ভারতীয় ঋণচুক্তির অর্থছাড় না হওয়ায় রেল প্রকল্পে অনিশ্চয়তা
- আপডেট সময় : ০১:০৬:২৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫
- / ৩৪০ বার পড়া হয়েছে
উত্তরাঞ্চলের নতুন রেলরুট প্রকল্প ঝুলে আছে অর্ধযুগ ধরে। যমুনা রেলসেতুর কাজ শেষ হলেও শুরুই হয়নি রংপুরের কাউনিয়া থেকে পাবর্তীপুর আর বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ রেলরুটের কাজ। ঋণচুক্তি অনুযায়ী ভারত অর্থছাড় না করায় এসব প্রকল্পে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও দৃশ্যমান হয়নি কোনো কাজ। এ অবস্থায় অর্থায়নের বিকল্প উৎস খোঁজার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
দৃশ্যমান যমুনা রেলসেতু। চলছে শেষ সময়ের ঘষামাজা। বিশ্বমানের প্রযুক্তি, আধুনিক প্রকৌশল ব্যবহার আর প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা নির্মাণ ব্যয়। সব মিলিয়ে দেশের অন্যতম বড় এ স্থাপনা ঘিরে চওড়া হয়েছিল দেশের উত্তর জনপদের মানুষের স্বপ্ন। পুরোদমে চালু হলে সেতুটি ব্যবহার করে উত্তরাঞ্চল থেকে প্রতিদিন চলাচল করতে পারবে ৩৮টি ট্রেন।
২০১৬ সালের ডিসেম্বরে একনেকে অনুমোদন আর ২০২০ এর নভেম্বরে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয় এই রেল সেতুর। প্রকল্পের সমীক্ষায় বলা হয়েছিল নির্মাণ শেষে উত্তরের সঙ্গে ঢাকার রেল যোগাযোগে দূরত্ব কমবে, বাঁচবে সময়, সাশ্রয় হবে যাত্রীদের অর্থও।
পরিকল্পনায় ছিল, সেতুটির সুবিধা পেতে উত্তরাঞ্চল থেকে বগুড়া হয়ে সিরাজগঞ্জ রুট দিয়ে ঢাকায় ঢুকবে ট্রেনগুলো। দূরত্ব কমবে ১০০ কিলোমিটারের উপরে। শুধু তাই নয়, এ রুটে বিভাগীয় শহর রংপুরকে যুক্ত করারও পরিকল্পনার কথাও বলা হয়েছিল। তবে জাপানের প্রতিষ্ঠান জাইকার সহায়তায় যমুনা রেলসেতুর নির্মাণ কাজ প্রায় শতভাগ শেষে হলেও মুখ থুবড়ে পড়েছে উত্তরের রেলপথ তৈরির কাজ। কাজের দৃশ্যমান অগ্রগতি শূন্য শতাংশ প্রায়। কিন্তু কেনো?
প্রকল্প সূত্র বলছে, যে দুটি রেলরুটের কাজ ঝুলে আছে সেখানে অর্থায়নের জন্য ভারতের সঙ্গে চুক্তি ছিল। যার একটি বগুড়া-সিরাজগঞ্জ ডুয়েলগেজ রেলপথ প্রকল্প। এছাড়া যমুনা রেলসেতু প্রকল্পের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক রেলরুট পার্বতীপুর থেকে কাউনিয়া ৫৭ কিলোমিটার রেলপথ মিটারগেজ থেকে তা ডুয়েলগেজে রূপান্তর প্রকল্প। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ৬ বছর মেয়াদি এ প্রকল্প অনুমোদন হলেও নেই অগ্রগতি।
ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ অর্থায়নে ১ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকার এ প্রকল্পে লাইন অব ক্রেডিটের আওতায় ভারতের দেবার কথা ছিল ১ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা। কিন্তু কেবল চুক্তি করে অর্থ ছাড় না দেয়ায় ২০২২ সালের ২৫শে আগস্ট ভারতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দিয়েই দায় সেরেছে গেল সরকার। বাস্তবতা হলো, প্রকল্পের মেয়াদ ফুরিয়ে গেলেও এখনো শুরু হয়নি নির্মাণকাজ। আর বগুড়া সিরাজগঞ্জ রেলপথের কাজ ২০১৮ সাল থেকে ঝুলে আছে কেবল জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায়।
পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক শাহ সূফী নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘ভারতের অর্থায়নের কারণে এইটা ধীর গতি হবে। এইটা এখনো ডিজাইন ফেজে আছে। মূল ডিজাইন পেলে তারপর টেন্ডারে যাবে।’
লাইন অব ক্রেডিট বা এলওসি ঋণের শর্তে বলা হয়েছে, এসব প্রকল্পের ৭৫ শতাংশ অর্থায়নই হবে ভারত থেকে আর ২৫ শতাংশ দেবে বাংলাদেশ সরকার। তবে এখানেও প্রকল্পের ৭৫ শতাংশ পণ্য-সেবাই ভারত থেকে আমদানি করতে হবে মর্মে শর্ত জুড়ে দেয় ভারত সরকার। আওয়ামী লীগ সরকার সব শর্ত মেনে নেয়ার পরও বাংলাদেশ রেলওয়ের এসব প্রকল্পে ভারতীয় অর্থায়ন নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
শিক্ষক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ত্বহা হোসাইন বলেন, ‘সরাসরি আমরা যেতে পারি না। আমাদেরকে রংপুর থেকে পার্বতীপুরে ছোট ট্রেনে গিয়ে তারপর যেতে হচ্ছে। রংপুর যদি আমরা বিভাগীয় শহর মনে করি তাহলে যোগাযোগের জন্য আমাদের সে ধরনের ব্যবস্থা করে দিতে হবে।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রকল্পের কাজে ভারতের হাত পা গুটিয়ে নেয়ার মানসিকতা প্রতিবেশী সুলভ নয়। এছাড়া রেলওয়ে সূত্র বলছে, প্রকল্পে কেনাকাটা, সমীক্ষা, অর্থব্যয় মূল্যায়নে ভারত নতুন করে কিছু শর্ত আরোপের কথা জানিয়েছে। তাহলে বাংলাদেশের জন্য কী হতে পারে বিকল্প সমাধান? জানতে চেয়েছিলাম সাবেক এই রাষ্ট্রদূতের কাছে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘যেকোনো সিদ্ধান্ত হতে পারে। আমরা মিউচ্যুয়ালি এই চুক্তি থেকে বের হয়ে আসতে পারি। তখন আমরা তৃতীয় কোনো পক্ষ দেখতে পারি।’