কুয়াশা কমলেও আরো বাড়বে শীত
- আপডেট সময় : ০১:২৪:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫
- / ৩৫৪ বার পড়া হয়েছে
কুয়াশার দাপট কমলেও হিমেল হাওয়া ব্যাহত হচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের উত্তরের জনপদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। শনিবার দেশের সর্বনিু তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে দিনাজপুরে ৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৬ শতাংশ এবং গত ২৪ ঘণ্টায় বাতাসের গড় গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৩ কিলোমিটার। আবহওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী ২-৩ দিন তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। সেই সাথে সিরাজগঞ্জ ও পঞ্চগড় জেলা সমূহের উপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে; তা আর কয়েক জেলায় বিস্তার লাভ করতে পারে।
উত্তরের জেলাগুলোতে শীতের দাপটে কাবু হয়ে পড়েছে জনপদ। ঘন কুয়াশার সঙ্গে বইছে হিমেল বাতাস। তিন-চার দিন ধরে সূর্যের দেখা মিলছে না। এতে ভোগান্তি আর দুর্ভোগে পড়ছেন শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষ। উত্তরের জেলাগুলোতে এই অবস্থা আরও তিন থেকে চার দিন থাকতে পারে বলে জানিয়েছে রংপুর আবহাওয়া অধিদপ্তর। আগামী সপ্তাহে তাপমাত্রার উন্নতি হলেও ফের মৃদু শৈত্যপ্রবাহের পূর্বাভাস দিয়েছে তারা।
গত পাঁচ দিন ধরে সূর্যের দেখা মিলছে না উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা দিনাজপুরে। ঘন কুয়াশায় দিনের বেশির ভাগ সময় ঢাকা থাকছে দিনাজপুরসহ উত্তরের জনপদ। রাত থেকে সকাল অবধি বৃষ্টির মতো ঝরছে কুয়াশা। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে উত্তর থেকে বয়ে আসা হিমালয়ের হিম বাতাস। কনকনে ঠান্ডায় কাবু হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের মানুষ। উষ্ণতার আশায় কেউ কেউ আগুন জ্বালিয়ে শরীর গরম করে নিচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের মৃদু শৈত্য প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ অঞ্চলের জেলায় সকাল ৬টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে- পঞ্চগড়ের তেতুলিয়া ৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি, নীলফামারির সৈয়দপুরে ১১ দশমিক ০ ডিগ্রি, রংপুরে ১১ দশমিক ৬ ডিগ্রি, নীলফামারী ডিমলায় ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এদিকে দিনাজপুরের তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি, নীলফামারির ডিমলায় ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি, ঠাকুরগাঁ ১০ দশমিক ১ ডিগ্রি, লালমনিরহাট ১১ দশমিক ৮ ডিগ্রি ও গাইবান্ধায় ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
রংপুর বিভাগের দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর পঞ্চগড়ের তেতুলিয়ায় ৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আরও তিন-চার দিন এই অঞ্চলে তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অফিস।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ‘ঘন কুয়াশা ও বাতাসের আর্দ্রতা বৃদ্ধির কারণে উত্তরের জেলাগুলোতে মধ্যরাত থেকে ঠান্ডা আর ঘন কুয়াশা বেড়েছে। এছাড়া, দিনের বেশির ভাগ সময় সূর্যের দেখা মিলছে না।’
রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মৃদু শৈত্যপ্রবাহ আর বাতাসের আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ায় উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে শীত আর ঠান্ডার প্রকোপ বেড়ে গেছে। জানুয়ারির শেষ দিকে আরও শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
মৃদ্যু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে লালমনিরহাটের উপর দিয়ে । ঘনকুয়াশা আর ঠান্ডায় কাজে বের হতে পারছেনা মানুষ। কনকনে ঠান্ডা বাতাসে তিস্তাও ধরলার চরাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষজনের দুর্ভোগ আরো চরমে। শিশু ও বয়স্করা শীতজনিত সর্র্দি, কাশি, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে।
প্রচন্ড শীত, ঘন কুয়াশা এবং শৈত্য প্রবাহের কারনে যবুথবু হয়ে পড়েছে জয়পুরহাটের সাধারন মানুষ। দিনের চেয়ে অনেকাংশে কমে যাচ্ছে রাতের তাপমাত্রা। শনিবার সকাল থেকেই ঘন কুয়াশা চাদরে ঢেকে আছে পুরো জেলা। দিনের অধিকাংশ সময় রাস্তায় যানবাহন চলছে লাইট জ্বালিয়ে। প্রচন্ড শীত আর ঘন কুয়াশার কারনে মাঠেঘাটে যেতে পারছেনা খেটে খাওয়া শ্রমজীবি মানুষ। এদিকে ঠান্ডা ও শীতের কারনে হাসপাতাল গুলোতে বাড়ছে শিশু ও বয়স্ক রোগী।
তীব্র শীতে বেশি ভোগান্তি আর দুর্ভোগে পড়ছেন শ্রমজীবী ও খেটে খাওয়া মানুষ। ঘন কুয়াশা এবং হিমেল বাতাসে জীবনযাত্রা প্রায় অচল করে দিয়েছে। বেশিরভাগ গ্রাম-চরাঞ্চলের অবস্থা তীব্র শীতের দাপটে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
দূরপাল্লার গাড়িগুলো দিনের বেলাতেও চলাচল করছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। সার্বিক পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া ও নিম্ন আয়ের মানুষ। আলু, রসুন ও বোরো ধানের বীজতলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষক।
শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলার ১৩টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বাড়ছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টসহ শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। এদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু। এ অবস্থায় শিশুদের বাসি খাবার পরিহার করা, খাবার ঢেকে রাখা এবং রাতে শিশুকে নিয়ে বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, আজ থেকে দিনের অবস্থার ক্রমান্বয়ে ধীরে ধীরে উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী দু থেকে তিন দিন রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে আরও কিছুটা হ্রাস পাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
রংপুর মহানগরীতে আসা অটোরিকশাচালক দুলাল মিয়া বলেন, গত তিন ৪ দিন ধরে রংপুরে তীব্র শীত যাত্রী ও কাজ নেই বলে চলে। রাতে বৃষ্টির মতো কুয়াশা পড়ে। সকাল থেকে সূর্যের দেখা মিলছে না। এর ফলে ঘর থেকে মানুষ কম বের হচ্ছে। এ কারণে আয় রোজগার কম পরিবারের নিয়ে অনেক কষ্টে দিন যাপন করতে হচ্ছে।
এদিকে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, কনকনে ঠান্ডায় সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ধারণ ক্ষমতার তিনগুণ বেশি রোগী ভর্তি রয়েছে। এছাড়া, গত এক সপ্তাহে ১ হাজারের মতো শিশু ও বয়স্ক রোগী ঠান্ডাজনিত রোগের চিকিৎসা নিয়েছে।
চিকিৎসা সেবা নিতে কুড়িগ্রাম থেকে আসা বজরুল ইসলাম বলেন, ‘শিশু ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম পেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। আবার রোগীর চাপ বেশি, এ কারণে অনেকে বারান্দায় বা করিডোরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আমার ৯ বছরের শিশু সন্তান রোহানকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করেছি।’
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. এস এম নুরুন্নবী বলেন, ‘শীতের প্রকোপ বেশি থাকায় ঠান্ডাজনিত রোগ নিয়ে শিশু ও বয়স্করা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। গত সপ্তাহ থেকে রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। সাধ্যমতো সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।’
এদিকে, শীত নিবারণে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ রোগীর সংখ্যা বেড়েছে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। বর্তমানে ৪৬ জন দগ্ধ রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর বেশির ভাগ আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয়েছেন। গত এক মাসে আগুন পোহাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন চারজন রোগী।
তীব্র ও প্রচণ্ড ঠান্ডায় শীতজনিত রোগী যেমন-নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, পেটব্যথা, জন্ডিস, সর্দি-জ্বরে ভুগছে শিশু ও বৃদ্ধরা। এ কারণে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে প্রতিদিন শত শত মানুষ চিকিৎসা নিতে আসছেন।
এ বিষয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আশিকুর রহমান বলেন, শীতজনিত রোগে আক্রান্ত ও খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে গিয়ে অনেকেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এছাড়া শীতের সময়টাতে এমন রোগব্যাধী বাড়ছে। আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। তবে শীতের সময় গরম কাপড় ব্যবহার করারও পরামর্শ দেন তিনি।
রংপুর জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল বলেন, জেলা ও উপজেলাগুলোতে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে। রংপুরের ৮ উপজেলায় ৫ হাজারের ওপরে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। এ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। শীতের প্রকোপ বাড়ায় এ কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে।