জলবায়ু পরিবর্তনে পৃথিবী উত্তপ্ত হবার কারণে বায়ুমণ্ডলে বাড়ছে আর্দ্রতা। এতে করে তাপপ্রবাহ, খরা, দাবানল ও অতিবৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ পরিণত হয়েছে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায়। লস অ্যাঞ্জেলেসের ভয়াবহ দাবানলের কারণও এই জলবায়ু পরিবর্তন। যদিও এমন বিধ্বংসী প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরেও জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে আনতে পারেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, এমন আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, খরা, দাবানল, তুষারপাত। গেল বছর এমন অসংখ্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাক্ষী হয়েছে বিশ্ববাসী। ২০২৫ সালের শুরুটাও হলো খুব বাজেভাবে। যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে পুড়ে ছাই ৩৯ হাজার একরের বেশি এলাকা। ক্ষতিগ্রস্ত ১২ হাজারের বেশি স্থাপনা।
এমন পরিস্থিতিতে আবারো ঘুরে ফিরে আসছে জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যু। গেল বছর প্রথমবারের মতো বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা ছাড়িয়েছে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বাড়ার কারণে অতিরিক্ত আর্দ্রতা ধারণ করে বায়ুমণ্ডল। ফলে তাপপ্রবাহ, খরা ও অতিবৃষ্টি পরিণত হয়েছে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায়।
ইটিএইচ জুরিখের জলবায়ু বিজ্ঞানী এরিক ফিশার বলেন, ‘আমরা এখন যে চরম আবহাওয়া দেখতে পারছি, উষ্ণ বায়ুমণ্ডল ও উত্তপ্ত সমুদ্রপৃষ্ঠ এর পেছনে দায়ী। এতে করে বায়ুমণ্ডল অতিরিক্ত আর্দ্রতা ধারণ করে যা বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ সৃষ্টি করছে।’
পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে বেধে রাখতে ২০১৫ সালে সম্মত হয় বিশ্বের প্রায় ২০০টি দেশ। যা প্যারিস জলবায়ু চুক্তি নামে পরিচিত। তবে প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর এই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে আনেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর মাত্র কয়েকদিন পর দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণ করবেন রিপাবলিকান নেতা। শঙ্কা রয়েছে এবারও একই পথ অনুসরণ করবেন তিনি।
লস অ্যাঞ্জেলেসের ভয়াবহ দাবানলের পেছনেও রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। বিশ্লেষকরা বলছেন, ধরিত্রীকে রক্ষায় শেষবারের মতো পদক্ষেপ নিতে প্রকৃতির সতর্কবার্তা ছিল এই দাবানল। যদিও দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রকে জলবায়ু চুক্তি থেকে বের করে আনতে পারেন ট্রাম্প, এমন আশঙ্কার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় জরুরি ব্যবস্থাপনা সংস্থা- ফিমার তহবিলও কমাতে পারে নবনির্বাচিত মার্কিন প্রশাসন।
ফ্রান্স ২৪ এর আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক কেথিভেন জর্জেসতানি বলেন, ‘২০১৯ সালে ট্রাম্প ফিমা তহবিলের কিছু অর্থ ব্যবহার করে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্র- মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর তৈরি করেছিলেন। এবার ক্ষমতায় আসার পর তিনি কী করবেন, আমরা তা জানি না। কারণ তিনি কেন্দ্রীয় বাজেট কমানোর ঘোষণা দিলেও ফিমা'র বিষয়ে কিছু জানাননি। তবে সংস্থাটিকে কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না তিনি।’
বিজ্ঞানীরা বলছেন, জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর থেকে নির্ভরতা কমাতে না পারলে ক্রমশ বাড়বে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। শঙ্কার মুখে পড়বে প্রকৃতি ও জীবন।