ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে রাজধানী ও উত্তরাঞ্চল
- আপডেট সময় : ০১:৩৮:৪৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫
- / ৩৪২ বার পড়া হয়েছে
আজও কুয়াশায় ঢেকে আছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের উত্তরের জনপদ। বিশেষ করে হিমেল হাওয়া আর ঘন কুয়াশায় ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। শুক্রবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়িতে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ঘন কুয়াশার কারণে সারাদেশেই বেড়েছে শীতের অনুভূতি। এরমধ্যে উত্তরের দুই জেলা সিরাজগঞ্জ ও পঞ্চগড়ের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। যা আগামী ২৪ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। একইসঙ্গে আগামী ২৪ ঘণ্টা রাত-দিনের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকলেও আগামীকাল শনিবার রাতে সারাদেশে তাপমাত্রা ১-৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমে যেতে পারে।
শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে প্রকাশিত ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
ঢাকায় হয়ত দুপুর নাগাদ কিছুটা স্বাভাবিক অবস্থা হবে। তবে বিকেল থেকেই শীতের অনুভূতি আরও বাড়বে। আর উত্তরাঞ্চল ঘন কুয়াশায় এখন আবৃত। সেখানে ঠান্ডার প্রকোপ আরও বেশি। আজ উত্তরাঞ্চলে সূর্যের দেখা না পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এছাড়া, আজ সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে প্রকাশিত ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, পরিবেশ প্রধানত শুষ্ক থাকলেও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা বিরাজ করতে পারে। আর আকাশ অস্থায়ীভাবে মেঘলা থাকতে পারে। এমন অবস্থায় পশ্চিম/উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৫-১০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে বলেও জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে আগামী ২৫ অথবা ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত এই কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশ থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণে কাজ করা দেশের বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিম (বিডব্লিউওটি)।
সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তীব্র কুয়াশাবেল্টের উপস্থিতির কারণে রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, সিলেট বিভাগের প্রায় সব এলাকায় ও খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক এলাকায় দুপুর পর্যন্ত ও অনেক এলাকায় সারাদিন সূর্যের দেখা না পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে রাতের তাপমাত্রা বেশি হ্রাস না পেলেও দিনের তাপমাত্রা বেশ হ্রাস পাওয়ার জন্য দিনে অনেক শীত অনুভূতি হয়।
তবে, আগামী ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের উপর কুয়াশার তীব্রতা বেশি থাকতে পারে।
আবহাওয়াবিদ শাহানাজ সুলতানার সই করা ওই পূর্বাভাসে আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থা সম্পর্কে বলা হয়েছে, উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ বিহার ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থার করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। আর এর বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, আগামী ৩দিন অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। আর আগামী ২৪ ঘণ্টা মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং তা কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। আর ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নদী পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগ সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে।
তাপমাত্রার অবস্থা সম্পর্কে জানানো হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টা সারাদেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। তবে পরদিন শনিবার (২৫ জানুয়ারি) সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা ১-৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। অবশ্য পরদিন রোববার (২৬ জানুয়ারি) সারাদেশে রাতের এবং দিনের তাপমাত্রা আরও কিছুটা কমতে পারে।
এদিকে, টানা ৪ দিন ধরে দিনাজপুরে দেখা মিলছে না সূর্যের। ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে দেশের উত্তরাঞ্চলের এ জেলা। বাতাসের সঙ্গে বৃষ্টি মতো ঝড়ছে শীতের শিশির।
শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
গত ৪ দিন ধরেই দিনাজপুরে দেখা মিলছে না সূর্যের, এতে কয়েক দিন ধরেই উত্তরাঞ্চলে বেড়েছে শীতের দাপট। শীতের তীব্রতা থেকে রেহাই পেতে গ্রামের মানুষেরা খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। ঘন কুয়াশার সঙ্গে সন্ধ্যার পর থেকে বেশি ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। সড়ক-মহাসড়কে সব ধরনের যানবাহন হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীর গতিতে চলাচল করছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বৃষ্টির মতো ঝরছে কুয়াশা। অন্যদিকে, আলু, রসুন ও বোরো ধানের বীজতলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে কৃষকেরা।
দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, আজ শুক্রবার সকাল ৬টায় দিনাজপুরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৪ শতাংশ। বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৩ কিলোমিটার।
শীতে কাঁপছে লালমনিরহাটের মানুষ। ঘনকুয়াশা আর ঠান্ডায় কাজে বের হতে পারছে না মানুষ। শীতবস্ত্রের অভাবে অসহায়, ছিন্নমূল মানুষের আগুন তাপিয়ে ঠান্ডা নিবারণের চেষ্টা করছেন। তিস্তাও ধরলার চরাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষজনের দুর্ভোগ আরো চরমে। নদীপাড়ে বইছে কনকনে ঠান্ডা বাতাস।
হিমেল হাওয়া ও হাড় কাপানো ঠান্ডায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উত্তরের জেলা কুড়িগ্রাম। শীতের তীব্রতায় কষ্টে দিন কাটছে নিম্নআয়ের মানুষের। বিপাকে পড়েছেন নদী তীরবর্তী চরাঞ্চলের মানুষ।
কুড়িগ্রামে জেলায় আজ শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
জেলায় শীত নিবারণের জন্য সরকারিভাবে দুঃস্থদের জন্য যে কম্বল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। এখনো জেলার চরের মানুষরা সরকারি কম্বল পাননি।
কুড়িগ্রাম কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ অফিসের পর্যবেক্ষক সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, শুক্রবার জেলায় আজ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
উত্তরের জেলা গাইবান্ধায় জেঁকে বসেছে শীত। এ জেলায় গত তিন দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দেখা মেলেনি সূর্যের। ভোগান্তি বেড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষের। ঘন কুয়াশা আর হিমেল বাতাসে বিপর্যস্ত এখানকার মানুষের জীবন। হিমেল হাওয়ায় বিপদে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। জেলার হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা।
শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) সকালে গাইবান্ধা শহরের বিভিন্ন স্থানে দেখা যায়, কুয়াশার সঙ্গে মৃদু বাতাসে শীতে কাতর মানুষ বাড়ি কিংবা চায়ের দোকানের চুলার আগুনে উষ্ণতায় শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। সেইসঙ্গে চায়ের দোকানে চায়ের চুমুকে হাড় কাঁপানো শীত থেকে উষ্ণতা খুঁজছেন।
এদিকে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে শিশু ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে নিউমোনিয়া, সর্দি-কাশি, ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগীর চাপ বেড়েছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।
নাজনীন নামে এক অভিভাবক জানান, ‘গতকাল রাতে হঠাৎ শিশুর বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হয়। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর স্যালাইন চলছে। এখন কিছুটা ভালো আছে।’
এ বিষয়ে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আসিফ উর রহমান জানান, ‘কয়েকদিন থেকে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।’ শিশু ও বয়স্কদের শীতে বাড়তি যত্ন নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।