ঢাকা ০৫:১৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫, ১১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

সবজির বাজার স্থিতিশীল, কমেছে আলু-পেঁয়াজের দাম

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০১:৩৩:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫
  • / ৩৪৭ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বাজার ভরপুর শীতের সবজিতে। বছরের অন্যান্য সময় দাম চড়া থাকলেও এখন বেশ কম যাচ্ছে সবজির দর। ৩০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বেশিরভাগ সবজি। এতে খুশি ক্রেতারা। দাম কমায় বিক্রিও বেড়েছে বলে জানালেন বিক্রেতারা। তবে বাজারগুলোতে মাছ ও মুরগির বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। সপ্তাহ ব্যবধানে সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে।

একইসঙ্গে সোনালি কক মুরগির দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ৩৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজি ২২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।

বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় সবজির বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। এসব বাজারে প্রতিকেজি শিম ১৫ থেকে ৪০ টাকা, পাকা টমেটো ৩০ থেকে ৫০ টাকা, গাজর ৪০ থেকে ৫০ টাকা, মুলা ২০ টাকা, মটরশুটি ৮০ টাকা, খিরা ৪০ টাকা এবং শসা ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর বড় আকারের ফুলকপি ১৫ থেকে ২০ টাকা পিস, বাঁধাকপি বড় সাইজের ২০ থেকে ৩০ টাকা পিস, প্রতিটি লাউ মিলছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়।

এসব বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজি বেগুন ৪০ থেকে ৫০ টাকা, করলা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকায়, পেঁপে প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ধুন্দল ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০ টাকা, কচুর লতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ঝিঙ্গা এবং কাঁচামরিচ ৪০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে লেবুর হালি ২০ থেকে ৪০ টাকা, ধনে পাতা ১০০ টাকা কেজি, কাঁচকলার হালি ৫০ টাকায়, চাল কুমড়া ৬০ টাকা পিস, ক্যাপসিকাম ১৫০ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়া ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

লাল শাক ১০ টাকা আঁটি, লাউ শাক ৪০ টাকা, মুলা শাক ১০ টাকা, পালং শাক ১০ টাকা, কলমি শাক তিন আঁটি ২০ টাকা, পুঁই শাক ৪০ টাকা এবং ডাটা শাক ২০ টাকা আঁটি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।

বাজারে নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা দরে। আর বগুড়ার লাল আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা দরে।

এসব বাজারে দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ৯০ টাকা, মুড়ি পেঁয়াজ ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, পাতা পেঁয়াজ ৪০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।

আদার কেজি মিলছে ১২০ থেকে ২৮০ টাকায়, রসুন ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা, দেশি মশুর ডাল ১৪০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা, মিনিকেট চাল ৭৮ থেকে ৮৬ টাকা এবং নাজিরশাইল ৭৬ থেকে ৮৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাজধানীর শান্তিনগর বাজারে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী সারোয়ার আলম রাসেল। তিনি বলেন, বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে এখন সবজি কিনে খুব স্বাচ্ছন্দ্য হচ্ছে। অন্যান্য সময়ের থেকে এখন বাজারে সবজির দাম কম। মাঝখানে যখন সবজির দাম বেড়ে গিয়েছিল, তখন তো আধা কেজি বা ২৫০ গ্রাম করে সবজি কিনতাম। তবে গেল কয়েক সপ্তাহ ধরে সবজি কিনে আমরা খুশি, দাম কম হওয়ায় পরিমাণেও বেশি কিনছি। মোটামুটি বলা যায় ৩০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে সব ধরনের সবজি পাওয়া যাচ্ছে।

রাজধানীর মগবাজার এলাকার বাজারে কথা হয় সুজাউদ্দিন নামে আরেক ক্রেতার সঙ্গে। দামের বিষয়ে তিনি বলেন, বাজারে এখন সবচেয়ে সস্তা পণ্যগুলোর মধ্যে সবজি রয়েছে। আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতারা এখন সবজি কিনতে পারছে। কম দামে সবজি কেনা গেলেও অন্যান্য সব কিছুর দাম বেশি। সবজি দামের মতো অন্যান্য জিনিসের দাম কমলে, ক্রেতারা স্বাচ্ছন্দ্যে ‌ কিনতে পারতো।

সবজির দামের বিষয়ে মালিবাগ এলাকার সবজি বিক্রেতা আব্দুল মালেক মিয়া বলেন, বাজারে এখন সবচেয়ে কম দাম চলছে সবজির। এক দেড় মাস আগেও সবজির দাম বেশি ছিল, তার আগে আরও চড়া ছিল সবজির বাজার। তখন সাধারণ ক্রেতারা খুব অল্প পরিমাণের সবজি কিনতো। সেই তুলনায় এখন সবজি দাম অনেক কম। আগে যে ক্রেতা আধা কেজি সবজি কিনতো, সেই ক্রেতাই এখন ১ কেজি থেকে ২ কেজি করে কেনেন। কারণ দাম কম। ৩০ টাকা থেকে ৫০ টাকার মধ্যে সব সবজি বিক্রি হচ্ছে।

তবে দুই একটি সবজির মৌসুম এখন না হওয়ায় সেগুলোর দাম তুলনামূলক বেশি।

যে দোকানে বৃহস্পতিবার রাতেও ব্রয়লার মুরগির মাংস বিক্রি হয়েছে ১৯৫ টাকা কেজিতে, রাত পেরিয়ে ভোর হতে না হতেই একই দোকানে একই মুরগির মাংস বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা কেজি দরে। এভাবে প্রতি শুক্রবারই মাছ-মাংসসহ প্রায় সব ধরনের পণ্যেরই দাম বেড়ে যায়। কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ক্রেতাদের চাহিদা বেশি থাকায় দাম বাড়িয়ে দেয় বাজার সিন্ডিকেট।

রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহ ব্যবধানে সোনালি কক মুরগি ৩৪০ টাকা ও সোনালি হাইব্রিড ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লাল লেয়ার মুরগি ৩০০ টাকা ও সাদা লেয়ার ২৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ব্রয়লার মুরগি কেজি ২২০ টাকা ও দেশি মুরগি ৫২০ টাকা করে দামে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে চলতি সপ্তাহে মাছের বাজার চড়া রয়েছে। এসব বাজারে ৫০০ গ্রামের ইলিশ ১ হাজার ১০০ টাকা, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রামের ১ হাজার ৭০০ টাকা ও ১ কেজি ওজনের ইলিশ ২ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোতে প্রতিকেজি শিং মাছ চাষের (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, রুই দাম বেড়ে (আকারভেদে) ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, দেশি মাগুর ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা, মৃগেল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, চাষের পাঙাস ২০০ থেকে ২৩০ টাকা, চিংড়ি ৭৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, বোয়াল ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, বড় কাতল ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, পোয়া ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কই চাষের ২২০ থেকে ২৩০ টাকা, মলা ৫০০ টাকা, বাতাসি টেংরা ১ হাজার ৩০০ টাকা, টেংরা ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি ৫০০ টাকা, পাঁচ মিশালি ২২০ টাকা, রূপচাঁদা ১ হাজার ২০০ টাকা, বড় বাইম ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, দেশি কই ১ হাজার ২০০ টাকা, শোল ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, আইড় ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, বেলে ৮০০ টাকা, কোরাল ৭০০ টাকা ও কাজলি মাছ ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এসব বাজারে গরুর মাংস কেজিপ্রতি ৬৫০ থেকে ৭৮০ টাকা, গরুর কলিজা ৭৮০ টাকা, গরুর মাথার মাংস ৪৫০ টাকা, গরুর বট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা ও খাসির মাংস কেজিপ্রতি ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারগুলোতে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা, হাঁসের ডিম ২২০ টাকা ও দেশি মুরগির ডিমের হালি ৯০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।

শুক্রবারের বাজারে অন্যান্য দিনের তুলনায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ ক্রেতারা। তাদের দাবি, বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে বাজারে ক্রেতাদের সবসময়ই এভাবে ঠকে যেতেই হবে। একইসঙ্গে বিক্রেতারাও সুযোগ নিয়ে আরও চড়াও হবে দামের ওপর।

ক্রেতারা বলছেন, শীতের সিজনেও আজকের বাজারে মাছ-মাংসসহ সবকিছুর দাম বেশি, অথচ এই দিনে যেহেতু বিক্রি বেশি, দাম তুলনামূলক কম থাকার কথা। বাজারে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, যেকারণে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। আর একবার কোনো পণ্যের দাম বাড়লে, সেটা আর কমতে চায় না।

তবে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, বেশি দামে কিনে আনায় কম দামে বিক্রির কোনো সুযোগ নেই।

মুরগি ব্যবসায়ী মো. সুজন মিয়া বলেন, শুক্রবারে মুরগির দাম হালকা বাড়তি থাকে। আমাদের কিনেই আনতে হয় বেশি দামে। দামটা বাড়ে পাইকারি বাজারে, যেকারণে খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়ে। দাম বেশি থাকলে আমাদেরই বরং ক্ষতি, বিক্রিও কমে যায়। কম দাম থাকলে মানুষ কিনতে আসে বেশি।

ব্যবসায় মন্দা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, অন্যান্য দিনে বেচাকেনার নাই বললেই চলে। শুক্রবারে কিছুটা হয়। মানুষের ইনকাম কম, খাবেই কী, পরবেই বা কী।

মাছ বিক্রেতা মোহাম্মদ শওকত মিয়া বলেন, গতকালে চেয় আজকের বাজার চড়া। কেজি প্রতি মাছের দাম ৪০/৫০ টাকা বেশি। সাধারণত প্রতি শুক্রবারেই একটু বেশি থাকে। তারপরও দাম নিয়ন্ত্রণেই আছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

সবজির বাজার স্থিতিশীল, কমেছে আলু-পেঁয়াজের দাম

আপডেট সময় : ০১:৩৩:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫

বাজার ভরপুর শীতের সবজিতে। বছরের অন্যান্য সময় দাম চড়া থাকলেও এখন বেশ কম যাচ্ছে সবজির দর। ৩০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বেশিরভাগ সবজি। এতে খুশি ক্রেতারা। দাম কমায় বিক্রিও বেড়েছে বলে জানালেন বিক্রেতারা। তবে বাজারগুলোতে মাছ ও মুরগির বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। সপ্তাহ ব্যবধানে সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে।

একইসঙ্গে সোনালি কক মুরগির দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ৩৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজি ২২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।

বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় সবজির বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। এসব বাজারে প্রতিকেজি শিম ১৫ থেকে ৪০ টাকা, পাকা টমেটো ৩০ থেকে ৫০ টাকা, গাজর ৪০ থেকে ৫০ টাকা, মুলা ২০ টাকা, মটরশুটি ৮০ টাকা, খিরা ৪০ টাকা এবং শসা ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর বড় আকারের ফুলকপি ১৫ থেকে ২০ টাকা পিস, বাঁধাকপি বড় সাইজের ২০ থেকে ৩০ টাকা পিস, প্রতিটি লাউ মিলছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়।

এসব বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজি বেগুন ৪০ থেকে ৫০ টাকা, করলা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকায়, পেঁপে প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ধুন্দল ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০ টাকা, কচুর লতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ঝিঙ্গা এবং কাঁচামরিচ ৪০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে লেবুর হালি ২০ থেকে ৪০ টাকা, ধনে পাতা ১০০ টাকা কেজি, কাঁচকলার হালি ৫০ টাকায়, চাল কুমড়া ৬০ টাকা পিস, ক্যাপসিকাম ১৫০ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়া ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

লাল শাক ১০ টাকা আঁটি, লাউ শাক ৪০ টাকা, মুলা শাক ১০ টাকা, পালং শাক ১০ টাকা, কলমি শাক তিন আঁটি ২০ টাকা, পুঁই শাক ৪০ টাকা এবং ডাটা শাক ২০ টাকা আঁটি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।

বাজারে নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা দরে। আর বগুড়ার লাল আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা দরে।

এসব বাজারে দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ৯০ টাকা, মুড়ি পেঁয়াজ ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, পাতা পেঁয়াজ ৪০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।

আদার কেজি মিলছে ১২০ থেকে ২৮০ টাকায়, রসুন ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা, দেশি মশুর ডাল ১৪০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা, মিনিকেট চাল ৭৮ থেকে ৮৬ টাকা এবং নাজিরশাইল ৭৬ থেকে ৮৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাজধানীর শান্তিনগর বাজারে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী সারোয়ার আলম রাসেল। তিনি বলেন, বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে এখন সবজি কিনে খুব স্বাচ্ছন্দ্য হচ্ছে। অন্যান্য সময়ের থেকে এখন বাজারে সবজির দাম কম। মাঝখানে যখন সবজির দাম বেড়ে গিয়েছিল, তখন তো আধা কেজি বা ২৫০ গ্রাম করে সবজি কিনতাম। তবে গেল কয়েক সপ্তাহ ধরে সবজি কিনে আমরা খুশি, দাম কম হওয়ায় পরিমাণেও বেশি কিনছি। মোটামুটি বলা যায় ৩০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে সব ধরনের সবজি পাওয়া যাচ্ছে।

রাজধানীর মগবাজার এলাকার বাজারে কথা হয় সুজাউদ্দিন নামে আরেক ক্রেতার সঙ্গে। দামের বিষয়ে তিনি বলেন, বাজারে এখন সবচেয়ে সস্তা পণ্যগুলোর মধ্যে সবজি রয়েছে। আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতারা এখন সবজি কিনতে পারছে। কম দামে সবজি কেনা গেলেও অন্যান্য সব কিছুর দাম বেশি। সবজি দামের মতো অন্যান্য জিনিসের দাম কমলে, ক্রেতারা স্বাচ্ছন্দ্যে ‌ কিনতে পারতো।

সবজির দামের বিষয়ে মালিবাগ এলাকার সবজি বিক্রেতা আব্দুল মালেক মিয়া বলেন, বাজারে এখন সবচেয়ে কম দাম চলছে সবজির। এক দেড় মাস আগেও সবজির দাম বেশি ছিল, তার আগে আরও চড়া ছিল সবজির বাজার। তখন সাধারণ ক্রেতারা খুব অল্প পরিমাণের সবজি কিনতো। সেই তুলনায় এখন সবজি দাম অনেক কম। আগে যে ক্রেতা আধা কেজি সবজি কিনতো, সেই ক্রেতাই এখন ১ কেজি থেকে ২ কেজি করে কেনেন। কারণ দাম কম। ৩০ টাকা থেকে ৫০ টাকার মধ্যে সব সবজি বিক্রি হচ্ছে।

তবে দুই একটি সবজির মৌসুম এখন না হওয়ায় সেগুলোর দাম তুলনামূলক বেশি।

যে দোকানে বৃহস্পতিবার রাতেও ব্রয়লার মুরগির মাংস বিক্রি হয়েছে ১৯৫ টাকা কেজিতে, রাত পেরিয়ে ভোর হতে না হতেই একই দোকানে একই মুরগির মাংস বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা কেজি দরে। এভাবে প্রতি শুক্রবারই মাছ-মাংসসহ প্রায় সব ধরনের পণ্যেরই দাম বেড়ে যায়। কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ক্রেতাদের চাহিদা বেশি থাকায় দাম বাড়িয়ে দেয় বাজার সিন্ডিকেট।

রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহ ব্যবধানে সোনালি কক মুরগি ৩৪০ টাকা ও সোনালি হাইব্রিড ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লাল লেয়ার মুরগি ৩০০ টাকা ও সাদা লেয়ার ২৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ব্রয়লার মুরগি কেজি ২২০ টাকা ও দেশি মুরগি ৫২০ টাকা করে দামে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে চলতি সপ্তাহে মাছের বাজার চড়া রয়েছে। এসব বাজারে ৫০০ গ্রামের ইলিশ ১ হাজার ১০০ টাকা, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রামের ১ হাজার ৭০০ টাকা ও ১ কেজি ওজনের ইলিশ ২ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোতে প্রতিকেজি শিং মাছ চাষের (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, রুই দাম বেড়ে (আকারভেদে) ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, দেশি মাগুর ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা, মৃগেল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, চাষের পাঙাস ২০০ থেকে ২৩০ টাকা, চিংড়ি ৭৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, বোয়াল ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, বড় কাতল ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, পোয়া ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কই চাষের ২২০ থেকে ২৩০ টাকা, মলা ৫০০ টাকা, বাতাসি টেংরা ১ হাজার ৩০০ টাকা, টেংরা ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি ৫০০ টাকা, পাঁচ মিশালি ২২০ টাকা, রূপচাঁদা ১ হাজার ২০০ টাকা, বড় বাইম ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, দেশি কই ১ হাজার ২০০ টাকা, শোল ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, আইড় ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, বেলে ৮০০ টাকা, কোরাল ৭০০ টাকা ও কাজলি মাছ ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এসব বাজারে গরুর মাংস কেজিপ্রতি ৬৫০ থেকে ৭৮০ টাকা, গরুর কলিজা ৭৮০ টাকা, গরুর মাথার মাংস ৪৫০ টাকা, গরুর বট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা ও খাসির মাংস কেজিপ্রতি ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারগুলোতে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা, হাঁসের ডিম ২২০ টাকা ও দেশি মুরগির ডিমের হালি ৯০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।

শুক্রবারের বাজারে অন্যান্য দিনের তুলনায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ ক্রেতারা। তাদের দাবি, বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে বাজারে ক্রেতাদের সবসময়ই এভাবে ঠকে যেতেই হবে। একইসঙ্গে বিক্রেতারাও সুযোগ নিয়ে আরও চড়াও হবে দামের ওপর।

ক্রেতারা বলছেন, শীতের সিজনেও আজকের বাজারে মাছ-মাংসসহ সবকিছুর দাম বেশি, অথচ এই দিনে যেহেতু বিক্রি বেশি, দাম তুলনামূলক কম থাকার কথা। বাজারে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, যেকারণে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। আর একবার কোনো পণ্যের দাম বাড়লে, সেটা আর কমতে চায় না।

তবে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, বেশি দামে কিনে আনায় কম দামে বিক্রির কোনো সুযোগ নেই।

মুরগি ব্যবসায়ী মো. সুজন মিয়া বলেন, শুক্রবারে মুরগির দাম হালকা বাড়তি থাকে। আমাদের কিনেই আনতে হয় বেশি দামে। দামটা বাড়ে পাইকারি বাজারে, যেকারণে খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়ে। দাম বেশি থাকলে আমাদেরই বরং ক্ষতি, বিক্রিও কমে যায়। কম দাম থাকলে মানুষ কিনতে আসে বেশি।

ব্যবসায় মন্দা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, অন্যান্য দিনে বেচাকেনার নাই বললেই চলে। শুক্রবারে কিছুটা হয়। মানুষের ইনকাম কম, খাবেই কী, পরবেই বা কী।

মাছ বিক্রেতা মোহাম্মদ শওকত মিয়া বলেন, গতকালে চেয় আজকের বাজার চড়া। কেজি প্রতি মাছের দাম ৪০/৫০ টাকা বেশি। সাধারণত প্রতি শুক্রবারেই একটু বেশি থাকে। তারপরও দাম নিয়ন্ত্রণেই আছে।