ভোট অনুষ্ঠানের মূল দায়িত্বে থাকে নির্বাচন কমিশন। সরকারের নির্বাহী বিভাগের সহায়তাও নেয় ইসি। বলা হয় নির্বাচন কমিশনের অগাধ ক্ষমতা। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে এই ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে। কিছু কাঁটছাঁট নির্বাচন কমিশন নিজেই করেছে আর কিছু ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার। পুরো নির্বাচন বন্ধ ও বাতিলের ক্ষমতা, ভোটকেন্দ্র স্থাপনের মতোক্ষমতাগুলো খর্ব করা হয়েছে ইসির। আবার কোথাও এমন বিধান রাখা হয়েছে যা নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা প্রয়োগের পথে অন্তরায়। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে হারানো সকল ক্ষমতা ফিরিয়ে আনার কথা বলেন সংশ্লিষ্টরা।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একটি ভোট কেন্দ্রে পুলিশ ও আনসারের ১৬ জন সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন। একটি ভোট কেন্দ্রে গড়ে প্রায় তিন হাজার ভোটার ভোট দেন। এই হিসেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন সদস্যকে ১শ ৮৮ জন ভোটারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয়। পাশাপাশি নির্বাচনী কর্মকর্তা, কেন্দ্রেপ্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের নিরাপত্তা দেখা এতো কম সংখ্যক সদস্য দিয়ে বাস্তব সম্মত নয় বলে জানান নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক খন্দকার মিজানুর রহমান ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাব্বির আহমেদ।
আরপিওতে ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ অন্তর্ভূক্ত ছিলো। তখন নির্বাচন কমিশন চাইলে সেনাবাহিনী মোতায়েত করতে পারতো। পরবর্তীতে এটি বাদ দেয়া হয়, কেউ কেউ মনে করেন সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে এটি আবারো ফিরিয়ে আনা উচিৎ বলে জানান নির্বাচন কমিশনের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব মোহাম্মদ জকরিয়া।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে গাইবান্ধার একটি আসনের উপনির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের ফলে ভোট বাতিল করে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নির্বাচন কমিশন। আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকদের ব্যাপক অনিয়মে চিত্র বাইরে আসার পাশাপাশি নির্বাচন বাতিল হওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়ে ক্ষমতাসীন দলটি। এরপর আরপিও থেকে পুরো নির্বাচন বাতিলে ইসির ক্ষমতাটি খর্ব করা হয়। এই প্রস্তাবও ইসিই দিয়েছিলো।
বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সচিব মোহাম্মদ মতিয়ুর রহমান জানান কিছুদিন আগেও ইসির কর্মকর্তারা ভোটকেন্দ্র কোথায় হবে তা নির্ধারণ করতেন। তবে বিগত কমিশন ভোটকেন্দ্র স্থাপনে জেলা-উপজেলায় কমিটি করে দেন। এসব কমিটির নেতৃত্ব দেন স্থানীয় জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা। এতে পুলিশ কর্মকর্তাদেরও রাখা হয়।
এই কমিটি নিয়ে তীব্র আপত্তি আছে নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের। এই বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাব্বির আহমেদ বলেন একটা ভোট কেন্দ্র কোথায় হবে না হবে তা পুলিশ দিয়ে ঠিক করার কিছু নেই। আর নির্বাচন পর্যবেক্ষক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেন, জেলা প্রশাসক মহদয় , ইউএনও তারা মুলত কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন।
নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্যানেল গঠন নিয়েও প্রভাব বিস্তারের ইসি কর্মকর্তাদের অভিযোগ আছে বলে জানান বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন সদস্য সচিব, মোহাম্মদ মতিয়ুর রহমান।
অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে চাইলে এসব ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের কাছে ফিরিয়ে আনার তাগিদ দেন তারা।