ঢাকা ০৩:৩৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

বেগম খালেদা জিয়ার লিভার প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়নি : ডা. জাহিদ

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১১:৩৩:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫
  • / ৩৪৫ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার লিভার প্রতিস্থাপনের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

বিএনপি চেয়ারপার্সনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন লন্ডনের স্থানীয় সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ কথা জানান।

মঙ্গলবার লন্ডনের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সেন্ট্রাল লল্ডনের ‌‘দ্য লন্ডন ক্লিনিকে’র সামনে ব্রিফিংকালে তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার ‘লিভার প্রতিস্থাপন’ করার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেকসহ সেদেশের বিএনপি নেতারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) স্বাস্থ্যগত সব পরীক্ষার প্রতিবেদন আসার পরই ‘লিভার প্রতিস্থাপনের’ সিদ্ধান্ত নেবে মেডিকেল বোর্ড। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি’র চেয়ারপার্সনের শারীরিক ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনা করেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে তাঁর বয়স এখন ৭৯ বছর। এ কারণে আদৌ ‘লিভার প্রতিস্থাপন’ করার মতো শারীরিক অবস্থায় তিনি (ম্যাডাম জিয়া) আছেন কিনা বা কীভাবে করলে ম্যাডাম আরও ভালো থাকতে পারবেন এসব বিষয় বিবেচনা করতে হবে। তবে সেগুলো বিচার-বিশ্লেষণের সময় এখনো আসেনি।’

বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় অতি দ্রুত যে সব পরিবর্তন আনা দরকার সে বিষয়গুলোই চিকিৎসকরা বিবেচনায় নিচ্ছেন বলেও উল্লেখ করেন ডা. জাহিদ হোসেন।

তিনি বলেন, ‘চেয়ারপার্সনের পরবর্তী চিকিৎসা এখন কতটুকু প্রয়োজন সে বিষয়েই আলোচনা হচ্ছে। তার লিভার ডিজিজ এবং হার্টের যে সমস্যা রয়েছে সেগুলোর রিপোর্ট এখনো কমপ্লিট হয়নি।’

ডা. জাহিদ আরও বলেন, ‘দ্য লন্ডন ক্লিনিকে’ ভর্তি হওয়ার পরে বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরিক্ষা করা হচ্ছে। তার লিভার, কিডনি, হার্টের জটিলতা রয়েছে। প্রত্যেকটি ‘এ্যাড্রেস’ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কাজেই সব মিলিয়ে আগামী কয়েকদিন আরো বেশকিছু পরীক্ষা-নিরিক্ষা করবেন এখানকার চিকিৎসকরা।

তিনি বলেন, ‘দ্যা লন্ডন ক্লিনিকে’র’ লিভার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক জন প্যাট্রিক কেনেডির নেতৃত্বে ৬ থেকে ৭ জনের একটি মেডিকেল টিম বেগম খালেদা জিয়ার চিকিতৎসায় নিয়োজিত রয়েছেন। তারা আমাদের মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে তাদের ডিসিশন, অবজারভেশন শেয়ার করে যে ধরণের বেটার চিকিৎসা দেয়া প্রয়োজন সেটাই দিচ্ছেন। ’

ডা. জাহিদ আরও বলেন, ২০২১ সালে ২৭ এপ্রিল বেগম খালেদা জিয়া প্রথম করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। এরপর তিনি ১৫ বার ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। পালাক্রামে ৪২২ দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ সময়কালে যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের চিকিৎসক, অস্ট্রেলিয়ার নামকরা সব চিকিৎসক ও ডা. জুবাইদা রহমানসহ বিশিষ্ট চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের নেতৃত্বে তার চিকিৎসা হয়েছে। ওই সময় বিদেশি চিকিৎসকরা আমাদের দ্বিধাহীনভাবে বলেছিলেন যে, নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও আপনার বেগম খালেদা জিয়াকে যে চিকিৎসা দিয়েছেন তা চমৎকার। তাদের ভাষায় ‘ইউ ডিড দ্যা ওয়ান্ডারফুল জব’। এমন কি এখন লন্ডন হাসপাতালের ডাক্তারাও একই কথা বলছেন।

বিএনপির চেয়ারপার্সনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার সব টেস্টের রিপোর্ট পাবার পর প্রয়োজন হলে যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা লন্ডনে আসবেন। আমাদের সাথে তাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ আছে। ’

ব্রিফিংয়ে তিনি আরো জানান, ‘হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেলেই বেগম খালেদা জিয়া সরাসরি তাঁর বড় ছেলে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসায় যাবেন। সেখানে তিনি আরও কিছুদিন থাকবেন।’

এর আগে গত সোমবার সন্ধ্যায় ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার মেডিকেল সব রিপোর্ট হাতে পেতে আগামী শুক্রবার পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। চিকিৎসকরা আগামী শুক্রবারের মধ্যেই তার পরবর্তী চিকিৎসা সম্পর্কে একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে যেমনটি দেশবাসী উদ্বিগ্ন ঠিক তেমনি এখানকার চিকিৎসকরা খুব ভালোভাবে তাঁর টেক কেয়ার করছেন।’

বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার চলমান চিকিৎসার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক বলেন, ‘ন্যাফ্রলজি কনসালটেন্ট, হেপাটোলজি কনসালটেন্ট ও লিভার ট্রান্সপ্লান্টসহ বিভিন্ন বিষয়ে ডাক্তাররা প্রতিদিনই বেগম জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন।’

এদিকে বেগম খালেদা জিয়া আগের চেয়ে অনেকটা ভালো আছেন এবং তাঁর স্বাস্থ্যের অবস্থা উন্নতির দিকে বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলগমীর।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে দলীয় শীর্ষ নেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা জানান।

তিনি বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের লন্ডনে বেসরকারি খাতের স্বাস্থ্য-সেবায় ঐতিহ্যবাহী ও সর্ববৃহৎ হাসপাতাল ‘দ্য লন্ডন ক্লিনিকে’ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা-সেবা শুরুর ৭ দিনের-মাথায় তাঁর শারীরিক অবস্থা ‘অনেকটা বেটার’।’

খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক বাসসকে বলেন, সব পরীক্ষার প্রতিবেদন এখনও হাতে আসেনি। তবে যতগুলোর প্রতিবেদন এসেছে, উদ্বেগের কিছু নেই। এখানে অনেক ভালো চেকআপ হচ্ছে। হাসপাতালের পরিবেশও ভালো। এতে তিনি ভালো বোধ করছেন।

বিএনপি চেয়ারপার্সন ও বাংলাদেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে গত ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনের সেন্ট্রাল-ওয়েস্টস্থ বিশেষায়িত হাসপাতাল লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। লিভার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক জন প্যাট্রিক কেনেডির তত্ত্বাবধানে তিনি চিকিৎসাধীন আছেন।

বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া তাঁর বড় ছেলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বড় ছেলের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান, ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকো’র স্ত্রী শর্মিলা রহমান, নাতনী ব্যারিস্টার জাইমা রহমান (তারেক রহমানের মেয়ে) এবং জাহিয়া রহমান ও জাফিয়া রহমানের (দু’জনেই আরাফাত রহমান কোকোর মেয়ে) সার্বক্ষণিক সান্নিধ্যে মানসিকভাবেও প্রশান্তিতে রয়েছেন।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকলেও তিনি ছেলের বাসায় রান্না করা খাবার খাচ্ছেন। সকাল ও বিকেলের নাস্তাও বাসা থেকে দেওয়া হচ্ছে। ছেলে তারেক রহমান (বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) নিজেই খাবার নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছেন।

বিএনপি চেয়ারপার্সনের সফরসঙ্গী, ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, বেগম খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী চিকিৎসক দলের সদস্য ডা. এনামুল হক চৌধুরী, যুক্তরাজ্য বিএনপি’র নেতারা লন্ডনে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে এবং বিভিন্ন সময়ে বিএনপি’র মিডিয়া সেলের মাধ্যমে ঢাকার সাংবাদিকদের কাছে পাঠানো ভিডিও বার্তায় এ সব তথ্য তুলে ধরেন।

৭৯ বছর বয়সী এই নেত্রী (বেগম খালেদা জিয়া) দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। ২০১৮ সালে একটি মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর তাঁর অসুস্থতা আরো বেড়ে যায়। ইতোমধ্যে তিনি জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণেও পড়েন কয়েকবার। এ জন্য রাজধানী ঢাকায় বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাতের অন্যতম চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান এভারকেয়ার হাসপাতালে দীর্ঘ সময় তাঁকে চিকিৎসাধীন থাকতে হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

বেগম খালেদা জিয়ার লিভার প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়নি : ডা. জাহিদ

আপডেট সময় : ১১:৩৩:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার লিভার প্রতিস্থাপনের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

বিএনপি চেয়ারপার্সনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন লন্ডনের স্থানীয় সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ কথা জানান।

মঙ্গলবার লন্ডনের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সেন্ট্রাল লল্ডনের ‌‘দ্য লন্ডন ক্লিনিকে’র সামনে ব্রিফিংকালে তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার ‘লিভার প্রতিস্থাপন’ করার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেকসহ সেদেশের বিএনপি নেতারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) স্বাস্থ্যগত সব পরীক্ষার প্রতিবেদন আসার পরই ‘লিভার প্রতিস্থাপনের’ সিদ্ধান্ত নেবে মেডিকেল বোর্ড। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি’র চেয়ারপার্সনের শারীরিক ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনা করেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে তাঁর বয়স এখন ৭৯ বছর। এ কারণে আদৌ ‘লিভার প্রতিস্থাপন’ করার মতো শারীরিক অবস্থায় তিনি (ম্যাডাম জিয়া) আছেন কিনা বা কীভাবে করলে ম্যাডাম আরও ভালো থাকতে পারবেন এসব বিষয় বিবেচনা করতে হবে। তবে সেগুলো বিচার-বিশ্লেষণের সময় এখনো আসেনি।’

বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় অতি দ্রুত যে সব পরিবর্তন আনা দরকার সে বিষয়গুলোই চিকিৎসকরা বিবেচনায় নিচ্ছেন বলেও উল্লেখ করেন ডা. জাহিদ হোসেন।

তিনি বলেন, ‘চেয়ারপার্সনের পরবর্তী চিকিৎসা এখন কতটুকু প্রয়োজন সে বিষয়েই আলোচনা হচ্ছে। তার লিভার ডিজিজ এবং হার্টের যে সমস্যা রয়েছে সেগুলোর রিপোর্ট এখনো কমপ্লিট হয়নি।’

ডা. জাহিদ আরও বলেন, ‘দ্য লন্ডন ক্লিনিকে’ ভর্তি হওয়ার পরে বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরিক্ষা করা হচ্ছে। তার লিভার, কিডনি, হার্টের জটিলতা রয়েছে। প্রত্যেকটি ‘এ্যাড্রেস’ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কাজেই সব মিলিয়ে আগামী কয়েকদিন আরো বেশকিছু পরীক্ষা-নিরিক্ষা করবেন এখানকার চিকিৎসকরা।

তিনি বলেন, ‘দ্যা লন্ডন ক্লিনিকে’র’ লিভার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক জন প্যাট্রিক কেনেডির নেতৃত্বে ৬ থেকে ৭ জনের একটি মেডিকেল টিম বেগম খালেদা জিয়ার চিকিতৎসায় নিয়োজিত রয়েছেন। তারা আমাদের মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে তাদের ডিসিশন, অবজারভেশন শেয়ার করে যে ধরণের বেটার চিকিৎসা দেয়া প্রয়োজন সেটাই দিচ্ছেন। ’

ডা. জাহিদ আরও বলেন, ২০২১ সালে ২৭ এপ্রিল বেগম খালেদা জিয়া প্রথম করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। এরপর তিনি ১৫ বার ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। পালাক্রামে ৪২২ দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ সময়কালে যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের চিকিৎসক, অস্ট্রেলিয়ার নামকরা সব চিকিৎসক ও ডা. জুবাইদা রহমানসহ বিশিষ্ট চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের নেতৃত্বে তার চিকিৎসা হয়েছে। ওই সময় বিদেশি চিকিৎসকরা আমাদের দ্বিধাহীনভাবে বলেছিলেন যে, নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও আপনার বেগম খালেদা জিয়াকে যে চিকিৎসা দিয়েছেন তা চমৎকার। তাদের ভাষায় ‘ইউ ডিড দ্যা ওয়ান্ডারফুল জব’। এমন কি এখন লন্ডন হাসপাতালের ডাক্তারাও একই কথা বলছেন।

বিএনপির চেয়ারপার্সনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার সব টেস্টের রিপোর্ট পাবার পর প্রয়োজন হলে যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা লন্ডনে আসবেন। আমাদের সাথে তাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ আছে। ’

ব্রিফিংয়ে তিনি আরো জানান, ‘হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেলেই বেগম খালেদা জিয়া সরাসরি তাঁর বড় ছেলে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসায় যাবেন। সেখানে তিনি আরও কিছুদিন থাকবেন।’

এর আগে গত সোমবার সন্ধ্যায় ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার মেডিকেল সব রিপোর্ট হাতে পেতে আগামী শুক্রবার পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। চিকিৎসকরা আগামী শুক্রবারের মধ্যেই তার পরবর্তী চিকিৎসা সম্পর্কে একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে যেমনটি দেশবাসী উদ্বিগ্ন ঠিক তেমনি এখানকার চিকিৎসকরা খুব ভালোভাবে তাঁর টেক কেয়ার করছেন।’

বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার চলমান চিকিৎসার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক বলেন, ‘ন্যাফ্রলজি কনসালটেন্ট, হেপাটোলজি কনসালটেন্ট ও লিভার ট্রান্সপ্লান্টসহ বিভিন্ন বিষয়ে ডাক্তাররা প্রতিদিনই বেগম জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন।’

এদিকে বেগম খালেদা জিয়া আগের চেয়ে অনেকটা ভালো আছেন এবং তাঁর স্বাস্থ্যের অবস্থা উন্নতির দিকে বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলগমীর।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে দলীয় শীর্ষ নেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা জানান।

তিনি বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের লন্ডনে বেসরকারি খাতের স্বাস্থ্য-সেবায় ঐতিহ্যবাহী ও সর্ববৃহৎ হাসপাতাল ‘দ্য লন্ডন ক্লিনিকে’ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা-সেবা শুরুর ৭ দিনের-মাথায় তাঁর শারীরিক অবস্থা ‘অনেকটা বেটার’।’

খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক বাসসকে বলেন, সব পরীক্ষার প্রতিবেদন এখনও হাতে আসেনি। তবে যতগুলোর প্রতিবেদন এসেছে, উদ্বেগের কিছু নেই। এখানে অনেক ভালো চেকআপ হচ্ছে। হাসপাতালের পরিবেশও ভালো। এতে তিনি ভালো বোধ করছেন।

বিএনপি চেয়ারপার্সন ও বাংলাদেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে গত ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনের সেন্ট্রাল-ওয়েস্টস্থ বিশেষায়িত হাসপাতাল লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। লিভার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক জন প্যাট্রিক কেনেডির তত্ত্বাবধানে তিনি চিকিৎসাধীন আছেন।

বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া তাঁর বড় ছেলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বড় ছেলের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান, ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকো’র স্ত্রী শর্মিলা রহমান, নাতনী ব্যারিস্টার জাইমা রহমান (তারেক রহমানের মেয়ে) এবং জাহিয়া রহমান ও জাফিয়া রহমানের (দু’জনেই আরাফাত রহমান কোকোর মেয়ে) সার্বক্ষণিক সান্নিধ্যে মানসিকভাবেও প্রশান্তিতে রয়েছেন।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকলেও তিনি ছেলের বাসায় রান্না করা খাবার খাচ্ছেন। সকাল ও বিকেলের নাস্তাও বাসা থেকে দেওয়া হচ্ছে। ছেলে তারেক রহমান (বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) নিজেই খাবার নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছেন।

বিএনপি চেয়ারপার্সনের সফরসঙ্গী, ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, বেগম খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী চিকিৎসক দলের সদস্য ডা. এনামুল হক চৌধুরী, যুক্তরাজ্য বিএনপি’র নেতারা লন্ডনে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে এবং বিভিন্ন সময়ে বিএনপি’র মিডিয়া সেলের মাধ্যমে ঢাকার সাংবাদিকদের কাছে পাঠানো ভিডিও বার্তায় এ সব তথ্য তুলে ধরেন।

৭৯ বছর বয়সী এই নেত্রী (বেগম খালেদা জিয়া) দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। ২০১৮ সালে একটি মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর তাঁর অসুস্থতা আরো বেড়ে যায়। ইতোমধ্যে তিনি জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণেও পড়েন কয়েকবার। এ জন্য রাজধানী ঢাকায় বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাতের অন্যতম চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান এভারকেয়ার হাসপাতালে দীর্ঘ সময় তাঁকে চিকিৎসাধীন থাকতে হয়েছে।