উষ্ণতা ও খরায় জর্জরিত ক্যালিফোর্নিয়া
- আপডেট সময় : ০৫:২৬:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫
- / ৩৪৭ বার পড়া হয়েছে
লস অ্যাঞ্জেলেসের ইতিহাসে সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক দাবানলের সূত্রপাত খুঁজতে উঠেপড়ে লেগেছে সবাই। তবে পরিবেশ বিজ্ঞানীদের অনেকেই জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করছেন। একই সুরে শহরের গভর্নর বলছেন ক্যালিফোর্নিয়ায় এখন দাবানলের নির্দিষ্ট কোনো মৌসুম নেই। পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি ও খরার জন্য ভয়াবহ দাবানলের ঘটনা বার বার ঘটছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে মনুষ্য সৃষ্ট কারণগুলোকে সামনে আনছেন সবাই।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ফায়ার প্রটেকশন অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য মতে, দেশটিতে দাবানলের সূত্রপাতের বড় একটি কারণ হলো বজ্রপাত। এছাড়া ইচ্ছাকৃতভাবে আগুন দেয়া এবং বৈদ্যুতিক লাইনে স্ফুলিঙ্গতেও দাবানলের সূত্রপাত হয়ে থাকে। এগুলোর বাইরে অনেক সময় আবর্জনা পোড়ানো ও আতশবাজি ফুটানো থেকেও দাবানলের আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এসব ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে দাবানলের সূত্রপাতের উদাহরণও আছে।
তবে লস অ্যাঞ্জেলেস শহরে আগুনের ক্ষেত্রে তেমন কিছু হয়নি বলে মনে করছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর জানান, অঙ্গরাজ্যটিতে দাবানলের নির্দিষ্ট মৌসুম নেই। সম্প্রতি সারা বছর ধরেই সক্রিয় আছে বিভিন্ন পয়েন্টের দাবানল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর ঘন ঘন ঘটছে দাবানলের ঘটনা। যা দিন দিন আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। ২০২৪ সালে বৈশ্বিক তাপমাত্রা দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। মার্কিন পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থার প্রতিবেদন অনুসারে, দাবানলের পুনরাবৃত্তি ও আগুনের মৌসুমকে দীর্ঘায়িত করতে বড় ভূমিকা রাখছে জলবায়ু পরিবর্তন।
প্রধান বিজ্ঞানী ও নাসার জ্যেষ্ঠ জলবায়ু উপদেষ্টা ড. ক্যাথরিন ক্যালভিন বলেন, ‘লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানল সত্যিই বিধ্বংসী। দাবানলের পেছনে একাধিক কারণ কাজ করে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আগুনের ঝুঁকি ও এর তীব্রতা বাড়ে। দীর্ঘ সময় খরা এবং পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় শুকনো গাছপালা ও শুষ্ক আবহাওয়ায় আগুনের তীব্রতা বেড়ে যায় বহুগুণ।’
দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় কয়েকমাস ধরে উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের খরা মনিটরের তথ্য বলছে, বর্তমানে ক্যালিফোর্নিয়ার মাত্র ৩৯ শতাংশ অঞ্চল সম্পূর্ণ খরামুক্ত। অথচ কয়েক দশক আগেও তা ছিল প্রায় ৯৭ শতাংশ। এছাড়া, লস অ্যাঞ্জেলেসের অনেক অবকাঠামোতে প্রচুর পরিমাণে দাহ্য পদার্থও আছে। পাশাপাশি সান্তা আনা উপকূলের গরম হাওয়া শহরের দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। যা পরিবেশকে করছে উত্তপ্ত। এতে সামান্য স্ফুলিঙ্গতেই দাবানলের সৃষ্টি হচ্ছে।
ইউরোপীয় বন ইনস্টিটিউটের সিনিয়র অগ্নি ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ লিন্ডন প্রন্টো বলেন, ‘সান্তা আনা বাতাসের বিপজ্জনক দিক হলো শুষ্কতার প্রভাব। উপকূলের এই বাতাসে বছরের যেকোনো সময় গাছপালা সবচেয়ে শুকিয়ে যায়। বাতাসের আর্দ্রতার পরিমাণ এককের ঘরে নেমে যায়। তখন সামান্য কারণই আগুনের জন্য অত্যন্ত সহজলভ্য হয়ে ওঠে। আগুন খুব দ্রুত ছড়িয়ে যায় এবং দীর্ঘ সময় স্থায়ী হয়।’
দাবানলে বিস্তীর্ণ অঞ্চল পুড়ে নষ্ট হচ্ছে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল। কিছু প্রজাতির প্রাণী দ্রুত পালিয়ে যেতে পারলেও। বেশিরভাগ প্রাণীকে মরতে হয় আগুনে পুড়ে। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জীববৈচিত্র্যপূর্ণ অঞ্চল ক্যালিফোর্নিয়া। ২০২০ ও ২১ সালের দাবানলে ক্যালিফোর্নিয়ায় গ্রাস হয়েছে ৪২ লাখ একর অঞ্চল। একই সময়ে দাবানলে মারা গেছে ও বাস্তুচ্যুত হয়েছে ৩০০ কোটির বেশি প্রাণী।
জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি প্রতিবেদন বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনে দাবানলের পরিস্থিতি আরও অবনতি হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিবেশগত বিপর্যয়ে মানুষের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব আছে।