সংস্কার বাস্তবায়নে রাজনৈতিক ঐক্যই মূল চ্যালেঞ্জ
- আপডেট সময় : ১২:৪১:৪৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫
- / ৩৫৫ বার পড়া হয়েছে
সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নে প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।। তারা বলছেন, এসব প্রস্তাব বাস্তবায়নের সম্ভাবনার পুরোটাই নির্ভর অন্তর্বর্তী সরকারের দক্ষতার ওপর। এই প্রস্তাব বাস্তবায়নে যতটা না চাপ বোধ করবে রাজনৈতিক দলগুলো, তা সহজ হবে জনমানুষকে সম্পৃক্ত করতে পারলে। দেশের স্বার্থে গণঅভ্যুত্থানের মত করে প্রতিটি পক্ষকে এক থাকার পরামর্শ দেন তারা।
গণমানুষের সম্মিলিত প্রতিরোধে স্বৈরাচার পালিয়ে যাওয়ায় তৈরি হয়েছে সবখাতে ব্যাপক সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা।
সংস্কার কমিশনগুলো এই মানুষের প্রত্যাশা কতটা পূরণ করতে পারবেন, কোনখাতে কতটা সংস্কারের প্রস্তাব করবেন এ নিয়ে গেল ৫ মাস ধরেই ছিল আলোচনা।
অবশেষে সরকারের হাতে ৪টি কমিশনেরই সুপারিশ প্রস্তাব। সংসদে একদলীয় শাসন যাতে আর প্রতিষ্ঠা না হয়, একচ্ছত্র ক্ষমতার অপব্যবহারে যাতে একেকজন প্রধানমন্ত্রী স্বৈরাচারী না হয়ে ওঠেন, সব বয়সের, সব মত আর পথের মানুষ যাতে সংসদে স্থান পান, রাষ্ট্রপতি পদ যাতে আলংকারিক না হয়ে আক্ষরিক হয়, মানুষের অধিকার যাতে আরও সুস্পষ্ট, সুনির্দিষ্ট হয় এসব নিয়ে সংস্কারের যে প্রস্তাবগুলো এসেছে তা নিয়েই এখন আলোচনা সব মহলে।
নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সদস্য জেসমিন টুলি কাছে প্রশ্ন ছিল, সরকারের কাছে জমা পড়ার পর এসব প্রস্তাব আসলে কোন পথে এগোবো?
নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সদস্য জেসমিন টুলি বলেন, ‘সরকার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, স্টেক হোল্ডারদের সাথে বসবে এক জায়গায় হওয়ার জন্য। সব সুপারিশ তো ঐকমত্য হতে হবে। তবেই বাস্তবায়নে যাবে।’
অবশ্য সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে বিভিন্ন পর্যায়ের বিশেষজ্ঞদের মধ্যে। তারা বলছেন, এই প্রস্তাবের যেমন অনেক বিষয় অনেক প্রাসঙ্গিক তেমনি অনেক বিষয় কেতাবি।
আইন বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম বলেন, ‘ইংল্যান্ডে বা অন্য জায়গায় উচ্চকক্ষে এলিটদের নেয়া হয়। বিভিন্ন জ্ঞানী, শিক্ষিত, বিজ্ঞানীদের নেয়া হয় তাদের জ্ঞানের প্রাধান্য দিয়ে। এখানে যেটা হচ্ছে তা রাজনৈতিকদের নেয়া হচ্ছে যার ফলে আমি মনে করি না তেমন একটা সংস্কার হবে।’
বিশ্লেষকরা এটাই বলছেন, সংস্কারের এসব প্রস্তাব আসলে নতুন কিছু নয়। সংস্কার নিয়ে সরকারি ও বেসরকারিভাবে বহুবারই আলোচনা ও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কিন্তু ক্ষমতার পালাবদলে রাজনৈতিক সরকারগুলো তা বাস্তবায়ন করেনি এবং গণঅভ্যুত্থানের ৫ মাসের মাথায় সংস্কারের সঙ্গে প্রধান রাজনৈতিক শক্তিগুলোর যে দূরত্ব দেখা যাচ্ছে সে অবস্থায়, সরকারের পক্ষ থেকে যে ঐক্যমত্য কমিশনের কথা বলা হচ্ছে, তাতে কতটা রাজনৈতিক পক্ষগুলো একমত হবেন তা নিয়ে সন্দেহ ও শঙ্কার কথাই বলছেন তারা। এমন অবস্থায় আসলে সংস্কার স্বপ্নের আসলে ভবিষ্যৎ কী?
রাজনীতি বিশ্লেষক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আপনার এই সংস্কার যদি ঢাকা শহরের ভিতর সীমাবদ্ধ থাকে অথবা সেটা যদি শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মাঝে সীমাবদ্ধ থাকে তাহলে সেটা রাজনৈতিক দলের মাঝে চাপ পড়বে না। এইটা যদি পাবলিকের কাছ থেকে ডিমান্ড আসে তাহলে রাজনৈতিক দল বাধ্য হবে এই ডিমান্ডগুলো ফুলফিল করতে। যেকারণে আমাদের সমস্যাগুলো আসলো তা থেকেই যাচ্ছে।’
নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সদস্য জেসমিন টুলি বলেন, ‘দেশে ২৪ এর যে ঘটনা ঘটেছে তা পুনরায় আমরা কেউ দেখতে চাই না। এইটা মানুষের আকাঙ্ক্ষা যা মানুষের কাছ থেকেই আমরা তুলে নিয়ে এসেছি।’
রাজনীতি বিশ্লেষকদের কথায় এটা স্পষ্ট, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ভবিষ্যতের স্বার্থে সবপক্ষগুলোর একসঙ্গে কাজ করার কোন বিকল্প নেই। কিন্তু স্বাধীনতার ৫৪ বছরে যেভাবে নানা ইস্যুতে রাজনৈতিক ঐক্যমত্যের সংকট দেখা গেছে, তাতে সংস্কার কমিশনের এই সদস্যদের প্রত্যাশা কতটা পূরণ হবে তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে, ঐক্যমত্য কমিশনের ঐক্য প্রতিষ্ঠা কতটা ভূমিকা রাখতে পরে, তার জন্য।