কাঁচামরিচ ৪০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এসব বাজারে লেবুর হালি ২০ থেকে ৪০ টাকা, ধনে পাতা ১০০ টাকা কেজি, কাঁচা কলা হালি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়, চাল কুমড়া ৬০ টাকা পিস, কেপসি ক্যাপ ২০০ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়া ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারগুলোতে লাল শাক ১০ টাকা আঁটি, লাউ শাক ৪০ টাকা, মূলা শাক ১০ টাকা, পালং শাক ১০ টাকা, কলমি শাক তিন আঁটি ২০ টাকা, পুঁই শাক ৪০ টাকা এবং ডাটা শাক ২০ টাকা আঁটি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।

এসব বাজারে নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা দরে। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা দরে। পুরাতন আলু ৫০ টাকা, বগুড়ার লাল আলু ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এসব বাজারে দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ১০০ টাকা, মুড়ি পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, পাতা পেঁয়াজ ৪০ টাকা, ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।

বাজারগুলোতে আদা ১২০ থেকে ২৮০ টাকা, রসুন ২২০ থেকে ২৪০ টাকা, দেশি মশুর ডাল ১৪০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা, মিনি কেট চাল ৭৮ থেকে ৮৬ টাকা এবং নাজির সের ৭৬ থেকে ৮২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাজধানীর মহাখালী বাজারে বাজার করতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী ফরিদ আহমেদ। তিনি বলেন, বর্তমান বাজারে অন্যান্য জিনিসের তুলনায় সবজি কিনে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ হচ্ছে। কারণ বর্তমানে সবজির দাম কম যাচ্ছে। কিছুদিন আগেও বাজারে ৮০ থেকে ১০০ টাকায় সব ধরনের সবজি বিক্রি হচ্ছিল, সেই তুলনায় এখন সবজির দাম কম। আমরা চাই সবজির এমন দামের মতো বাজারে অন্যান্য পণ্য সাধারণ ক্রেতাদের এমন ক্ষমতার মধ্যে আসুক। তবে কয়েক বছর আগে শীতের সময় অর্থাৎ সবজির ফুল মৌসুমে সব ধরনের সবজির দাম আরো অনেক কম থাকতো, সে হিসেব করলে সবজির দাম আর আগের মত নেই। তবে কিছুদিন আগে সবজির চড়া দামের তুলনায় বর্তমানে সবজির বাজার কম যাচ্ছে।

রাজধানীর মগবাজার এলাকার সবজি বিক্রেতা জয়নাল হক বলেন, বাজারে একেবারে কমে গেছে সবজির দাম, ক্রেতারা ব্যাগ ভরে সবজি কিনে নিয়ে যাচ্ছে। তবে দু একটি সবজির বর্তমানে মৌসুম না হয়, সেগুলোর দাম একটু বেশি। বাকি সব সবজির দাম অনেক কমে গেছে বাজারে। এছাড়াও বাজারে টাটকা সবজির সরবরাহও অনেক বেশি, যে কারণে দাম কম যাচ্ছে। পুরো শীতকালীন সময়ে সবজির দাম এমন কম যাবে। সামনে আরো কমতে পারে সবজির দাম।

সবজির দাম বিষয় কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা শরিফুল ইসলাম বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রচুর পরিমাণে সবজি ঢাকায় আসছে প্রতিদিন। সব সবজি নতুন এবং টাটকা, আগের তুলনায় বাজারে প্রচুর পরিমাণে সবজির সরবরাহ হচ্ছে। যে কারণে বাজারে সবজির দাম কমে গেছে। কমপক্ষে আরো দেড় মাস সবজির দাম এমন কম থাকবে। এরপর থেকে কিছুটা বাড়তে শুরু করবে। রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে সবজির দাম বর্তমানে যা যাচ্ছে, এর চেয়েও আরো অনেক কম দাম কারওয়ানবাজারে। যেকোনো ক্রেতা অন্যান্য বাজারের চেয়ে কারওয়ানবাজার থেকে আরো অনেক কম দামে সবজি কিনতে পারবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ ৬০ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল। তার আগের সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ ৫০ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল।

পেঁয়াজের দাম কমে আবার বাড়লো কেন, জানতে চাইলে মার্কেটের আরেক পাইকারি ব্যবসায়ী রতন তালুকদার জানান, এবার দেশি পেঁয়াজে ভালো ফলন হয়েছে। তবে হঠাৎ করে দাম কমে যাওয়ায় কৃষকদের উৎপাদনের তুলনায় বিক্রিতে লাভ হচ্ছে না। গত সপ্তাহের দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে এটা অন্যান্য সময়ের তুলনায় আহামরি বেশি না।

বাজার করতে আসা ক্রেতা জাহিদ আহসান বলেন, পেঁয়াজের দাম একেক সপ্তাহে একেক রকম। কখনো দাম হিসাব করে পেঁয়াজ কেনা হয় না। প্রায় ২৫ দিন আগে পেঁয়াজ কিনেছি ১০০ টাকা কেজি দরে। আজকে এসে দেখি ৬০ টাকা। আসলে বাজারে হালচাল বুঝতে পারি না।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহ ব্যবধানে সোনালি কক মুরগি কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৩৬০ টাকায় এবং সোনালি হাইব্রিড ৩৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লাল লেয়ার মুরগি ৩২০ টাকা এবং সাদা লেয়ার ৩১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ব্রয়লার মুরগি ২১০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা করে আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে, চলতি সপ্তাহে মাছের বাজার চড়া রয়েছে। সব ধরনের মাছ কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এসব বাজারে ৫০০ গ্রামের ইলিশ ১১০০ টাকা, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রামের ১৭০০ টাকা, এক কেজি ওজনের ২০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোতে এক কেজি শিং মাছ চাষের (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায়, প্রতি কেজি রুই মাছের দাম বেড়ে (আকারভেদে) ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকায়, দেশি মাগুর মাছ ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা , মৃগেল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়, চাষের পাঙ্গাস ২০০ থেকে ২৩০ টাকায়, চিংড়ি প্রতি কেজি ৭৫০ থেকে ১২০০ টাকায়, বোয়ালমাছ প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায়, বড় কাতল ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায়, পোয়া মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়, তেলাপিয়া ২২০ টাকায়, কৈ মাছ ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়, মলা ৫০০ টাকা, বাতাসি টেংরা ১৩০০ টাকায়, টেংরা মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি মাছ ৫০০ টাকায়, পাঁচ মিশালি মাছ ২২০ টাকায়, রুপচাঁদা ১২০০ টাকা, বড় বাইম মাছ ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা, দেশি কই ১২০০ টাকা, সোল মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, আইড় মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, বেলে মাছ ৮০০ টাকা, কোড়াল মাছ ৭০০ টাকা, কাজলি মাছ ৮০০ টাকা এবং কাইকলা মাছ ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এসব বাজারে গরুর মাংস কেজি প্রতি ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা, গরুর কলিজা ৮০০ টাকা, গরুর মাথার মাংস ৪৫০ টাকা, গরুর বট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা এবং খাসির মাংস কেজি প্রতি ১১৫০-১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারগুলোতে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকায়, হাঁসের ডিম ২২০ টাকায়, দেশি মুরগির ডিমের হালি ৯০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।

বাজার করতে আসা শফিকুল ইসলাম নামে এক স্কুলশিক্ষক বলেন, ১৮০ টাকা কেজি দরে পাঙাশ কিনেছি, যা গত সপ্তাহেও ২০০ টাকায় কিনেছি। দাম কমেছে বলা যাবে না, বরং এটাই স্বাভাবিক দাম। তবে হুটহাট করেই দেখি দাম বেড়ে যায়।

তিনি বলেন, এখনতো শীতের সময়, সে হিসাবে বাজারে পর্যাপ্ত মাছ ও দাম তুলনামূলক কমই থাকার কথা। নদী-নালা, খাল-বিল থেকে এই সময়ে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। কিন্তু ঢাকায় অবশ্য সেই মাছগুলো আসে না। ঢাকায় আমরা কিনি সব চাষের মাছ।

আনিসুল হক নামে আরেক ক্রেতা বলেন, ব্রয়লার মুরগি ২২০ টাকা কেজি, এটা একটু কমা দরকার। মাসখানেক আগেও ১৮০ টাকায় কিনেছি, এরপরই দাম বাড়তে শুরু করে। অথচ এই সময়ে কিন্তু খাদ্যের দামও বাড়তে শুনিনি। তারমানে দাম বাড়া-কমা নিয়ন্ত্রণ করে ব্যবসায়ী ও সিন্ডিকেটের ওপর।

তিনি বলেন, এক সময় বাজারের নিয়ন্ত্রণ ছিল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হাতে। এখন হাত বদল হয়ে আসছে অন্য দলের হাতে। মাঝখানে আমাদের সাধারণ মানুষের কিছুই হলো না।

এদিকে দাম কম থাকায় ক্রেতাদের বাড়তি উপস্থিতি দেখে খুশি বিক্রেতারাও। মোহাম্মদ শওকত মিয়া নামে এক বিক্রেতা বলেন, এই সপ্তাহে মাছের বাজারে দাম কিছুটা নিম্নমুখী, তবে বেচাকেনা আলহামদুলিল্লাহ ভালো। দাম একটু কম থাকলে সবসময়ই বেচাকেনা ভালো থাকে। অনেক সময় সকালেই সব মাছ বিক্রি হয়ে যায়, আবার বাজার বাড়তি থাকলে বরফ দিয়ে পরদিনও বিক্রি করতে হয়।

মুরগির মাংস বিক্রেতা মনসুর আলী বলেন, শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় অন্যান্য দিনের তুলনায় এই দিনে মুরগির চাহিদাটা একটু বেশিই থাকে। তবে মুরগির দাম গত সপ্তাহের মতোই রয়ে গেছে। গত সপ্তাহেও ২১০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি করেছি। এই সপ্তাহেও একই দাম। শীতের আগে দামটা ২০০ টাকার নিচে ছিল। সম্ভবত শীতের কারণে বেড়েছে। কারণ সাধারণত শীতে কিছু মুরগি মরে যায় এবং রোগবালাইও বেশি হয়। যেকারণে খামারি পর্যায়েই বেশি দামে কিনে আনতে হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

সবজির বাজার স্থিতিশীল, মুরগি ও মাছের দাম বেড়েছে

আপডেট সময় : ০৩:২৭:০৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫

গেল ২-৩ সপ্তাহ ধরে বাজারে কমেছে সবজির দাম। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজারে সবজির সরবরাহও বেড়েছে। নতুন টাটকা সবজিতে ভরে গেছে বাজার, ফলে কমেছে দামও । তবে সপ্তাহ ব্যবধানে নতুন আলু কেজিতে ১০ টাকা কমলেও পেঁয়াজ আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোতে মুরগির দাম চড়া রয়েছে। সোনালি কক ও লেয়ার মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে।

শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দামের এমন চিত্র দেখা গেছে। একই সঙ্গে মাছের বাজারেও অস্থিরতা দেখা গেছে। সপ্তাহ ব্যবধানে সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে।

পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় বাজারে সবজি আগের সপ্তাহের দামেই বিক্রি হচ্ছে। এসব বাজারে সিম ২০ থেকে ৪০ টাকা, বড় আকারের ফুলকপি ১৫ থেকে ২০ টাকা পিস, বাঁধা কপি বড় সাইজের ৩০ টাকা পিস, প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা, পাকা টমেটো কেজিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, গাজর ৫০ থেকে ৬০ টাকা, মুলা কেজি ২০ টাকা, খিরাই ৪০ টাকা এবং শশা ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এসব বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজি বেগুন ৪০ থেকে ৫০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকায়, পেঁপে প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ধুন্দুল ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০ টাকা, কচুর লতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ঝিঙ্গা এবং কাঁচামরিচ ৪০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এসব বাজারে লেবুর হালি ২০ থেকে ৪০ টাকা, ধনে পাতা ১০০ টাকা কেজি, কাঁচা কলা হালি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়, চাল কুমড়া ৬০ টাকা পিস, কেপসি ক্যাপ ২০০ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়া ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারগুলোতে লাল শাক ১০ টাকা আঁটি, লাউ শাক ৪০ টাকা, মূলা শাক ১০ টাকা, পালং শাক ১০ টাকা, কলমি শাক তিন আঁটি ২০ টাকা, পুঁই শাক ৪০ টাকা এবং ডাটা শাক ২০ টাকা আঁটি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।

এসব বাজারে নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা দরে। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা দরে। পুরাতন আলু ৫০ টাকা, বগুড়ার লাল আলু ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এসব বাজারে দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ১০০ টাকা, মুড়ি পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, পাতা পেঁয়াজ ৪০ টাকা, ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।

বাজারগুলোতে আদা ১২০ থেকে ২৮০ টাকা, রসুন ২২০ থেকে ২৪০ টাকা, দেশি মশুর ডাল ১৪০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা, মিনি কেট চাল ৭৮ থেকে ৮৬ টাকা এবং নাজির সের ৭৬ থেকে ৮২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাজধানীর মহাখালী বাজারে বাজার করতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী ফরিদ আহমেদ। তিনি বলেন, বর্তমান বাজারে অন্যান্য জিনিসের তুলনায় সবজি কিনে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ হচ্ছে। কারণ বর্তমানে সবজির দাম কম যাচ্ছে। কিছুদিন আগেও বাজারে ৮০ থেকে ১০০ টাকায় সব ধরনের সবজি বিক্রি হচ্ছিল, সেই তুলনায় এখন সবজির দাম কম। আমরা চাই সবজির এমন দামের মতো বাজারে অন্যান্য পণ্য সাধারণ ক্রেতাদের এমন ক্ষমতার মধ্যে আসুক। তবে কয়েক বছর আগে শীতের সময় অর্থাৎ সবজির ফুল মৌসুমে সব ধরনের সবজির দাম আরো অনেক কম থাকতো, সে হিসেব করলে সবজির দাম আর আগের মত নেই। তবে কিছুদিন আগে সবজির চড়া দামের তুলনায় বর্তমানে সবজির বাজার কম যাচ্ছে।

রাজধানীর মগবাজার এলাকার সবজি বিক্রেতা জয়নাল হক বলেন, বাজারে একেবারে কমে গেছে সবজির দাম, ক্রেতারা ব্যাগ ভরে সবজি কিনে নিয়ে যাচ্ছে। তবে দু একটি সবজির বর্তমানে মৌসুম না হয়, সেগুলোর দাম একটু বেশি। বাকি সব সবজির দাম অনেক কমে গেছে বাজারে। এছাড়াও বাজারে টাটকা সবজির সরবরাহও অনেক বেশি, যে কারণে দাম কম যাচ্ছে। পুরো শীতকালীন সময়ে সবজির দাম এমন কম যাবে। সামনে আরো কমতে পারে সবজির দাম।

সবজির দাম বিষয় কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা শরিফুল ইসলাম বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রচুর পরিমাণে সবজি ঢাকায় আসছে প্রতিদিন। সব সবজি নতুন এবং টাটকা, আগের তুলনায় বাজারে প্রচুর পরিমাণে সবজির সরবরাহ হচ্ছে। যে কারণে বাজারে সবজির দাম কমে গেছে। কমপক্ষে আরো দেড় মাস সবজির দাম এমন কম থাকবে। এরপর থেকে কিছুটা বাড়তে শুরু করবে। রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে সবজির দাম বর্তমানে যা যাচ্ছে, এর চেয়েও আরো অনেক কম দাম কারওয়ানবাজারে। যেকোনো ক্রেতা অন্যান্য বাজারের চেয়ে কারওয়ানবাজার থেকে আরো অনেক কম দামে সবজি কিনতে পারবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ ৬০ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল। তার আগের সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ ৫০ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল।

পেঁয়াজের দাম কমে আবার বাড়লো কেন, জানতে চাইলে মার্কেটের আরেক পাইকারি ব্যবসায়ী রতন তালুকদার জানান, এবার দেশি পেঁয়াজে ভালো ফলন হয়েছে। তবে হঠাৎ করে দাম কমে যাওয়ায় কৃষকদের উৎপাদনের তুলনায় বিক্রিতে লাভ হচ্ছে না। গত সপ্তাহের দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে এটা অন্যান্য সময়ের তুলনায় আহামরি বেশি না।

বাজার করতে আসা ক্রেতা জাহিদ আহসান বলেন, পেঁয়াজের দাম একেক সপ্তাহে একেক রকম। কখনো দাম হিসাব করে পেঁয়াজ কেনা হয় না। প্রায় ২৫ দিন আগে পেঁয়াজ কিনেছি ১০০ টাকা কেজি দরে। আজকে এসে দেখি ৬০ টাকা। আসলে বাজারে হালচাল বুঝতে পারি না।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহ ব্যবধানে সোনালি কক মুরগি কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৩৬০ টাকায় এবং সোনালি হাইব্রিড ৩৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লাল লেয়ার মুরগি ৩২০ টাকা এবং সাদা লেয়ার ৩১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ব্রয়লার মুরগি ২১০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা করে আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে, চলতি সপ্তাহে মাছের বাজার চড়া রয়েছে। সব ধরনের মাছ কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এসব বাজারে ৫০০ গ্রামের ইলিশ ১১০০ টাকা, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রামের ১৭০০ টাকা, এক কেজি ওজনের ২০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোতে এক কেজি শিং মাছ চাষের (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায়, প্রতি কেজি রুই মাছের দাম বেড়ে (আকারভেদে) ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকায়, দেশি মাগুর মাছ ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা , মৃগেল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়, চাষের পাঙ্গাস ২০০ থেকে ২৩০ টাকায়, চিংড়ি প্রতি কেজি ৭৫০ থেকে ১২০০ টাকায়, বোয়ালমাছ প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায়, বড় কাতল ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায়, পোয়া মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়, তেলাপিয়া ২২০ টাকায়, কৈ মাছ ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়, মলা ৫০০ টাকা, বাতাসি টেংরা ১৩০০ টাকায়, টেংরা মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি মাছ ৫০০ টাকায়, পাঁচ মিশালি মাছ ২২০ টাকায়, রুপচাঁদা ১২০০ টাকা, বড় বাইম মাছ ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা, দেশি কই ১২০০ টাকা, সোল মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, আইড় মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, বেলে মাছ ৮০০ টাকা, কোড়াল মাছ ৭০০ টাকা, কাজলি মাছ ৮০০ টাকা এবং কাইকলা মাছ ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এসব বাজারে গরুর মাংস কেজি প্রতি ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা, গরুর কলিজা ৮০০ টাকা, গরুর মাথার মাংস ৪৫০ টাকা, গরুর বট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা এবং খাসির মাংস কেজি প্রতি ১১৫০-১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারগুলোতে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকায়, হাঁসের ডিম ২২০ টাকায়, দেশি মুরগির ডিমের হালি ৯০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।

বাজার করতে আসা শফিকুল ইসলাম নামে এক স্কুলশিক্ষক বলেন, ১৮০ টাকা কেজি দরে পাঙাশ কিনেছি, যা গত সপ্তাহেও ২০০ টাকায় কিনেছি। দাম কমেছে বলা যাবে না, বরং এটাই স্বাভাবিক দাম। তবে হুটহাট করেই দেখি দাম বেড়ে যায়।

তিনি বলেন, এখনতো শীতের সময়, সে হিসাবে বাজারে পর্যাপ্ত মাছ ও দাম তুলনামূলক কমই থাকার কথা। নদী-নালা, খাল-বিল থেকে এই সময়ে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। কিন্তু ঢাকায় অবশ্য সেই মাছগুলো আসে না। ঢাকায় আমরা কিনি সব চাষের মাছ।

আনিসুল হক নামে আরেক ক্রেতা বলেন, ব্রয়লার মুরগি ২২০ টাকা কেজি, এটা একটু কমা দরকার। মাসখানেক আগেও ১৮০ টাকায় কিনেছি, এরপরই দাম বাড়তে শুরু করে। অথচ এই সময়ে কিন্তু খাদ্যের দামও বাড়তে শুনিনি। তারমানে দাম বাড়া-কমা নিয়ন্ত্রণ করে ব্যবসায়ী ও সিন্ডিকেটের ওপর।

তিনি বলেন, এক সময় বাজারের নিয়ন্ত্রণ ছিল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হাতে। এখন হাত বদল হয়ে আসছে অন্য দলের হাতে। মাঝখানে আমাদের সাধারণ মানুষের কিছুই হলো না।

এদিকে দাম কম থাকায় ক্রেতাদের বাড়তি উপস্থিতি দেখে খুশি বিক্রেতারাও। মোহাম্মদ শওকত মিয়া নামে এক বিক্রেতা বলেন, এই সপ্তাহে মাছের বাজারে দাম কিছুটা নিম্নমুখী, তবে বেচাকেনা আলহামদুলিল্লাহ ভালো। দাম একটু কম থাকলে সবসময়ই বেচাকেনা ভালো থাকে। অনেক সময় সকালেই সব মাছ বিক্রি হয়ে যায়, আবার বাজার বাড়তি থাকলে বরফ দিয়ে পরদিনও বিক্রি করতে হয়।

মুরগির মাংস বিক্রেতা মনসুর আলী বলেন, শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় অন্যান্য দিনের তুলনায় এই দিনে মুরগির চাহিদাটা একটু বেশিই থাকে। তবে মুরগির দাম গত সপ্তাহের মতোই রয়ে গেছে। গত সপ্তাহেও ২১০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি করেছি। এই সপ্তাহেও একই দাম। শীতের আগে দামটা ২০০ টাকার নিচে ছিল। সম্ভবত শীতের কারণে বেড়েছে। কারণ সাধারণত শীতে কিছু মুরগি মরে যায় এবং রোগবালাইও বেশি হয়। যেকারণে খামারি পর্যায়েই বেশি দামে কিনে আনতে হয়।