নেই গ্যাস, রান্নার বিকল্প খুঁজছেন রাজধানীবাসী
- আপডেট সময় : ০১:২৬:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫
- / ৩৪৫ বার পড়া হয়েছে
গ্যাস সংকটের কারণে ভোগান্তিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। সংযোগ থাকতেও রান্না না করতে পেরে খুঁজছেন বিকল্প ব্যবস্থা। খাচ্ছেন হোটেলে গিয়ে। কর্তৃপক্ষ বলছে, শীত এলেই বাসাবাড়িতে বাড়ে গ্যাসের চাহিদা বিপরীতে সরবরাহ কম থাকায় দেখা দেয় সংকট। আর নিজস্ব উৎপাদন না বাড়িয়ে আমদানি নির্ভরতা বাড়ানোই এ সংকটের মূল কারণ বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
দিয়াশলাইয়ের কাঠি নিঃশেষ, তবুও জ্বলছে না চুলা। পুরান ঢাকার নবাবপুরের এই বাসিন্দার এমন ভোগান্তি গত কয়েক বছর ধরেই। তবে সংকট তীব্র হয়েছে গত দু’মাস।
নবাবপুর ছাড়াও রাজধানীর খিলগাঁও, তেজগাঁও, মোহাম্মদপুর, শাহজাদপুর, বাড্ডা, রামপুরা, মুগদা, মিরপুর, মগবাজার, মধুবাগসহ আরও বেশ কয়েকটি এলাকায় গ্যাসের সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে বলছেন বাসিন্দারা। ঘরে রান্না হয় তো হয়ই না। সংযোগ থাকতেও কিনতে হচ্ছে এলপিজি। বিকল্প ভরসা লাকড়ি বা ইলেকট্রিক চুলা কিংবা খাবার হোটেল।
শীত আসলেই খাবার ও পানি গরমের প্রয়োজনে বাড়ে গ্যাসের চাহিদা। সেই সঙ্গে চাপও কমে রাজধানীসহ সারাদেশেই। এর পেছনের কারণ স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী সংকট।
জ্বালানি বিভাগের গতানুগতিক ব্যাখ্যা, অতিরিক্ত ঠাণ্ডায় পাইপলাইনে থাকা তরল পদার্থ জমে কমিয়ে দেয় গ্যাসের চাপ। এরইমধ্যে জানুয়ারি মাসেই পর পর দুবার কারিগরি ত্রুটির কারণে চট্টগ্রামে ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের একটি থেকে গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়।
এতে স্বাভাবিক সরবরাহ থেকেও প্রায় দেড়শো মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে কেন স্বল্প সময়ের ব্যবধানে দু’বার বন্ধ হলো এলএনজি টার্মিনালটি?
আরপিজিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘না, সমস্যার কিছু না, রুটিন চেক আপ থাকে। সমুদ্রের নীচে আমাদের অবকাঠামো রয়েছে। শীতের সময় যে লিকুইড থাকে সেটা জমতে পারে।’
দীর্ঘমেয়াদী সংকটের কারণ হিসেবে অবৈধ সংযোগ এবং পুরনো লাইনের বিভিন্ন জায়গায় গ্যাস লিকেজে। এ কারণে সিস্টেম লসসহ চাহিদার বিপরীতে প্রয়োজনীয় গ্যাস সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছে তিতাস নিজেও।
তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহনেওয়াজ পারভেজ বলেন, ‘প্রতিদিন যতি ১ হাজার ৭০০ মিলিয়ন কিউবিক ফিট পাই তাহলে বিভিন্ন খাতে সরবরাহ করে স্যাটিসফাই করতে পারি। আমার যে গ্রাহক তাদের চাহিদা ২১০০ ঘনফুট। কিন্তু আমি পাচ্ছি ১৫০০। ২০০ কিন্তু এদিক দিয়ে নেই।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লুটপাট করতে বিগত সরকারের আমদানি নির্ভর নীতি নিজস্ব গ্যাস উৎপাদনকে নিরুৎসাহিত করেছে। ফলে তৈরি হয়েছে দীর্ঘমেয়াদী সংকট।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, ‘খুলনায় গ্যাস নিয়ে যাওয়ার জন্য ট্রান্সমিশন লাইন তৈরি হয় নি কেন? এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ দরকার, ভবিষ্যতে গ্যাস আমদানি বাড়ানো দরকার। যেসব জায়গা থেকে বলা হচ্ছে পুরোনো দিনের টেপ রেকর্ড বাজানো হচ্ছে। নতুন সরকার এসে যে নতুন কথা শোনাবে তা নেই।’
স্বাভাবিক চাহিদা মেটাতে চার হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রয়োজন প্রতিদিন। এর মধ্যে উৎপাদন ও সরবরাহকৃত এলএনজি দিয়ে চাহিদা মেটে আড়াই হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের কিছু বেশি। ঘাটতি থাকে দেড় হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস।