ঢাকা ১০:১১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

শুধু ট্রাম্প নন, গ্রিনল্যান্ড দ্বীপে নজর ছিল আরো দুই প্রেসিডেন্টের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৩:৪২:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫
  • / ৩৪৫ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

কেবল ডোনাল্ড ট্রাম্প নন, যুক্তরাষ্ট্রের আরও দু’জন সাবেক প্রেসিডেন্টের নজর ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় দ্বীপ গ্রিনল্যান্ডের ওপর। নৃ-বিজ্ঞানীদের অভিমত, খনিজ উপাদান আর নৌরুট ছাড়াও ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন প্রশাসনের নজর ছিল ডেনমার্কের স্বায়ত্তশাসিত দ্বীপটির ওপর। পাশাপাশি, নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, গ্রিনল্যান্ডের অভ্যন্তরে মার্কিন সেনা ঘাঁটি থাকলেও দ্বীপের নিয়ন্ত্রণ শত্রুপক্ষের দখলে চলে গেলে জাতীয় নিরাপত্তা নিয়েও বেগ পেতে হতে পারে ওয়াশিংটনকে।

গেল ডিসেম্বর ডেনমার্কের স্বায়ত্তশাসিত দ্বীপ গ্রিনল্যান্ড অধিগ্রহণের বিষয়ে প্রথমবারের মতো আগ্রহ প্রকাশ করেন নব-নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একসময় ডেনিস উপনিবেশের অধীনে থাকা ৫৬ হাজার জনগোষ্ঠীর এই বিশাল দ্বীপটি দখলে মার্কিন সেনা পাঠানোর পরিকল্পনা কিংবা ট্রাম্প জুনিয়রের গ্রিনল্যান্ড সফর- এগুলো কী কেবলই খবরের শিরোনাম হওয়ার চেষ্টা নাকি এর পেছনে লুকিয়ে আছে ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ।

সিএনএন-ক্লাইমেটের প্রতিবেদন বলছে, গ্রিনল্যান্ড দখল ইস্যুতে সবার প্রথমে গুরুত্ব পাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মাঝামাঝি এই দ্বীপটির ভৌগোলিক অবস্থান।

এমনকি গ্রিনল্যান্ডের রাজধানী নুকের সাথে ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনের দূরত্ব খোদ নিউইয়র্কের চেয়ে বেশি। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে, বিশেষ করে রাশিয়ার মতো দেশের সম্ভাব্য আক্রমণ প্রতিহতে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত হবে গ্রিনল্যান্ড।

গ্রিনল্যান্ড-আইসল্যান্ড-যুক্তরাজ্য গ্যাপ বা মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর কৌশলগত সামুদ্রিক অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার এই দ্বীপটি। বিশ্লেষকরা বলছেন, উত্তর আটলান্টিক ও আর্কটিক মহাসাগরের মধ্যে অবস্থিত গ্রিনল্যান্ড দ্বীপটির নিয়ন্ত্রণ মার্কিন প্রশাসনের দখলে তা থাকলে বাণিজ্যিক অংশীদারিত্বে আধিপত্য বিস্তার করতে পারবেন ট্রাম্প।

১৮৬৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জনসন প্রথম গ্রিনল্যান্ড কেনার প্রস্তাব করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১শ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে দ্বীপটি কিনতে ডেনমার্কের কাছে প্রস্তাব পাঠায় ট্রুম্যান প্রশাসন। কাজেই ট্রাম্পই প্রথম গ্রিনল্যান্ডের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করলেন বিষয়টি এমন নয়।

১৯৫১ সালের সামরিক চুক্তি অনুযায়ী, নর্থ ওয়েস্ট গ্রিনল্যান্ডে সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ করে মার্কিন প্রশাসন। মস্কো ও নিউইয়র্কের মাঝামাঝি এই ঘাঁটির সামরিক গুরুত্ব অস্বীকারের সুযোগ নেই। সিএনএন বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রতিপক্ষ গ্রিনল্যান্ড দখল নিলে তা মার্কিন নিরাপত্তার প্রশ্নে বড় হুমকি হতে পারে। আর এই সুযোগটি কাউকে নিতে দিতে চান না ট্রাম্প।

এদিকে, গ্রিনল্যান্ড দখলে মার্কিন সেনা মোতায়েনের পরিকল্পনা আপাতত বাতিল করছেন না ট্রাম্প- ওয়াশিংটনের এমন খবর প্রচারের পর প্রতিক্রিয়ায় ক্রেমলিন জানিয়েছে, আর্কটিক অঞ্চলে মস্কোর নিরাপত্তা ও জাতীয় স্বার্থ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেউ ঐ অঞ্চলের শান্তি ভঙ্গের পথে হাঁটলে, রাশিয়াও চুপ করে বসে থাকবে না বলেও জানানো হয়।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘আর্কটিক অঞ্চলের শান্তি রক্ষার সাথে আমাদের জাতীয় ও কৌশলগত স্বার্থ রয়েছে। বিশেষ করে ঐ অঞ্চলে রাশিয়া তার অবস্থান ধরে রাখবে। আমরা আর্কটিক অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতার পরিবেশ বজায় রাখতে আগ্রহী।’

ডেনিশ নৃবিজ্ঞানীদের দাবি তেল ও গ্যাস ছাড়াও বিরল খনিজ উপাদানে ঠাসা এই দ্বীপটি। বৈদ্যুতিক গাড়ি, উইন্ড টার্বাইন, গ্রিন প্রযুক্তিসহ সামরিক যন্ত্রাংশ প্রস্তুত করতে এসব বিরল ধাতু ও খনিজ পদার্থের চাহিদা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। এই মুহূর্তে বিরল খনিজ উপাদান রপ্তানিতে শীর্ষে চীন।

ট্রাম্প চীন বিরোধী বাণিজ্য নীতি ঘোষণার পর বেইজিংও সাফ জানিয়েছে এরপর থেকে ওয়াশিংটনে ক্রিটিকাল মিনারেলস সরবরাহ করার বিষয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নেবে চীন।

ডেনমার্কের গণমাধ্যমের দাবি, খনিজ উপাদানের সরবরাহ ধরে রাখতে গ্রিনল্যান্ড দখলের চেয়ে লাভজনক কোনো পথ খোলা নেই ট্রাম্পের সামনে। এতে করে চীনকেও টেক্কা দিতে পারবে ট্রাম্প প্রশাসন।

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন বলছে, বরফ গলে যাওয়া ও আর্কটিক অঞ্চলের তাপমাত্রা বাড়ার কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক ঝুঁকির মুখে গ্রিনল্যান্ড। কিন্তু জলবায়ুর প্রভাবে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরও দেশটিতে খুলে যেতে পারে অর্থনীতির নতুন সম্ভাবনার দুয়ার।

দ্বীপটির উত্তরাঞ্চলে বরফ গলে গেলে নতুন নৌপথ সৃষ্টির মাধ্যমে বাণিজ্যিক সুবিধা পাবে গ্রিনল্যান্ড। গার্ডিয়ান আরও জানায়, দ্রুত বরফ গলার কারণে গেল বছর আর্কটিক নৌপথে জাহাজ চলাচল বেড়েছে ৩৭ শতাংশ হারে। ফলে গ্রিনল্যান্ড দখল করতে পারলে সমুদ্রসীমায় বড় আধিপত্য পাবে যে কোনো দেশ।

নিউজটি শেয়ার করুন

শুধু ট্রাম্প নন, গ্রিনল্যান্ড দ্বীপে নজর ছিল আরো দুই প্রেসিডেন্টের

আপডেট সময় : ০৩:৪২:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫

কেবল ডোনাল্ড ট্রাম্প নন, যুক্তরাষ্ট্রের আরও দু’জন সাবেক প্রেসিডেন্টের নজর ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় দ্বীপ গ্রিনল্যান্ডের ওপর। নৃ-বিজ্ঞানীদের অভিমত, খনিজ উপাদান আর নৌরুট ছাড়াও ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন প্রশাসনের নজর ছিল ডেনমার্কের স্বায়ত্তশাসিত দ্বীপটির ওপর। পাশাপাশি, নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, গ্রিনল্যান্ডের অভ্যন্তরে মার্কিন সেনা ঘাঁটি থাকলেও দ্বীপের নিয়ন্ত্রণ শত্রুপক্ষের দখলে চলে গেলে জাতীয় নিরাপত্তা নিয়েও বেগ পেতে হতে পারে ওয়াশিংটনকে।

গেল ডিসেম্বর ডেনমার্কের স্বায়ত্তশাসিত দ্বীপ গ্রিনল্যান্ড অধিগ্রহণের বিষয়ে প্রথমবারের মতো আগ্রহ প্রকাশ করেন নব-নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একসময় ডেনিস উপনিবেশের অধীনে থাকা ৫৬ হাজার জনগোষ্ঠীর এই বিশাল দ্বীপটি দখলে মার্কিন সেনা পাঠানোর পরিকল্পনা কিংবা ট্রাম্প জুনিয়রের গ্রিনল্যান্ড সফর- এগুলো কী কেবলই খবরের শিরোনাম হওয়ার চেষ্টা নাকি এর পেছনে লুকিয়ে আছে ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ।

সিএনএন-ক্লাইমেটের প্রতিবেদন বলছে, গ্রিনল্যান্ড দখল ইস্যুতে সবার প্রথমে গুরুত্ব পাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মাঝামাঝি এই দ্বীপটির ভৌগোলিক অবস্থান।

এমনকি গ্রিনল্যান্ডের রাজধানী নুকের সাথে ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনের দূরত্ব খোদ নিউইয়র্কের চেয়ে বেশি। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে, বিশেষ করে রাশিয়ার মতো দেশের সম্ভাব্য আক্রমণ প্রতিহতে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত হবে গ্রিনল্যান্ড।

গ্রিনল্যান্ড-আইসল্যান্ড-যুক্তরাজ্য গ্যাপ বা মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর কৌশলগত সামুদ্রিক অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার এই দ্বীপটি। বিশ্লেষকরা বলছেন, উত্তর আটলান্টিক ও আর্কটিক মহাসাগরের মধ্যে অবস্থিত গ্রিনল্যান্ড দ্বীপটির নিয়ন্ত্রণ মার্কিন প্রশাসনের দখলে তা থাকলে বাণিজ্যিক অংশীদারিত্বে আধিপত্য বিস্তার করতে পারবেন ট্রাম্প।

১৮৬৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জনসন প্রথম গ্রিনল্যান্ড কেনার প্রস্তাব করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১শ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে দ্বীপটি কিনতে ডেনমার্কের কাছে প্রস্তাব পাঠায় ট্রুম্যান প্রশাসন। কাজেই ট্রাম্পই প্রথম গ্রিনল্যান্ডের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করলেন বিষয়টি এমন নয়।

১৯৫১ সালের সামরিক চুক্তি অনুযায়ী, নর্থ ওয়েস্ট গ্রিনল্যান্ডে সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ করে মার্কিন প্রশাসন। মস্কো ও নিউইয়র্কের মাঝামাঝি এই ঘাঁটির সামরিক গুরুত্ব অস্বীকারের সুযোগ নেই। সিএনএন বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রতিপক্ষ গ্রিনল্যান্ড দখল নিলে তা মার্কিন নিরাপত্তার প্রশ্নে বড় হুমকি হতে পারে। আর এই সুযোগটি কাউকে নিতে দিতে চান না ট্রাম্প।

এদিকে, গ্রিনল্যান্ড দখলে মার্কিন সেনা মোতায়েনের পরিকল্পনা আপাতত বাতিল করছেন না ট্রাম্প- ওয়াশিংটনের এমন খবর প্রচারের পর প্রতিক্রিয়ায় ক্রেমলিন জানিয়েছে, আর্কটিক অঞ্চলে মস্কোর নিরাপত্তা ও জাতীয় স্বার্থ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেউ ঐ অঞ্চলের শান্তি ভঙ্গের পথে হাঁটলে, রাশিয়াও চুপ করে বসে থাকবে না বলেও জানানো হয়।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘আর্কটিক অঞ্চলের শান্তি রক্ষার সাথে আমাদের জাতীয় ও কৌশলগত স্বার্থ রয়েছে। বিশেষ করে ঐ অঞ্চলে রাশিয়া তার অবস্থান ধরে রাখবে। আমরা আর্কটিক অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতার পরিবেশ বজায় রাখতে আগ্রহী।’

ডেনিশ নৃবিজ্ঞানীদের দাবি তেল ও গ্যাস ছাড়াও বিরল খনিজ উপাদানে ঠাসা এই দ্বীপটি। বৈদ্যুতিক গাড়ি, উইন্ড টার্বাইন, গ্রিন প্রযুক্তিসহ সামরিক যন্ত্রাংশ প্রস্তুত করতে এসব বিরল ধাতু ও খনিজ পদার্থের চাহিদা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। এই মুহূর্তে বিরল খনিজ উপাদান রপ্তানিতে শীর্ষে চীন।

ট্রাম্প চীন বিরোধী বাণিজ্য নীতি ঘোষণার পর বেইজিংও সাফ জানিয়েছে এরপর থেকে ওয়াশিংটনে ক্রিটিকাল মিনারেলস সরবরাহ করার বিষয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নেবে চীন।

ডেনমার্কের গণমাধ্যমের দাবি, খনিজ উপাদানের সরবরাহ ধরে রাখতে গ্রিনল্যান্ড দখলের চেয়ে লাভজনক কোনো পথ খোলা নেই ট্রাম্পের সামনে। এতে করে চীনকেও টেক্কা দিতে পারবে ট্রাম্প প্রশাসন।

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন বলছে, বরফ গলে যাওয়া ও আর্কটিক অঞ্চলের তাপমাত্রা বাড়ার কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক ঝুঁকির মুখে গ্রিনল্যান্ড। কিন্তু জলবায়ুর প্রভাবে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরও দেশটিতে খুলে যেতে পারে অর্থনীতির নতুন সম্ভাবনার দুয়ার।

দ্বীপটির উত্তরাঞ্চলে বরফ গলে গেলে নতুন নৌপথ সৃষ্টির মাধ্যমে বাণিজ্যিক সুবিধা পাবে গ্রিনল্যান্ড। গার্ডিয়ান আরও জানায়, দ্রুত বরফ গলার কারণে গেল বছর আর্কটিক নৌপথে জাহাজ চলাচল বেড়েছে ৩৭ শতাংশ হারে। ফলে গ্রিনল্যান্ড দখল করতে পারলে সমুদ্রসীমায় বড় আধিপত্য পাবে যে কোনো দেশ।