বহুল আলোচিত পিলখানা হত্যাকাণ্ড মামলায় সাজা খাটার পরও বিস্ফোরক আইনের মামলায় আসামি হওয়ায় আটকে আছে প্রায় সাড়ে ৪০০ জনের জামিন। আগামীকাল (রোববার, ১৯ জানুয়ারি) এই আসামিদের জামিন শুনানি ও সাক্ষ্যগ্রহণ হবে। তবে ১৫ বছরে এক হাজার ৩০০ সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ২৮৩ জনের সাক্ষ্য নিতে পেরেছে রাষ্ট্রপক্ষ। জামিন না দেয়াকে মানবাধিকার লঙ্ঘন বলছেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। তবে আলোচিত এই মামলা নিষ্পত্তি করতে সরকার আন্তরিক বলছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।
রাজনৈতিক মামলার বাইরে, দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত-সমালোচিত মামলার মধ্যে ২০০৯ সালের পিলখানা হত্যা মামলা অন্যতম।
সেই হত্যাকাণ্ডের বিস্ফোরক আইনের মামলার ১৫ বছর পেরিয়ে গেলেও শেষ হয়নি এর বিচারকাজ। হত্যা মামলায় ৮৫০ জন আসামির মধ্যে থেকে বিস্ফোরক আইনের মামলায় আসামি করা হয় ৮৩৪ জনকে। হত্যা মামলার সঙ্গে এই মামলাটির বিচারকাজ শুরু হয় ২০১০ সালে। আলোচিত এই মামলার প্রায় এক হাজার ৩০০ সাক্ষীর মধ্যে গত ১৫ বছরে রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী উপস্থাপন করতে পেরেছে মাত্র ২৮৩ জনকে।
বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের পর হাইকোর্ট থেকে খালাস পান ২৮৩ জন। এছাড়া বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয় ২২৮ জনকে। যাদের প্রত্যেকের সাজা খাটা শেষ হলেও শুধু বিস্ফোরক আইনের মামলার কারণে আটকে আছে প্রায় সাড়ে ৪০০ আসামির জামিন প্রক্রিয়া। স্বজনরা আদালতে জামিনের আবেদনের পাশাপাশি ভুক্তভোগী পরিবারগুলো রাজপথে নেমেছে বারবার। তবুও আলোর মুখ দেখেননি তারা।
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিস্ফোরক আইনের মামলার বিচারকাজ চলছিল বকশীবাজার আলিয়া মাদ্রাসার অস্থায়ী আদালতে। দীর্ঘদিন এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ বন্ধও ছিল। ৫ আগস্টের পর তার কয়েকটি শুনানি অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে। গত ৯ জুন বকশীবাজার অস্থায়ী আদালতে জামিন শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও তা পণ্ড হয়, এজলাশে আগুন লাগা ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে।
জামিন শুনানি নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলছেন, যতদ্রুত সম্ভব সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করে বহুল আলোচিত মামলাটি নিষ্পত্তি করা হবে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. বোরহান উদ্দিন বলেন, 'সরকার পক্ষ সংশ্লিষ্ট যারা আছেন এবং প্রসিকিউশন টিম হিসেবে আমরা সবাই প্রস্তুত। এবং আমরা চাই এটা আইনের স্বাভাবিক গতিতে চলমান থাকুক। যতদিন পর্যন্ত এ মামলাটা রায়ের পর্যায়ে না যায় ততদিন পর্যন্ত এটার সাক্ষ্য দিতে থাকবে।'
আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, আওয়ামী সরকারের আমলে খালাস পাওয়া ও সাজাভোগ করা ব্যক্তিদের জামিন নিয়ে গড়িমসি ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে হয়েছে। সাজাভোগ শেষ হওয়ার পর কারাগারে আটকে থাকা মানবাধিকার লঙ্ঘন। ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে বাঁচাতে দ্রুত মামলাটি নিষ্পত্তি প্রয়োজন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী পারভেজ হোসেন বলেন, 'আইনানুগ সকল পন্থা তাদের বিবেচনা নিয়ে ছেড়ে দেয়ার সুযোগ থাকা স্বত্বেও সেটাকে ব্যবহার না করে আবার তাদেরকে আটকে রাখা হচ্ছে। এটা তাদের সাথে চরম তামাশা করা হচ্ছে। তাদেরকে উপহাস করা হচ্ছে। এবং সবচেয়ে বড় জিনিস হচ্ছে তারা কোনো অন্যায় করেনি, অবিচার করেনি কিন্তু জুলুমের শিকার হচ্ছে তারা নিয়মিত। এই মজলুম মানুষগুলোকে তারা দেখবেন এটা আমরা আশা করছি।'
বহুল আলোচিত এই মামলার বিচারকার্য সরিয়ে নেয়া হয়েছে কেরানীগঞ্জ কারাগারের অস্থায়ী আদালতে। ১৯ জানুয়ারি এই মামলার জামিন শুনানি ও সাক্ষ্যগ্রহণ করা হবে। সাতে তিনশ' জনের মতো জামিনের আবেদন করেছেন বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষ।