বিশ্বে যত বিলিয়নিয়ার রয়েছেন, তাদের সম্পদের পরিমাণ ২০২৪ সালে প্রায় ২ ট্রিলিয়ন ডলার বা ২ লাখ কোটি ডলার বেড়েছে। সে হিসাবে প্রতিদিন বেড়েছে ৫৭০ কোটি ডলার করে। এই পরিমাণ সম্পদ আগের বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের তুলনায় ৩ গুণ বেশি। গত বছর প্রতি সপ্তাহে নতুন করে বিলিয়নিয়ার হয়েছেন ৪ জন।
আজ সোমবার প্রকাশিত আন্তর্জাতিক অধিকার সংস্থা অক্সফাম ইন্টারন্যাশনালের সর্বশেষ বৈশ্বিক বৈষম্যবিষয়ক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য। বিশ্বব্যাংকের তথ্যের বরাতে এতে বলা হয়, ১৯৯০ সালের পর এই প্রথম দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কিছুটা কমলেও তা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নয়।
সুইজারল্যান্ডের দাভোসে চলমান ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে প্রকাশিত অক্সফামের ‘টেকার্স নট মেকার্স’—শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বিলিয়নিয়ারদের মধ্য থেকে আগামী ১০ বছরের মধ্যে অন্তত পাঁচজন ট্রিলিয়নিয়ার হয়ে যেতে পারেন। গত বছর বলা হয়েছিল, আগামী দশ বছরে একজন ট্রিলিয়নিয়ার হতে পারেন। কিন্তু এখন তা পরিবর্তিত হয়ে পাঁচজন ট্রিলিয়নিয়ার হওয়ার সম্ভাবনার কথা বলা হচ্ছে।
২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ২০৪ জন বেড়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে অক্সফামের প্রতিবেদনে। আগের বছর ছিলেন ২ হাজার ৫৬৫ জন, আর গত বছর ২ হাজার ৭৬৯ জন। ১২ মাসে তাদের মোট সম্পদ ১৩ ট্রিলিয়ন ডলার থেকে ১৫ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
এতে আরও বলা হয়, গত বছর পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ১০ জনের সম্পদ প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার করে বেড়েছে। তাদের সম্পদের পরিমাণ এতই বেশি যে, তারা যদি রাতারাতি তাদের সম্পদের ৯৯ শতাংশও হারান, তবুও তারা বিলিয়নিয়ার থেকে যাবেন।
অক্সফামের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর অমিতাভ বেহার বলছেন, ‘আমাদের বৈশ্বিক অর্থনীতি এখন কিছু বিশেষ সুবিধাভোগীরা নিজেদের দখলে রেখেছেন। একসময় যা অকল্পনীয় বলে বিবেচিত হতো, তা এখন অন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। বিলিয়নিয়ারদের থামাতে না পারার কারণে এখন শীঘ্রই ট্রিলিয়নিয়ারদের জন্ম দিচ্ছে। শুধু বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ আহরণের হারই ত্বরান্বিত হয়নি, তাদের ক্ষমতাও বেড়েছে।’
এই প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বিলিয়নিয়ারদের একটা অংশের সম্পদ আয় না করেই এসেছে। বিলিয়নিয়ারদের সম্পদের ৬০ শতাংশ এখন উত্তরাধিকার, একচেটিয়া ক্ষমতা বা সম্পর্ক থেকে আসছে। এ ছাড়া উপনিবেশ থেকে পাওয়া সম্পদও রয়েছে তাদের।
অক্সফাম বলছে, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদের ৩৬ শতাংশ এখন উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত। ফোর্বসের গবেষণায় দেখা গেছে, ৩০ বছরের কমবয়সী বিলিয়নিয়াররা তাদের সম্পদ উত্তরাধিকারী সূত্রে পেয়েছেন। ইউবিএস বলছে, আজকের বিলিয়নিয়ারদের মধ্যে ১ হাজারের বেশি আগামী দুই থেকে তিন দশকের মধ্যে তাদের উত্তরাধিকারীদের কাছে ৫ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি সম্পদ দিয়ে যাবেন।
উল্লেখ্য, ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনের সরাসরি অধীনে আসে ১৭৫৭ সালে। এরপর ১৭৬৫ থেকে ১৯০০ সাল পর্যন্ত ঔপনিবেশিক সময়ে ব্রিটেন ভারত থেকে ৬৪ দশমিক ৮২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থমূল্য সম্পদ শোষণ করেছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস বলছে, এই সম্পদের মধ্যে ৩৩ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন ডলার ভোগ-দখল করেছেন ব্রিটেনের শীর্ষ ১০ শতাংশ ধনী ব্যক্তিরা। এই অর্থের পরিমাণ এত বেশি যে, ৫০ পাউন্ড মূল্যের নোট দিয়ে লন্ডন শহরকে প্রায় চারবার মোড়ানো সম্ভব।
আন্তর্জাতিক অধিকার সংস্থা অক্সফাম ইন্টারন্যাশনালের সর্বশেষ বৈশ্বিক বৈষম্যবিষয়ক প্রতিবেদনে এসব তথ্যও উঠে এসেছে। এই প্রতিবেদনে বিশ্বে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে এই অসমতা কমানোর জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে বিশেষ কিছু পরামর্শও দেওয়া হয়।