দীর্ঘ ১৫ মাসের নৃশংস সহিংসতার পর অবশেষে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলো হামাস ও ইসরাইল। তিনটি ধাপে চুক্তিটি কার্যকর হবে ১৯ জানুয়ারি থেকে। ৬ সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার। ইসরাইল বলছে, জিম্মিদের মুক্তির জন্য এটি সঠিক পদক্ষেপ। যদিও হামাসের দাবি, ইসরাইল তার লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। বিশ্বনেতারা এটিকে বড় অর্জন হিসেবে দেখছেন। যুদ্ধবিরতির খবর উল্লাসে ফেটে পড়েন ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের বাসিন্দারা।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনিদের ওপর চলছে ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর আগ্রাসন। দীর্ঘ ১৫ মাসের যুদ্ধে মাত্র একবার ৭ দিনের যুদ্ধবিরতি হয়েছিল। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতায় কয়েক দফায় মাসের পর মাস বৈঠক করেও কোনো ফল আসছিল না। সম্প্রতি নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০ জানুয়ারির মধ্যে যুদ্ধের অবসান চেয়ে হুমকি দিয়েছিলেন।
গেল ১৫ মাসের যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে সাড়ে ৪৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। আহত ও বাস্তুচ্যুত হয়েছে কয়েক লাখ মানুষ। পুরো উপত্যকা রূপ নিয়েছে ধ্বংসস্তূপে। অবশেষে আলোর মুখ দেখলো যুদ্ধবিরতি চুক্তি।
কাতারের রাজধানী দোহায় যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে ঐকমত্যে পৌঁছায় দুই পক্ষ। চুক্তির আওতায় গাজায় সংঘাত বন্ধ ও বন্দিবিনিময়ের মাধ্যমে মুক্তির পথ খুলছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে কাতার।
কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুলরহমান আল থানি বলেন, ‘হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে চলমান সংঘাতে বন্দিবিনিময়ের মাধ্যমে যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে পৌঁছানোর সত্যিই আনন্দের খবর। উভয় পক্ষের সম্মতিতে যুদ্ধ অবসানের পথ খুলেছে। ধ্বংসপ্রাপ্ত গাজা উপত্যকায় এখন ফিলিস্তিনিরা প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা পাবে।’
চুক্তিটি কার্যকর হবে ১৯ জানুয়ারি থেকে। প্রতিদিন ৬০০ ট্রাক বোঝাই মানবিক সাহায্য গাজায় প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছে। চুক্তিটি ৩টি ধাপে সম্পন্ন হবে। প্রথম ধাপে ছয় সপ্তাহে ৩৩ জন ইসরালি বন্দিকে মুক্তি দেবে হামাস। এই ধাপ সফল হলে শুরু হবে দ্বিতীয় ধাপ। ইসরাইলের কারাগারে বন্দিদের মুক্তি ও গাজা থেকে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহারের শর্ত দেয়া হয়েছে। তৃতীয় ধাপের শর্ত আছে ৩ থেকে ৫ বছরের মধ্যে গাজার পুনর্গঠন পরিকল্পনা।
প্রথম ধাপ: ছয় সপ্তাহে হামাস মুক্তি দিবে ৩৩ জনকে। বিনিময়ে, ইসরাইল একজন নারীর সেনার বিনিময়ে ৫০ জন এবং একজন বেসামরিক বন্দির বিনিময়ে ৩০ জনকে মুক্তি দেবে।
দ্বিতীয় ধাপ: গাজা থেকে ইসরাইলি সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার। ফিলাডেলফি করিডোরও এর আওতাভুক্ত থাকবে।
তৃতীয় ধাপ: আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে ৩ থেকে ৫ বছরের পুনর্গঠন পরিকল্পনা।
এমন খবরে উল্লাসে ফেটে পড়েন জিম্মিদের স্বজন ও ফিলিস্তিনের বাসিন্দারা। নিজ বাড়িতে ফেরারা আনন্দে ভাসছেন তারা।
ফিলিস্তিনের বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘এটা বিরাট স্বস্তির খবর। তবে জিম্মিদের সবাইকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে পারবো কিনা তা নিশ্চিত না।’
আরেকজন বলেন, ‘অনেক দেরিতে হলেও এমন সিদ্ধান্তে আমরা বেশ খুশি। যুদ্ধবিরতি আরও অনেক আগেই হওয়া উচিত ছিল।’
গাজার যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা। এটিকে বড় বিজয় হিসেবে বর্ণনা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। অস্ট্রেলিয়া, জাপান, মধ্যপ্রাচ্যসহ ইউরোপের বহু দেশ এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে। এদিকে জাতিসংঘ বলছে, গাজার দুর্ভোগ লাঘবে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
চুক্তির সফলতায় বাইডেন ও ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। একে সঠিক ও কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে ইসরাইল। হামাসের দাবি, ইসরাইল তার লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয়েছে।
হামাসের ভারপ্রাপ্ত প্রধান খলিল আল-হাইয়া বলেন, ‘অবৈধ দখলদারিত্ব বজায় রেখেও ইসরাইলিরা তাদের গোপন বাসলা ও লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে পারেনি। ফিলিস্তিনি জনগণের সংকল্প ও দৃঢ়তায় নিজের ভূমি রক্ষা করেছে। নিজের ভূখণ্ডকে রক্ষা করতে রক্ত দিয়েছে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি।’
তবে চুক্তিটির সমালোচনা করেছেন নেতানিয়াহুর সরকারের অতি-ডানপন্থী সদস্যরা। তারা সেটিকে ইসরাইলের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বর্ণনা করেছেন। যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রতিবাদে জেরুজালেমের বিক্ষোভে নেমেছে ৩ শতাধিক ইসরাইলি।