দেশকে অস্থিতিশীল করতে ভারতের নতুন পন্থা সীমান্ত সংঘাত
- আপডেট সময় : ০২:৫৯:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫
- / ৩৪১ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে প্রথমে মিডিয়া ট্রায়াল, হাইকমিশনে আক্রমণ ও সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়ে ব্যর্থ হয়ে এবার ভারত বেছে নিয়েছে সীমান্ত সংঘাত। বিগত সরকারের সময়ে ভারতের সাথে বাংলাদেশের যে গোপন সমঝোতা আছে এই সরকার তা মেনে না চলায় অস্বস্তি থেকেই ভারত এসব করছে, বলছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। আর সরকার বলছে, আওয়ামী লীগ সরকার অসমভাবে ভারতকে যেসব সুবিধা দিয়েছে তা দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত সংকট তৈরির অন্যতম কারণ।
সীমান্তে কেমন হবে বাংলাদেশ-ভারত বোঝাপড়া। কার অধিকার কতটুকু তার মূল ভিত্তি ১৯৭৫ সালের বর্ডার গাইডলাইন। এরপরও দুদেশের মধ্যে হয়েছে আরও তিনটি চুক্তি।
এসব চুক্তিতে উল্লেখ আছে, দুদেশের শূন্য রেখা থেকে ১৫০ গজের মধ্যে কোন সীমান্তরক্ষী বাহিনী থাকবে না। একে অপরের সম্মতি ছাড়া নির্মাণ করা যাবে না স্থায়ী অবকাঠামো।
অথচ আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বর্ডার গাইডলাইন না মেনে সীমান্তের অন্তত ১৬০টি স্থানে অসম বেড়া দিয়েছে ভারত। শেখ হাসিনার পতনের পর কিছুদিন বন্ধ থাকলেও গেলো সপ্তাহে ফের কাঁটাতারের বেড়া দেয়ার উদ্যোগ নেয় দেশটি।
গেলো সপ্তাহে সীমান্তের অপর পাড়ে শূন্য রেখার ১০০ গজের ভেতরে মালদহের সুকদেবপুরে বেড়া দেয়ার তৎপরতা শুরু করলে বিএসএফকে বাধা দেয় বিজিবি। এতে শুরু হয় দু’দেশের সীমান্তবর্তী মানুষ ও বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে উত্তেজনা।
অন্তর্বর্তী সরকার থেকে বলা হচ্ছে, দু’দেশের মধ্যে থাকা সমঝোতার বাইরে গিয়ে, গেল দুই যুগে আওয়ামী লীগ সরকার অসমভাবে যেসব সুবিধা ভারতকে দিয়েছে তা দু’দেশের মধ্যে সীমান্ত সংকট তৈরির মূল কারণ।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের যে আঙ্গরপোতা ও দহগ্রাম আছে সেখানে জিরো লাইনের উপরেই তারা বেড়া দিতে চাচ্ছে। জিরো লাইন থেকে ১৫০ গজ ভেতরে যে কাটাতারের বেড়া দেয়ার কথা সেখানে তারা বলে দিয়েছে জিরো লাইনের উপরই করতে পারবে।’
প্রায় একইমত নিরাপত্তা বিশ্লেষকের। তিনি বলছেন, বিগত সরকারের আমলে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যে গোপন সমঝোতা ছিল, সে অনুযায়ী সবকিছু ঠিকঠাক চলছিলো, তবে নতুন সরকার আসায় অস্বস্তি বোধ করছে ভারত।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ হাসান নাসির বলেন, ‘প্রথম মিডিয়া ক্যাম্পেইন করে আমাদের বিভ্রান্ত করেছে। আমাদের অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেছে। আমাদের ডেপুটি হাইকমিশনগুলোকে আন্দোলনের আওতায় নিয়ে এসেছে, ভাঙচুর করেছে যা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। এগুলো করে যখন তারা দেখলো খুব একটা সাফল্য অর্জন করতে পারে নাই তখন এই দ্বন্দ্বটাকে নতুন একটা মোড় দেয়ার চেষ্টা করতে পারে।’
দু’দেশের গোপন চুক্তি জনসাধারণের কাছে প্রকাশ করারও আহ্বান জানান সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা। তাতে সরকারের সঙ্গে জনগণেরও সম্পৃক্ততা বাড়বে বলে মত তার।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ হাসান নাসির বলেন, ‘ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যমান যেসব সেনসিটিভ চুক্তির বিষয়ে জনগণ জানে না সেগুলো জনসম্মুখে নিয়ে আসা। জনগণের যে দাবি এসব চুক্তি রিভিউ করা এবং বাতিল করা। অবশ্যই এসব চুক্তি রিভিউয়ে নিতে হবে এবং যেগুলো আমাদের রাষ্ট্রবিরোধী সেগুলো বাতিল করতে হবে।’
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে বন্ধুত্বের স্বর্ণালী অধ্যায় বলা হলেও সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেয়াকে সাংঘর্ষিক উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের দেয়া কাঁটাতারের বেড়াকে পুনর্বিবেচনা করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওবায়দুল হক বলেন, ‘সম্পর্কের স্বর্ণযুগ যাচ্ছে সেখানে কাঁটাতারের বেড়া খুব চোখে লাগে। যদি চোরাচালান সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে একই কথা প্রযোজ্য অন্যান্য রাষ্ট্রের সাথেও। কেননা তাদের সাথে ভারতে বিশাল সীমান্ত রয়েছে। মিয়ানমারের সাথে বিশাল জায়গা খোলা ভারতের। তাহলে বাংলাদেশকেই কেন কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘিরে ফেলতে হবে। এবং আমি মনে করি কাঁটাতারের বেড়া দেয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই।’
বর্তমানে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের ৪ হাজার ১শ ৫৬ কিলোমিটারের মধ্যে ৩ হাজার ২শ ৭১ কিলোমিটারেই কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে ভারত। বাকি আছে মাত্র ৮৮৫ কিলোমিটার।